কারাবাসের ৩২দিন পর উচ্চ আদালতে খালেদার জামিন

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.03.12
ঢাকা
দুর্নীতি মামলায় শুনানির জন্য ঢাকার একটি আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া। দুর্নীতি মামলায় শুনানির জন্য ঢাকার একটি আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া। ৪ জানুয়ারি ২০১৮।
মনিরুল আলম/বেনারনিউজ

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় ৩২ দিন কারাবাসের পর অবশেষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দিয়েছে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত।

সোমবার দুপুরে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশ দেন।

তবে জামিন আদেশের কয়েক ঘণ্টা পরেই কুমিল্লার একটি আদালতে গাড়ি পোড়ানো ও হত্যা মামলায় খালেদাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছে পুলিশ। সে আবেদন গ্রহণ করে আগামী ২৮ মার্চ তাঁকে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছে ওই আদালত।

তবে এতে খালেদার জামিন পেতে কোনো অসুবিধা নেই বলে মনে করেন বিএনপির আইনজীবীরা। আদেশের পর থেকে তাঁর কারামুক্তির প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তারা।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বেনারকে বলেন, “কুমিল্লার আদালত যদি বিএনপি চেয়ারপারসনকে ২৮ মার্চ হাজির হতে বলেন, তাতে তাঁর জামিনে কোনো অসুবধিা হবে বলে মনে হয় না। উনি সেদিন আদালতে গিয়ে হাজিরা দেবেন।”

এর আগে খালেদার জামিন আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করে রায়ের পরেই আদালত প্রাঙ্গণে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটি মিথ্যা এবং তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পরিণতি’।”

অ্যাটর্নি জেনারেল খালেদার জামিন আদেশ স্থগিত করার জন্য দুই দিনের সময় আবেদন করলেও আদালত তা প্রত্যাখ্যান করে বলেও জানান মওদুদ আহমেদ।

মওদুদ আহমেদ জানান, নিম্ন আদালতের সাজা তুলনামূলক কম হওয়া, স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনা, বিচারিক আদালতের নথি আপিল শুনানির জন্য এখনও প্রস্তুত না হওয়া এবং বিচার প্রক্রিয়া পর্যালোচনা- মূলতঃ এই চারটি বিষয় বিবেচনায় নিয়েই উচ্চ আদালত খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করেছেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে এ মামলার রায়ের পর থেকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপিল শুনানি শুরুর আদেশ চাইলেও হাই কোর্ট জামিন মঞ্জুর করেছে চারটি যুক্তিতে।

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বেনারকে বলেন, “সরকার আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল।”

“আজ হাইকোর্টের জামিন মঞ্জুরের বিষয়টি প্রমাণ করে যে, বিচার বিভাগের কার্যক্রমের মধ্যে সরকারের হস্তক্ষেপ নেই,” বলেন আইনমন্ত্রী।

খালেদার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বেনারকে জানান, হাইকোর্টের জামিন আদেশ এখন নিম্ন আদালতে যাবে। এরপর বিচারক খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য জেল কর্তৃপক্ষকে আদেশ পাঠাবেন।

প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। এরপর থেকে তাঁকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।

একই মামলায় খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ ছেলে তারেক রহমানসহ মামলার অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতে খালেদার জামিন আবেদন ও রায়ের বিরুদ্ধে আপলি করেন তাঁর আইনজীবীরা। রোববার নিম্ন আদালতের রায়ের নথি হাইকোর্টে পৌঁছালে অবশেষে আজ জামিনের আদেশ দেন আদালত।

এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে কুয়েত থেকে পাঠানো ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার অভিযোগে ২০০৮ সালে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়ের করা এ মামলার প্রধান আসামি তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। দুদক জানায়, ছয়জন অভিযুক্ত ব্যক্তির মাধ্যমে এই তহবিলের অপব্যবহার করা হয়।

বিএনপির উত্তরাধিকারী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে রয়েছেন।

“তিনি (খালেদা জিয়া) একজন আপোষহীন নেত্রী। তিনি জনগণের অধিকার নিয়ে আপোষ করেননি। তিনি বিচার বিভাগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, আদালতে আনা অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়েছেন এবং কারাগারে যেতে হয়েছে,” বেনারকে বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান।

“তবে তিনি দলের নেতা-কর্মীদের সহিংসতার পথে যেতে অনুমতি দেননি। এখন, আদালত আইন অনুযায়ী কাজ করেছে এবং তাঁর জামিন দিয়েছে,” বলেন তিনি।

কুমিল্লার মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

কুমিল্লার আদালত পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি সাংবাদিকদের জানান, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্টলবোমা নিক্ষেপ করে আগুনে পুড়িয়ে আটজন যাত্রী নিহত হওয়ার মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আগেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত।

সোমবার গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে বিকেলে আদালতের বিচারক খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রজেকশন ওয়ারেন্ট জারি করে আগামী ২৮ মার্চ তাঁকে কুমিল্লার আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।

এর আগে কুমিল্লার আদালত চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রোল বোমা হামলা করে আটজনকে হত্যা মামলায় খালেদা জিয়াসহ ৪৭ জনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ২৪ এপ্রিলের মধ্যে তামিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

চৌদ্দগ্রাম থানায় দায়ের করা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ৭৭ জন আসামির মধ্যে ৪৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা আছে। এছাড়া ২৯ জন জামিনে এবং একজন জেল হাজতে রয়েছেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।