নভেম্বরে বাংলাদেশ আসছেন পোপ ফ্র্যান্সিস
2017.08.03
ঢাকা

বিশ্বের ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শীর্ষ ধর্মগুরু পোপ ফ্র্যান্সিস নভেম্বরে বাংলাদেশে সফরে আসবেন বলে নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। যদিও নিরাপত্তাজনিত কারণে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সফরের তারিখ ঘোষণা হয়নি।
“পোপ নভেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশে আসবেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে আমরা এখন তাঁর সফরের সুনির্দিষ্ট তারিখ প্রকাশ করছি না। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে পোপ বাংলাদেশে আসছেন,” বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইউরোপ ডেস্কের মহাপরিচালক মোহাম্মদ খোরশেদ এ. খাস্তগীর।
বছরে শেষ দিকে পোপের বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি এর আগে বেনারকে জানিয়েছিলেন ঢাকার আর্চ বিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ভ্যাটিকানের প্রেস অফিস থেকে পোপের বাংলাদেশ সফর বিষয়ে পরিকল্পনার কথা নিশ্চিত করা হলেও তারিখ নির্ধারিত হয়নি বলে গতমাসে বেনারকে জানানো হয়।
“তাঁর (পোপের) সফরের সম্ভাব্য তারিখ ৩০ নভেম্বর। তিনি ডিসেম্বরের ২ তারিখের দিকে ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে,” বেনারকে বলেন বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও।
ভ্যাটিকান প্রধান এবং শীর্ষ খ্রিস্ট ধর্মগুরু পদে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তির এটা বাংলাদেশে দ্বিতীয় আগমন। এর আগে ১৯৮৬ সালে নভেম্বর পোপ দ্বিতীয় জন পল বাংলাদেশে এসেছিলেন।
বাংলাদেশে পোপের কর্মসূচি
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে পোপের সফরের যাবতীয় নিরাপত্তা ও অন্যান্য আয়োজন নিশ্চিত করা হয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন মহাপরিচালক মোহাম্মদ খোরশেদ এ. খাস্তগীর।
“ভ্যাটিকানের কর্মকর্তারা এ নিয়ে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একযোগে কাজ করছেন,” নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে বেনারকে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।
এদিকে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে সফরের প্রস্তুতি সংক্রান্ত বিষয় পরিদর্শনের জন্য ভ্যাটিকানের আরেকটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করবে বলেও জানান নির্মল রোজারিও।
খসড়া ভ্রমণসূচি অনুযায়ী সফরকালে পোপ রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়। এছাড়া সাভারে জাতীয় স্মৃতি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আর্মি স্টেডিয়ামে খ্রিস্ট সম্প্রদায়ের গণ-প্রার্থনা সভায় যোগদানও তাঁর খসড়া কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
“আমরা পোপের সফরের বিস্তারিত কর্মসূচি তৈরি করছি। ঢাকার ভ্যাটিকান মিশনের একটি প্রতিনিধিদল সফরের বিভিন্ন প্রস্তুতি বিষয়ে আলোচনা করতে আজ (বৃহস্পতিবার) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক করেছেন,” বেনারকে বলেন খাস্তগীর।
পোপের আগমন বার্তায় উচ্ছ্বাস
পোপের বাংলাদেশ আগমন বার্তায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন দেশের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী মানুষ। নিজেদের ধর্মগুরুকে কাছে থেকে দেখতে পাওয়া এবং তাঁর সঙ্গে প্রার্থনায় যোগ দিতে পাবেন এটা জেনে তারা আনন্দে উদ্বেলিত।
“পোপের আগমন আমাদের জন্য সুসংবাদ। এটা খ্রিস্টান সম্প্রদায় এবং জাতি ধর্ম নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল মানুষকে উজ্জীবিত করবে,” বেনারকে বলেন নির্মল রোজারিও।
“এটি একটি ঐতিহাসিক সফর। যদিও আমি এখনও নিশ্চিত না যে জীবনে আমি পোপকে নিজের চোখে দেখতে পারব।” বেনারকে বলেন ঢাকার মনিপুরিপাড়ার বাসিন্দা দিলীপ রোজারিও।
“শুধু খ্রিস্টান নয়, হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে গোটা বাঙালি জাতি পোপকে সগৌরবে স্বাগত জানাবে। তার বাংলাদেশে আগমন উদারনৈতিক বাতাবরণ ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার পরিবেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে,” বেনারকে বলেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত।
পোপের সম্ভাব্য আগমন সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বেনারকে বলেছেন, “আমরা ওনার মতো মহান মানুষকে বাংলাদেশে স্বাগত জানাই। বাংলাদেশের মানুষ অতিথিপরায়ণ। এ দেশের মুসলমান সম্প্রদায় তার আগমনে আনন্দিত হবে।”
তিনি বলেন, “পোপ ফ্র্যান্সিস এর আগে বিশ্বের মুসলমান সম্প্রদায়, ফিলিস্তিন এবং আরব দেশগুলো সম্পর্কে যে সব মন্তব্য করেছেন তাতে তার বড় মনের পরিচয় পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সময়ে তার দেওয়া বক্তব্যে আমরা অভিভূত। বাংলাদেশে তাঁকে বরণ করার জন্য আমরা আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছি।”