চট্টগ্রামে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ: আবারও প্রাণহানি
2017.02.02
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দু’পক্ষের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত ও ২০জন আহত হয়েছেন। পরে অবশ্য বিষয়টি আর এগোতে দেওয়া হয়নি।
গত বুধবার সংঘর্ষের পরে ওই দিনই অনুষ্ঠিত এক সভায় ভূমির মালিক, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ ও প্রকল্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নৌবাহিনীর মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা হয়।
সমঝোতার পর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাধা দূর হওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ পরিবেশের ক্ষতি না করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করার আশ্বাস দিয়েছেন।
গত বছরের ৪ এপ্রিল ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের পক্ষ নিয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন গ্রামবাসীদের ওপর গুলি চালায়। এতে মারা যায় ৪ নিরীহ গ্রামবাসী। আহত হয় অন্তত অর্ধশত নারী পুরুষ।
বাগেরহাটের রামপালে সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে পরিবেশবাদীদের লাগাতার আন্দোলন চলছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রামে এই সংঘর্ষ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার লিমিটেড ও চীনের দুটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নে বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণকাজ চলছে। প্রায় ২৫০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই কেন্দ্রটিতে ২০১৯ সালের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা। এর উৎপাদনক্ষমতা হবে প্রায় ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ বুধবার প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত এলাকায় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এ সভা ডাকা হয়।
ওই সভাকে কেন্দ্র করে নেওয়া ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যেই প্রকল্প কার্যালয়ের বাইরে অনুষ্ঠিত জনসভায় বিবদমান দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় ২০ জন আহত হয়। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরে রাত ৯টার দিকে মারা যান মোহাম্মদ আলী (৩৫)।
পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়ে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বেনারকে বলেন, “বুধবার সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত হন। এরপর এলাকায় কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”
“আলমগীর সিএনজি চালক ছিলেন। তিনি কারো পক্ষে নয়, বরং স্বেচ্ছায় ওই সভায় যোগ দিয়েছিলেন,” ঘটনার পর স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান ওই সংঘর্ষে আহত জামাল হোসেন। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
উন্নয়ন ও ক্ষতিপূরণের আশ্বাস
এদিকে বুধবার দুপুরেই বিদ্যুৎ নির্মাণ প্রকল্প কার্যালয়ে বৈঠক করেন এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও নৌবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ও প্রকল্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রধান সমন্বয়কারী। এ সময় গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফ উল্লাহ ও সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে একসঙ্গে প্রকল্প কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত জনসভায় সমঝোতার বিষয়টি ঘোষণা দেন তাঁরা।
এরপর বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা গণ্ডামারার ‘বসতভিটা ও গোরস্থান রক্ষা সংগ্রাম কমিটির’ সমন্বয়কারী মোহাম্মদ লেয়াকত আলী এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিতে স্থানীয় লোকজনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ তাদের ১২ দফা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
ওই সভায় এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ লাবু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পিছিয়ে পড়া এলাকাটিতে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করার আশ্বাস দেন।
পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টি সর্বোচ্চ বিবেচনায় নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ বাঁশখালীতে করা হবে না।”
নৌবাহিনীর গোয়েন্দা ইউনিটের পরিচালক কমোডর এম সোহায়েল ওই সভায় স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, “এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে উন্নয়ন হবে। কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। যাঁরা জমি দিয়েছেন তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন।”