আওয়ামী লীগে নতুন ইসলামি ফ্রন্ট গঠনের উদ্যোগ

কামরান রেজা চৌধুরী
2017.06.01
ঢাকা
আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় বক্তৃতা করেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় বক্তৃতা করেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মে ২০, ২০১৭।
ফোকাসা বাংলা

আগামী নির্বাচনে ভোটারদের কাছে ‘আওয়ামী লীগ ইসলাম বিরোধী নয়’ এই বার্তা দেবার উদ্দেশ্যে দলের নতুন একটি ইসলামি ফ্রন্ট গঠনের পাশাপাশি বিতর্কিত ও স্বঘোষিত সহযোগী সংগঠন ওলামা লীগের কার্যক্রম বন্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

“বিএনপি-জামায়াত বিভিন্ন সময় অপপ্রচার চালিয়েছে যে, আওয়ামী লীগ ইসলাম বিরোধী। নতুন সংগঠনটি যদি জনগণের মধ্যে আওয়ামী লীগ যে ইসলাম বিরোধী নয়, সেই বার্তা পৌঁছে দিতে পারে তাহলে তা দল এবং আগামী নির্বাচনের জন্য ভালো হবে,” বেনারকে বলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি আরও বলেন, “আমাদের নেতারা সব সময় বলে আসছেন যে ওলামা লীগ আওয়ামী লীগের সহযোগী কোনো সংগঠন নয়। তাই এর কোনো কর্মকাণ্ডের দায়-দায়িত্ব আওয়ামী লীগ নেবে না।”

তবে দলের ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী নেতারা মনে করেন, নতুন ইসলামী সহযোগী সংগঠন গঠনের প্রয়োজন নেই। কারণ, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইসলামের কোনো বিরোধ নেই।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে বেনারকে বলেন, “আমি ইসলামী ফ্রন্ট গঠনের প্রস্তাব সমর্থন করি না। এই ধর্মীয় সংগঠন কেন দরকার?”

তাঁর প্রশ্ন—“আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইসলামের কোনো বিরোধ আছে?”

গত ২২ মে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আওয়ামী লীগের একটি ইসলামী সহযোগী সংগঠন গঠনের প্রস্তাব করেন। উপস্থিত অনেক নেতাই তাঁকে সমর্থন করেন।

“শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সভায় ওলামা লীগ বাতিল করে একটি নতুন ইসলামী ফ্রন্ট গঠনের প্রস্তাব করেন। আমাদের অনেক নেতাই ধারণাটি সমর্থন করেন,” বেনারকে বলেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগসহ কয়েকটি সংগঠন। তবে আওয়ামী লীগের স্বঘোষিত সহযোগী সংগঠন ওলামা লীগ এর একাধিক কমিটি রয়েছে এবং এর নেতা- কর্মীদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আওয়ামী লীগ বিব্রত।

সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মভিত্তিক ইসলামী জোট হেফাজত-ই-ইসলামীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমঝোতার বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, নতুন সহযোগী সংগঠন গড়া হলে আগামী নির্বাচনে বিরোধী দল বিএনপি-জামায়াতের ‘আওয়ামী লীগ ইসলাম বিরোধী’—এমন অপপ্রচার মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

“আওয়ামী লীগ গত দুইটি নির্বাচন বাম ঘরানার দলগুলোকে নিয়ে করেছে। এর মাধ্যমে অনেকেই আওয়ামী লীগকে ইসলাম বিরোধী বলে মনে করেছে। বিরোধী দল বিএনপি-জামায়াত এবং হেফাজত-ই-ইসলাম আওয়ামী লীগকে ইসলাম-বিরোধী বলে প্রচার চালিয়েছে,” বেনারকে বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান।

দেশের প্রায় ৮৮ ভাগ মানুষ মুসলমান; তাদের কথা মাথায় রেখেই আওয়ামী লীগকে ভোটের মাঠে নামতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“তাই আগামী নির্বাচনে জিততে হলে আওয়ামী লীগকে দেখাতে হবে যে তারা ইসলাম বিরোধী নয়; তাদের সঙ্গেও আলেম-ওলামারা আছেন। এ জন্য তাদের একটি ইসলামী সহযোগী সংগঠন প্রয়োজন। ভোটের কথা মাথায় রেখেই আওয়ামী লীগ হেফাজতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে,” বলেন ড. রহমান।

তবে ইসলামি সহযোগী সংগঠন গঠনের উদ্যোগ আরো চিন্তা ভাবনা করে নেওয়া উচিত বলে মনে করেন দলের অনেক নেতা।

“আমি সেই সভায় উপস্থিত ছিলাম। আমার মতে, নতুন ইসলামী সহযোগী সংগঠন গঠনের ব্যাপারে আমাদের আরও পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা,” বেনারকে বলেন দলের সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য টিপু মুন্সী।

তিনি বলেন, “যারা নতুন সংগঠনটির নেতৃত্বে থাকবেন তারা কতটুকু গ্রহণযোগ্য, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কিনা, তারা কতটুকু অবদান রাখতে পারবেন, ইত্যাদি বিষয়গুলোকে মাথায় রাখতে হবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।