খালেদা জিয়ার আপিল গ্রহণ, অর্থদণ্ড স্থগিত

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.02.22
ঢাকা
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের দিন ঢাকার আদালতে উপস্থিত হওয়ার আগ মুহূর্তে নিজের গাড়িতে খালেদা জিয়া। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের দিন ঢাকার আদালতে উপস্থিত হওয়ার আগ মুহূর্তে নিজের গাড়িতে খালেদা জিয়া। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
মনিরুল আলম/বেনারনিউজ

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়ার দায়ের করা আপিল গ্রহণ করেছে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এ বিষয়ে শুনানি শেষে বিচারপতি এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ জানান, জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে আগামী রোববার।

এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদনের ওপর শুনানি হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত জানায়, রোববার বেলা দুটায় জামিনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বেনারকে বলেন, “আজকে আদালত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেওয়া অর্থদণ্ড স্থগিত করেছেন। আগামী রোববার জামিনের ব্যাপারে শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানিয়েছেন।”

খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা আশা করি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তাঁর সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদা বিবেচনা করে আদালত জামিন দেবেন। তাঁর বিরুদ্ধে দেওয়া সাজা অনায্য।”

“তিনি তো আর দেশ থেকে পালিয়ে যাবেন না। তাই তাঁকে জামিন না দেওয়ার কোনো কারণ নেই,” বলেন খোকন।

পরস্পর যোগসাজশে জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশন খালেদা জিয়া, তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমান ও আরও চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে।

দশ বছর পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি ড. আখতারুজ্জামানের বিচারিক আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর ও তাঁর ছেলে তারেক রহমান, বিএনপি দলীয় সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক ও আরও তিন আসামিকে দশ বছর কারাদণ্ড দেন।

একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে দুই কোটি ১০ লাখ ৭২ হাজার টাকা করে জরিমানা করে বিচারিক আদালত।

রায়ের পরপরই খালেদা জিয়াকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেছে আপিল শুনানির জন্য আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি হাই কোর্টে পাঠাতে হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বেনারকে বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়ার ব্যাপারে তীব্র বিরোধিতা করবে।

নিম্ন আদালতের রায়ে বলা হয়, সরকারি এতিম তহবিলের টাকা এতিমদের কল্যাণে ব্যয় না করে পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়াসহ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামিরা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধ করেছেন।

১১৬৮ পৃষ্ঠার রায়ের সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার পর গত মঙ্গলবার হাইকোর্টে আপিল আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবিরা। হাইকোর্ট আবেদনটি আপিলের জন্য গৃহীত হবে কি না সে ব্যাপারে শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার সময় নির্ধারণ করে।

আপিল আবেদনে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তাঁর জামিন ও খালাস চান।

জয়নুল আবেদীন, এ জে মোহাম্মদ আলী, কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী ও অন্যান্যরা খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে আদালতে আসেন।

এ সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেক নেতা-কর্মী আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহম্মেদ।

‘খালেদা জিয়ার জামিন রাজনৈতিকভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান বেনারকে বলেন, “দেখুন খালেদা জিয়ার জামিনের ব্যাপারে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ।”

তিনি বলেন, এই জামিনের ওপর দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির অনেক কিছু নির্ভর করছে।

ড. আতাউর বলেন, জেলে যাওয়ার পর খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। দলের ভেতর যে বিভাজন ছিল সেটা এখন আর প্রকট নয়। দলের সব নেতাই এখন খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ।

তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া জামিন পেয়ে বেরিয়ে এলে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার আদর্শিক জয় হবে। অনেকেই এটাকে ক্ষমতাসীনদের জন্য আদর্শিক পরাজয় বলে প্রচার করবে। এবং আগামী নির্বাচনে বিএনপির জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে।”

আর উনি জামিন না পেলে, ক্ষমতাসীন ও তাঁর মিত্ররা সেটাকে জয় বলে প্রচার করবে, বলেন ড. আতাউর রহমান।

তিনি বলেন, তাই খালেদা জিয়ার জামিনের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।

খালেদা জিয়ার জামিনের ব্যাপারে দলীয় নেতা কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আদালত ও এর আশপাশ এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ভিড় করে।

সম্ভাব্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে মোতায়েন করা হয় বাড়তি পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের।

“আমরা চাই আমাদের নেত্রীকে জামিন দেওয়া হোক। উনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী,” বলেন কেরানীগঞ্জ থেকে আসা বিএনপি কর্মী আব্দুল বাসেত।

তাঁর পাশেই ছিলেন আওয়ামী লীগের মো. কাওসার।

“খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। তাঁর জেলে থাকা উচিত। জামিন পেলে আর এই মামলার বিচার হবে কি না সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। তাই তাঁর জামিন পাওয়া উচিত নয়,” বলেন কাওসার।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।