জঙ্গি দমনে জাতীয় সন্ত্রাস বিরোধী ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত

কামরান রেজা চৌধুরী
2017.05.04
ঢাকা
উত্তরার আশকোনায় জঙ্গি হামলার পর সতর্ক পুলিশ। উত্তরার আশকোনায় জঙ্গি হামলার পর সতর্ক পুলিশ। ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬।
নিউজরুম ফটো

সারা দেশে জঙ্গি দমন ও জঙ্গি বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশ সদর দপ্তরের অধীনে নতুন একটি পরিপূর্ণ জাতীয় সন্ত্রাস বিরোধী ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

জঙ্গি দমনে তাঁর সরকারের গৃহীত ব্যবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে গত বুধবার রাতে জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা জানান।

এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারনিউজকে জানান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অধীনে পরিচালিত দেশের একমাত্র কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের জঙ্গি দমনে সফলতা ও সারা দেশে জঙ্গি ঘাঁটির বিস্তারের কথা মাথায় রেখে সরকার নতুন জাতীয় সন্ত্রাস বিরোধী ইউনিট গঠন করছে।

তবে নতুন ইউনিটটি কবে নাগাদ কাজ শুরু করবে তা নিয়ে দুজনের কেউ ধারণা দেননি।

শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদ নির্মূলের জন্য পুলিশ বাহিনীতে ডিএমপির অধীনে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট নামক পুলিশের নতুন একটি জঙ্গি দমন ইউনিট চালু আছে। জাতীয় পর্যায়ে জঙ্গি দমনে কাজ করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তরের অধীনে একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট গঠনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গি বিরোধী অপারেশনগুলো আরও ভালোভাবে সম্পন্ন করতে নতুন ইউনিটটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তবে তারা এ ইউনিটটির কাঠামো চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলতে নারাজ।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ বেনারনিউজকে বলেন, “দেখুন, বর্তমান যে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট কাজ করছে তা ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা মাথায় রেখে গঠন করা হয়েছিল। কারণ, জঙ্গিদের ঝুঁকি ঢাকায় বেশি ছিল। এই ইউনিটটি এখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমান্ডে পরিচালিত হচ্ছে।”

কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে জঙ্গি আস্তানা সারা দেশে। আজ ঢাকা, কাল চিটাগাং, পরশু কুমিল্লা, তার পরদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঘটনা ঘটছে। সারা দেশে জঙ্গি বিরোধী অপারেশন পরিচালনা করার জন্য ডিএমপিকে কাজ করতে হচ্ছে।

“সুতরাং, সারা দেশে এ ধরনের অপারেশন পরিচালনার জন্য জাতীয় পরিসরে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট জরুরি। কারণ, জঙ্গি হামলা ও জঙ্গি ঝুঁকি সহজে কমবে না,” নূর মোহাম্মদ বলেন।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, “আমাদের পুলিশ বাহিনীর সফলতার কারণে দেশের মানুষ অনেক বড় বড় জঙ্গি হামলা থেকে রেহাই পেয়েছে। তারা তামিম চৌধুরীসহ অনেক জঙ্গিদের মোকাবিলা করেছে। অনেক পুলিশ-র‌্যাব সদস্য জঙ্গি বিরোধী অপারেশনে প্রাণ দিয়েছেন। এখন পূর্ণাঙ্গ ইউনিট থাকা দরকার।”

তিনি বলেন, নতুন সন্ত্রাস বিরোধী ইউনিটে সোয়াট, বোমা ডিস্পোজাল ইউনিট ও সাইবার অপরাধ দমনে কাজ করা প্রশিক্ষিত সদস্যরাই থাকবেন।

প্রসঙ্গত বর্তমান কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটটি গত বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অধীনে চালু করা হয়।

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার পর এই ইউনিটটি ১৮টি অপারেশন পরিচালনা করেছে। অপারেশনগুলোতে ৬৩ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। পুলিশ জঙ্গি আস্তান থেকে বিপুল অস্ত্র, গোলাবারুদ, বোমা বানানোর উপকরণ উদ্ধার করেছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বেনারনিউজকে বলেন, “পুলিশ বর্তমানে যা করছে তা হলো দমন করা। কিন্তু এভাবে জঙ্গিদের শেষ করা যাবে না। শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি আমাদের ডির‍্যাডিকালাইজেশনের দিকে নজর দিতে হবে।”

তিনি বলেন, শক্তি দিয়ে কোনো মতবাদই, তা যতই ভুল হোক না কেন—ধ্বংস করা যায় না।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।