সামরিক হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে খালেদার অস্বীকৃতি

জেসমিন পাপড়ি
2018.06.18
ঢাকা
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। ৭ এপ্রিল ২০১৮।
AFP

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মতোই এবার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার পারিবারিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেনারকে বলেন, “ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা নিতে ইচ্ছুক নন; দেশে তাঁর উন্নত মানের চিকিৎসা ইউনাইটেড হাসপাতালে সম্ভব বলে আমরা মনে করি।”

“কারণ খালেদা জিয়া আগে ইউনাইটেড থেকে নিয়মিত চিকিৎসা নিতেন। রোগীর যে ডাক্তারের প্রতি আস্থা থাকে সেখানেই চিকিৎসা করতে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। এ ছাড়া জেলকোডের কোথাও বলা নেই যে. বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া যাবে না,” বলেন মির্জা ফখরুল।

এ ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসনের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, বেআইনিভাবে তাঁকে নিঃসঙ্গ অবস্থায় রাখা হয়েছে; যা জেলকোডেরও লঙ্ঘণ।

বিদেশ যাওয়ার কৌশল হিসেবে দেখছে সরকার

এদিকে সামরিক পরিবারের সদস্য হয়েও খালেদা জিয়ার সিএমএইচে চিকিৎসা না নেওয়ার সমালোচনা করেছেন সরকারি দলের নেতারা। তাঁর চিকিৎসা ইউনাইটেড হাসপাতালে করাতে বিএনপির দাবির পেছনে খালেদাকে বিদেশে নেওয়ার কৌশল হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বেনারকে বলেন, “খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ নন। আমি দেশের সেরা দুটি হাসপাতাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের মধ্যে কোনটিতে তিনি চিকিৎসা নিতে চান তা জানতে কারা মহাপরিদর্শককে তাঁর কাছে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি এর কোনটিতেই চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের কথা বলেছেন।”

“কিন্তু জেলকাড অনুযায়ী সরকারের পক্ষে তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার কোনো ‍সুযোগ নেই। তাঁর উদ্দেশ্য আমাদের কাছে স্পষ্ট। ইউনাইটেডের ডাক্তারদের রেফারেন্স ব্যবহার করে তিনি বিদেশ চলে যেতে চান। বিএসএমএমইউ বা সিএমএইচে তাঁর উন্নত চিকিৎসা সম্ভব।”

এদিকে গত বৃহস্পতিবার সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “সেনা পরিবারের সদস্য হয়ে কেন সিএমএইচে আস্থা নেই? এই সুযোগটি বিএনপি না নিয়ে রাজনৈতিক ইস্যু খুঁজছে। সিএমএইচ আর্মি পরিবারের সদস্যদের জন্য, অথচ তিনি সিএমএইচকে বিশ্বাস করে না, এটা কেমন কথা।”

আন্দোলনের সব ইস্যুতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে ইস্যু করছে এবং এ নিয়ে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে বিভ্রান্তি তৈরি করতে চাইছে বলে মনে করেন কাদের।

খালেদার অসুস্থতা নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন দেখা করেছেন তাঁর স্বজনেরা। গত শনিবার পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রায় দেড় ঘণ্টা ২০ জন স্বজনের সঙ্গে সময় কাটান তিনি।

তবে স্বজনেরা দেখা পেলেও ঈদের দিন খালেদার সাক্ষাৎ পাননি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এদিন তাঁরা কারাগারের উত্তর পাশের সড়ক হয়ে কারাফটকের দিকে যেতে চাইলে পুলিশি বাধায় পরে ফিরে যান।

খালেদার স্বজনদের বরাত দিয়ে বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেন বেনারকে বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি বিএনপি চেয়ারপারসন গুরুতর অসুস্থ। তিনি কারও সহায়তা ছাড়া হাঁটতে পারছেন না। তার শরীরে অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে।”

এই নেতার দাবি, “সরকার খালেদা জিয়ার শরীরে প্রকৃত অবস্থা গোপন করছে।”

“আমরা বারবার ইউনাইটেড হাসপাতালে ম্যাডামের (খালেদা) চিকিৎসার অনুমতি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আসছি। কারণ, তিনি সেখানেই চিকিৎসা নিতেন। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। যদি তাঁর কোনো ক্ষতি হয়, সে দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে,” বলেন মোশাররফ হোসেন।

তবে বিএনপির এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেনারকে বলেন, “খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা যথেষ্ট ভলো। তাঁর রক্তচাপ ও সুগার লেভেল স্বাভাবিক।”

এ ছাড়া খালেদা কারও সহায়তা ছাড়া তিনি হাঁটতে পারছেন না এমন বক্তব্যকেও মিথ্যা বলে দাবি করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এদিকে চার মাসের বেশি কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা নিয়ে সরকার ‘দুরভিসন্ধিমূলক নীলনকশা’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “দেশনেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে আওয়ামী সরকারের পানি ঘোলা করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাঁকে বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে নিঃশেষ করে দেওয়া।”

ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার কারণ জানিয়ে রিজভী বলেন, “খালেদা জিয়ার হাঁটুতে যে মেটালিক প্লেট আছে সেটির এক্স-রে এবং উন্নত মানের এমআরআই ও সিটি স্ক্যানের ব্যবস্থা ইউনাইটেড হাসপাতালে আছে। এ কারণে তিনি সেখানে চিকিৎসা করাতে চান। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরাও সে পরামর্শই দিয়েছেন।”

তবে চিকিৎসার মতো বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি না করার পরামর্শ দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

“চিকিৎসার মতো মানবিক বিষয় নিয়ে কেন এত বাড়াবাড়ি তা আমার বোধগম্য নয়। আমি আশা করি সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে। বিশেষত সরকার সহমর্মিতা প্রদর্শন করবে,” বেনারকে বলেন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক এর সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।

“অতীতে তো প্যারোলো মুক্তি দিয়ে নেতাদের বিদেশ পাঠানো হয়েছে। শুধু তাই না, আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বন্দি অবস্থায় স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন,” যোগ করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।