গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ প্রস্তাব বাতিল করলেন প্রধানমন্ত্রী

কামরান রেজা চৌধুরী
2017.04.11
ঢাকা
গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এপ্রিল ১১, ২০১৭।
নিউজরুম ফটো

বাংলাদেশ রাজবাড়ী জেলার পাংশায় প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ ‘আত্মঘাতী হবে’ তাই তা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর পরিবর্তে উজানে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে ‘রিজার্ভার’ তৈরি করে শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহারের জন্য পানি সংরক্ষণের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার তাঁর ভারত সফর নিয়ে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

“আমাদের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় গঙ্গা ব্যারেজ নামে যে ব্যারেজের সমীক্ষা ও ডিজাইন তৈরি করেছে সেটা সম্পূর্ণ ভুল। এটা আমি নাকচ করে দিয়েছি। কারণ এটা আমাদের জন্য আরও আত্মঘাতী হবে, ওই তিস্তা ব্যারেজের মতোই,” বেনারের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “পাংশায় নদীর মূল স্রোতের মধ্যে একখানা ব্যারেজ দিয়ে, তারপর পানি পানি করে কাঁদতে হবে আমাদের। এটা আমরা করতে রাজি না।”

যৌথ নদী গঙ্গার অববাহিকার পানি সংরক্ষণের জন্য ১৯৬২-৬৩ সালে প্রথমবারের মতো গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের বিষয়ে জরিপ হয়। এরপর ২০০৫ সালে ওই ব্যারেজ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য কাজ শুরু হয়। ২০১১ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নযোগ্য বলে বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা মত দেন। ভারতকে ওই প্রকল্পের সারসংক্ষেপও হস্তান্তর করা হয়।

এ ছাড়া গত বছর অক্টোবর মাসে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ভ্রমণ করে ব্যারেজের ডিজাইনসহ বিস্তারিত কারিগরি দিক নিয়ে আলোচনা করে গেছেন। কিন্তু এরপর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে আর কিছুই জানানো হয়নি।

“তারা (ভারতীয় দল) প্রকল্পটি দুই দেশের জন্যই উপকারী বলে একমত পোষণ করে গেছেন,” বেনারকে বলেন গঙ্গা ব্যারেজ সমীক্ষা প্রকল্পের প্রকল্প প্রধান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোতাহার হোসেন।

বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, সুন্দরবন এবং ভারতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কিছু নদীতে পানির প্রবাহ বাড়বে।

উল্লেখ্য, যৌথ-নদী গঙ্গার ভাটিতে বাংলাদেশ অবস্থিত। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের উজানে পশ্চিমবঙ্গের ফারাক্কা পয়েন্টে ফারাক্কা ব্যারেজ চালু করা হয়। এরপর ভাটিতে গঙ্গা নদীর পানি ঘাটতি দেখা দেয়।

সরকারি তথ্য অনুসারে, ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির পরিমাণ ছিল ৫০ হাজার ৪০০ কিউসেক। ফারাক্কা বাঁধ চালু হওয়ার পর ১৯৯৩ সালের এপ্রিলে একই পয়েন্টে পানির পরিমাণ দাঁড়ায় মাত্র নয় হাজার ৬৯৮ কিউসেক।

এবারও প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে অববাহিকাভিত্তিক যৌথ পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি জোর পায় এবং শেখ হাসিনার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয় বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “ভারতের সঙ্গে যখন গঙ্গার পানি চুক্তি করি, তখনই আমি বলেছিলাম, আমরা একটা ব্যারেজ করব, গঙ্গা ব্যারেজ। সেই ব্যারেজটা হবে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে এবং যৌথভাবে। এমনভাবে এটা তৈরি করা হবে যেন দুটি দেশের মানুষ এটা ব্যবহার করতে পারে।”

তিনি বলেন, “আমাদের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় যেটা পাংশায় করেছে, সেটা সম্পূর্ণ ভুল একটা পরিকল্পনা। ওটা কখনো বাস্তবায়ন করা ঠিক হবে না।”

এবার মমতার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি, আপনি জায়গা দেখেন, আমরাও দেখি। দুই দেশ মিলে ব্যারেজ বা ওয়াটার রিজার্ভার তৈরি করা উচিত। যেন বর্ষাকালে পানিটা ধারণ করে শুষ্ক মৌসুমে দুই দেশের মানুষই তা ব্যবহার করতে পারি।”

সেইভাবে একটা জায়গা খুঁজে সেখানে ব্যারেজ করাটাই সব থেকে যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

পাংশায় প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারেজের ফাইলে নোট লিখে ফেরত দিয়ে দিয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, “ব্যারেজ বা রিজার্ভার যাই হোক, তা ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে করতে হবে এবং খরচও যৌথভাবে হবে।”

গঙ্গা ব্যারেজ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কিছু বলতে রাজি হননি।

তবে নকশাকারীদের একজন কর্মকর্তা বেনারকে জানান, ২০২৬ সালে গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আর ব্যারেজ নির্মাণের কাজ এখন শুরু হলেও তা শেষ হতে সাত বছর লাগবে। গঙ্গা চুক্তি নতুন করে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য করা সম্ভব না হলে পুরো বিনিয়োগ ব্যর্থ হবে।

সুতরাং, গঙ্গা ব্যারেজ ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে করতে হবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।