খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করল সর্বোচ্চ আদালত

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.03.14
ঢাকা
হাজিরা দেবার জন্য ঢাকার একটি কোর্টে উপস্থিত হন খালেদা জিয়া। হাজিরা দেবার জন্য ঢাকার একটি কোর্টে উপস্থিত হন খালেদা জিয়া। ২১ ডিসেম্বর ২০১৭।
বেনারনিউজ

খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষিতে আগামী রোববার পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন স্থগিত করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগ বুধবার এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে রোববারের মধ্যে রাষ্ট্র ও দুদককে লিভ-টু-আপিল দায়ের করতে বলেছে আপিল বিভাগ।

এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লিভ-টু-আপিল দায়ের করা হবে বলে বুধবার সাংবাদিকদের বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

আগামী রোববার জামিনকে চ্যালেঞ্জ করা লিভ-টু-আপিলের শুনানি হবে জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শশাঙ্ক সরকার বেনারকে বলেন, “সরকার রোববারের মধ্যেই আপিল বিভাগে লিভ-টু-আপিল দায়ের করবে।”

এই আদেশের ফলে দুদিন আগে উচ্চ আদালতে জামিন পেলেও খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেলে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

এদিকে কুমিল্লার একটি আদালত বাস পোড়ানোর মামলায় খালেদা জিয়াকে আগামী ২৮ মার্চ কুমিল্লায় হাজির করতে বলেছে। এর আগে কুমিল্লার আদালত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করলে ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বেনারকে বলেন, “আদালত আমাদের কথা শোনেননি। একপক্ষকে শুনে জামিন আদেশ স্থগিত করা নজিরবিহীন। আমরা এই আদেশের ফলে অত্যন্ত ব্যথিত।”

“এধরনের ‘একতরফা’ আদেশ জনগণের মাঝে বিচার বিভাগ সম্পর্কে বিরূপ ধারণা দেবে,” তাঁর অভিযোগ।

তবে জামিন স্থগিত করা প্রসঙ্গে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শশাঙ্ক সরকার বেনারকে বলেন, “আদালতের কাছে হাইকোর্টের জামিন আদেশের সার্টিফাইড কপি ‍উপস্থাপন করা হয়নি। কাগজ ছাড়া অ্যাপিলেট ডিভিশন কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবে?”

“উনাদের (খালেদার আইনজীবী) অভিযোগ, আদালত এক তরফা শুনে জামিন স্থগিত করেছেন—একথা ঠিক নয়। আদালত উনাদের কথা রোববার শুনবেন বলে জানিয়েছেন,” বলেন তিনি।

শশাঙ্ক সরকার বলেন, “উনার (খালেদা জিয়ার) বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা চলমান। যেসকল মামলায় উনি জামিনে নেই সেই সব মামলায় উনাকে অ্যারেস্ট দেখানো হতে পারে। তাই, তাঁর মুক্তি পাওয়া বেশ জটিল একটি ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে।”

আদালত রেকর্ড অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন আদালতে মোট ৩৪টি মামলা চলমান।

হতাশ বিএনপি

জামিন স্থগিত করার পর দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আদালতের বিভিন্ন আদেশে সরকারের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ফখরুল বলেন, “এই আদেশে আমরা হতাশ। সরকার একের পর এক সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এখন সরকার বিচার বিভাগকে ধ্বংস করতে চায়।”

খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে আগামী নির্বাচন থেকে দূরে রাখা এসব কিছুর উদ্দেশ্য বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয় বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত। রায়ের পর থেকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া এই সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার তাঁকে চার মাসের জামিন দেন।

একই মামলায় খালেদা জিয়ার একমাত্র জীবিত ছেলে তারেক রহমানসহ মামলার অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে আড়াই লাখ ডলার আত্মসাৎ করার দায়ে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মায়ের অনুপস্থিতিতে বিএনপির প্রধান খালেদা পুত্র তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে রয়েছেন।

এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে কুয়েত থেকে পাওয়া ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার অভিযোগে ২০০৮ সালে সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন।

কুমিল্লার আদালতে হাজিরা বহাল

এদিকে কুমিল্লার আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন ও আদালতে হাজিরা পরোয়ানা (প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট) জারির নির্দেশ বাতিল চেয়ে আবেদন করা হলেও আগামী ২৮ মার্চ হাজিরার দিন ধার্য রেখেছে আদালত। তাঁর উপস্থিতিতেই সেদিন এসব আবেদনের শুনানি হবে।

গত মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার কুমিল্লার আমলি আদালত-৫ এর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মুস্তাইন বিল্লাহ আগের দেওয়া আদেশ বহাল রাখেন। বেনারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন কুমিল্লার কোর্ট পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি।

“মঙ্গলবার কুমিল্লার আদালতে দায়ের করা মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন ও হাজিরা পরোয়ানার নির্দেশ বাতিল চেয়ে আদালতে আমরা আবেদন করি। তবে বুধবার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জামিন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে ২৮ মার্চ খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে শুনানির দিন বহাল রেখেছেন,” জানান বিএনপির চেয়ারপারসনের আইনজীবী মো. কাইমুল হক।

গত ১২ মার্চ হাজিরা পরোয়ানা জারির বিষয়টি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের মাধ্যমে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান কোর্ট পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি।

এর আগে গত সোমবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় পুলিশের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন গ্রহণ করে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করেছেন কুমিল্লার আদালত।

এ প্রসঙ্গে সুব্রত ব্যানার্জি জানান, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্টলবোমা নিক্ষেপ করে আগুনে পুড়িয়ে আটজন যাত্রী নিহত হওয়ার মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আগেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত।

ওই মামলায় খালেদা জিয়াসহ ৪৭ জনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ২৪ এপ্রিলের মধ্যে তামিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন কুমিল্লার আদালত। ওই মামলায় খালেদা জিয়াসহ ৭৭ জন আসামির মধ্যে ৪৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা আছে। এছাড়া ২৯ জন জামিনে এবং একজন জেল হাজতে রয়েছেন।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন জেসমিন পাপড়ি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।