খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলা: সরকারের পক্ষে প্রচারণায় বিদেশি লবিস্ট

রনি টলডেনস
2018.02.07
ওয়াশিংটন ডিসি
রাজধানীর গুলশানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রাজধানীর গুলশানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
বেনারনিউজ

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো রাজনৈতিক নয়; তা প্রচারের জন্য মাসিক বিশ লাখ টাকার চুক্তিতে একটি বিদেশি গণসংযোগ প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করছে বাংলাদেশ সরকার।

যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রিক বিজিআর পাবলিক রিলেশনস নামের এই প্রতিষ্ঠানটির সাথে বাংলাদেশ সরকার প্রথম চুক্তিবদ্ধ হয় ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা হবে ৮ ফেব্রুয়ারি। আসন্ন এই রায়কে সামনে রেখে গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বেনারনিউজের কাছে এক ইমেইল বার্তা পাঠানো হয়।

“জিয়া (খালেদা জিয়া) বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলের চেয়ারপারসন, তবে তাঁর মামলার অভিযোগগুলো রাজনৈতিক নয়। তাঁর বিরুদ্ধে রায় সরকার থেকে নয় বরং আদালত থেকে ঘোষিত হবে, যা নির্ভর করবে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সুনির্দিষ্ট ও সত্য অভিযোগের ওপর,” ইমেইল বার্তায় বলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট জেফরি এইচ বার্নবাম।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান মামলাটি বর্তমান সরকারের আমলে নয় বরং ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়ের করা হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে খালেদার জিয়ার বিরুদ্ধে ‘প্রতিহিংসামূলক’ মামলার কারণে দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়ে নিজেদের ‘নার্ভাসনেস’ ঢাকতেই আওয়ামী লীগ জনগণের টাকায় লবিস্ট ভাড়া করে বিবৃতি প্রচার করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি বেনারকে বলেন, “সরকার ভালোভাবেই জানে যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই মামলাগুলো করা হয়েছিল। জনগণ এটাকে সমর্থন করেনি। এখন তারা এর জন্য দেশে ও দেশের বাইরে সমালোচিত হচ্ছে। ফলে তারা আওয়ামী লীগের বিবৃতি প্রচারের জন্য লবিস্ট ফার্ম ভাড়া করতে জনগণের অর্থ খরচ করছে।”

“তাঁরা কীভাবে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন ও বিরোধী দলের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর জন্য জনগণের অর্থ খরচ করে?” প্রশ্ন করেন তিনি।

তিনি বলেন “এমনকি একটি গণসংযোগ প্রতিষ্ঠান নিয়োগের ক্ষেত্রেও তাঁদের মধ্যে স্বচ্ছতা নেই।”

তবে যুক্তরাষ্ট্রে গণসংযোগ প্রতিষ্ঠান ভাড়া করার বিষয়টি অবগত নন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।

যোগাযোগ করা হলে প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যম বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবং প্রেস সেক্রেটারি ইহসানুল করিম উভয়েই এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে বেনারকে জানান।

“আমি জানি না। আমি এ বিষয়ে কিছু শুনিনি,” বেনারকে বলেন ইহসানুল করিম।

বালাদেশ সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদও এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে বেনারকে জানান।

অন্যদিকে “আমি সুনির্দিষ্টভাবে এটি স্মরণ করতে পারছি না,” বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।

তিনি বলেন, “যতদূর মনে পড়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী প্রপাগান্ডা মোকাবেলার জন্য লবিস্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিষয়ে একবার আলোচনা হয়েছিল। হতে পারে এই প্রতিষ্ঠানটিকে তখন নিয়োগ করা হয়েছিল। যদিও আমি সুনির্দিষ্টভাবে তা মনে করতে পারছি না।”

“তবে সেই প্রতিষ্ঠানটি এখনো বাংলাদেশের জন্য কাজ করছে কি না আমি জানি না,” বলেন দীপু মনি।

বেনাররের কাছে পাঠানো বিজিআর এর বক্তব্যকে সমর্থন করে দীপু মনি বলেন, “তারা যা বলছে তা সত্য। এটা সরাসরি একটি দুর্নীতি মামলা। এখানে রাজনৈতিক কিছুই নেই।”

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

কয়েকবার চেষ্টা করেও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

মাসে বিশ লাখ টাকার চুক্তি

যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস এর ওয়েবসাইটে বিজিআর পাবলিক রিলেশনস এর সাথে বাংলাদেশ সরকারের করা তিনটি চুক্তির অনুলিপি রয়েছে।

প্রকাশিত চুক্তিগুলোর তৃতীয়টিতে মেয়াদ উল্লেখ করা হয়েছে ৩১ মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে চুক্তিটি স্বাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন।

বিজিআর এর সাথে বাংলাদেশ সরকারের চলতি বছরের চুক্তি ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের ওয়েবসাইটে এখন পর্যন্ত প্রকাশিত না হলেও প্রতিষ্ঠানটি এখনো সরকারের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে তাদের ইমেইল বার্তায়।

“এই বার্তাটি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বিজিআর পাবলিক রিলেশনস থেকে প্রচারিত,” ২ নভেম্বর বেনারের কাছে পাঠানো বিজিআর এর ইমেইল বার্তার ঘোষণায় বলা হয়।

প্রকাশিত সর্বশেষ চুক্তি অনুয়ায়ী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য প্রতিমাসে ২৫ হাজার ডলার বা প্রায় বিশ লক্ষ টাকা দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। যার বার্ষিক মূল্য দাঁড়ায় তিন লক্ষ ডলার বা দুই কোটি চল্লিশ লক্ষ টাকা।

এর বাইরেও আনুষাঙ্গিক খরচ বাবত প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ২০০ ডলার করে ভাতা পেয়ে থাকে।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ঢাকা থেকে পুলক ঘটক।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।