বিএনপির অনশন কর্মসূচি: খালেদা ছাড়া নির্বাচন হবে না

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.07.09
ঢাকা
180609_Khaleda_Zia_1000.JPG ঢাকার মহানগর নাট্যমঞ্চ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত গণ অনশন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ৯ জুলাই ২০১৮।
বেনারনিউজ

দুর্নীতির দায়ে কারাগারে আটক বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না— এই ঘোষণা দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার বলেছেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও সেনা মোতায়েন ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপির আরেক সিনিয়র নেতা মওদুদ আহমদ বলেছেন, আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব হবে না। আন্দোলনের মাধ্যমেই দলীয় প্রধানকে মুক্ত করতে হবে।

সোমবার ঢাকার মহানগর নাট্যমঞ্চ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত গণ অনশন কর্মসূচিতে নেতারা এসব কথা বলেন। ঢাকায় পুলিশি বাধা ছাড়াই সকাল নয়টায় শুরু হয়ে সাত ঘণ্টার গণ অনশন কর্মসূচি শেষ হয় বিকেল চারটায়।

রাজধানী ছাড়াও বিভিন্ন জেলা শহরেও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। অন্তত পাঁচটি জেলায় পুলিশ কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার অধীনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে অটল থেকে নির্বাচন প্রতিরোধের ডাক দেয় বিএনপি। সেই প্রতিরোধ সহিসংতায় রূপ নেয়।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সেই আন্দোলন দমন করে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দল ছাড়াই নির্বাচন আয়োজন করে সরকার গঠন করে।

অনশনের শেষের দিকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, “অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এই দাবি আবার করছি যে, এখানে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনরায় গঠন করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এরপর নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে এ দেশে নির্বাচন হবে, অন্যথায় নির্বাচন হবে না।”

বিএনপি সহাসচিব বলেন, “বেগম খালেদা জিয়াকে আজকে সুচিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না, তাঁর ন্যূনতম যে প্রাপ্য, সেই প্রাপ্যটুকু দেওয়া হচ্ছে না। এই সরকার তাঁকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। উদ্দেশ্য একটাই, বিএনপিকে নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা।”

বেগম জিয়ার চিকিৎসা না দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “এটা তাঁদের রাজনৈতিক বক্তব্য। তাঁরা বলেছিলেন, বেগম জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া না হলে তাঁর অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। তিনি তো সুস্থ আছেন। তাঁর তো কিছু হয়নি।”

অনশন কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “সরকার একটাই ষড়যন্ত্র করছে। সেটা হচ্ছে দেশনেত্রীকে ছাড়া, বিএনপিকে ছাড়া, ২০ দলকে ছাড়া তাঁরা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির প্রহসন আবার পুনরাবৃত্তি করতে চায়।”

“আমরা বলতে চাই, ২০১৪ সালের সেই ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের জনগণ আরেকবার বাস্তবায়ন হতে দেবে না। তাই রাস্তায় আন্দোলন করেই গণতন্ত্রের মাতাকে মুক্ত করতে হবে, মুক্ত দেশনেত্রীকে নিয়েই আমরা নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করে নির্বাচনে যাব।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, “নিম্ন আদালত সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে যার জন্য বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “যদি আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না হয়, তার একমাত্র বিকল্প হল রাজপথ। এবার প্রস্তুতি নেন, কর্মসূচি দেওয়া হবে, সেই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।”

মওদুদ আহমদ বলেন, “খালেদা জিয়া হাইকোর্টের জামিন পাওয়ার পর নিম্ন আদালতের একজন ম্যাজিস্ট্রেট সরকারের নির্দেশে জামিন স্থগিত করছে। এতে প্রমাণিত হয় দেশে কোনো স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা নেই।”

সোমবার সেতু ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে বেগম জিয়াকে মুক্ত করার অন্য কোনো পথ আমাদের জানা নেই। এখন বিএনপি বলছে তারা আন্দোলন করে তাকে মুক্ত করবে। দেখা যাক।”

খালেদার আপিল শুনানি ১২ জুলাই

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার সাজার বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা পুনর্বিবেচনা আবেদনের আপিল নিষ্পত্তি নিয়ে ১২ জুলাই আদেশের দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।

ওই আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ আদেশের ওই দিন ধার্য করেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।