আটদিন পর আবার রাস্তায় শিক্ষার্থীরা, গ্রেপ্তার-সংঘর্ষ

বেনারনিউজ স্টাফ
2024.07.29
আটদিন পর আবার রাস্তায় শিক্ষার্থীরা, গ্রেপ্তার-সংঘর্ষ ঢাকার ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সোমবার দুপুরে কোটা আন্দোলকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের আটক করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ২৯ জুলাই ২০২৪।
[বেনারনিউজ]।

সোমবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আবারো রাস্তায় নেমেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। পূর্ব ঘোষিত ৯ দফা দাবি বাস্তবায়ন এবং গোয়েন্দা কার্যালয়ে আটক ছয় সংগঠকের কর্মসূচী প্রত্যাহারের ঘোষণার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবার ডাক দিয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ঢাকা মহানগরীসহ দেশের কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ মিছিলে নেমে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন।  এ সময় কয়েক ডজন শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ এবং আহতও হয়েছেন বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী।

সারা দেশে সেনা মোতায়েন ও কারফিউ জারির পরদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সর্বশেষ আন্দোলন হয়েছিল।

চট্টগ্রামে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে অন্তত ১৬ জনকে আটক করেছে।

এই পরিস্থিতিতে সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

ঢাকার ইসিবি চত্বরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ অন্তত ২০জন বিক্ষোভকারীকে আটক করে। একইভাবে মিরপুর দশ নম্বর এলাকায় অন্তত ১০জন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (মিরপুর জোন) উপ-কমিশনার জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের কিছু বলতে রাজি হননি।

এদিকে সমবেত হওয়ার চেষ্টা করলে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে ধানমন্ডির সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা থেকে অন্তত ১৬ জন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, ১০ জন আটকের তথ্য।

এছাড়াও পল্টন এলাকা থেকে সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ।

ডিএমপি মতিঝিল বিভাগের ডিসি হায়াতুল ইসলাম খান তাৎক্ষণিকভাবে আটকের সংখ্যা জানাতে পারেননি।

এদিকে রাতে এক বিবৃতিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো: মাহিন সরকার বলেছেন, “চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশজুড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে কেন্দ্র করে নির্বিচারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে শত শত শিক্ষার্থীর মৃত্যু ও হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়ে যখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে তখনও শিক্ষার্থীদের  দাবি মেনে না নিয়ে মধ্য রাতে বাসা-বাড়িতে রেইড ব্লকের মাধ্যমে নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে রিমান্ডের নামে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতন চালানো হচ্ছে।”

সকলেই একক বা ঐক্যবদ্ধভাবে লাল কাপড় মুখে ও চোখে বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে প্রচার কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানান তিনি।

ctg10.jpg
কোটা আন্দোলনকারীদের ‘গুম, খুন ও মিথ্যা মামলায় ' জড়ানো হয়েছে দাবি করে চট্টগ্রামে নগরের চেরাগী মোড় এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারসেল ব্যবহার করে। জুলাই ২৯, ২০২৪  । ছবি: বেনারনিউজ

জঙ্গিদের দায়ী করলেন প্রধানমন্ত্রী

সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো জঙ্গিদের কাজ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার বিকেলে গণভবনে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে ওই শিবির, ছাত্র দল, বিএনপি-জামায়াত এরাই কিন্তু এবং জঙ্গিরা। এই জঙ্গিরাই কিন্তু আজকে আমাদের  ওপর থাবা দিয়েছে।’

তিনি বলেন,“বাংলাদেশে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, আসলে এটা কোন রাজনৈতিক কিছু না। এটা সম্পূর্ণ জঙ্গিবাদী কাজ।”

বৈঠক শেষে গণভবন থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগের সাধরণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ও ১৪ দলের নেতারা জামায়াত ও শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে একমত হয়েছেন।

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য।”

গণতদন্ত কমিশন গঠন

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে মৃত্যু, গুলিবর্ষণ, গ্রেপ্তারসহ নির্যাতনের নানা ঘটনার সত্য উদ্‌ঘাটনে ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন’গঠন করা হয়েছে।

সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ‘গণহত্যার বিচার চাই; গায়েবি মামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন বন্ধ করো’ শীর্ষক আইনজীবীদের এক মানববন্ধন থেকে এই কমিশন গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বলা হয়েছে, এই কমিশনের যুগ্ম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. আবদুল মতিন ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। কমিশনের সদস্যসচিব হিসেবে থাকবেন অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান ও গবেষক মাহা মির্জা।

জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের সদস্যদের মধ্যে আরও আছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, আইনজীবী অনীক আর হক, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান ও আশরাফ কায়সার।

নির্যাতনের অভিযোগ বিএনপির, আওয়ামী লীগের নাকচ

সোমবার এক বিবৃতিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সরকারের ক্ষমতার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

“জনদাবির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সব দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত,” বলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কারণে দেশব্যাপী সরকারের নির্মম ও নির্দয় অত্যাচারের তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্নভাবে যেসব তথ্য আসছে, সেগুলো রীতিমতো রোমহর্ষক ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

অপরদিকে এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার বা নির্যাতন করেনি।

“যারা সন্ত্রাস ও সহিংসতায় সরাসরি জড়িত ছিল শুধু তাদের সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।  অথচ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উসকানি দেওয়া হচ্ছে,” বলেন তিনি।

ডিবি কার্যালয়ে খাওয়ার ছবি প্রকাশকে ‌’মশকরাবললেন হাইকোর্ট

রোববার রাতে ডিবি কার্যালয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে খাবার খাইয়ে সেই ছবি ডিবি প্রধান হারুন তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করার ঘটনাকে জাতির সঙ্গে মশকরা বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

সোমবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত এমন কিছু বলেছে কিনা জানি না।”

মৃত্যুর তথ্য হালনাগাদ, শোক ঘোষণা

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় এ পর্যন্ত ১৫০ জন নিহত হয়েছেন বলে মন্ত্রিসভায় তথ্য দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

রোববার তিনি মৃত্যুর সংখ্যা ১৪৭ বলে জানিয়েছিলেন।

সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন “রোববার (২৮ জুলাই) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ১৪৭ জন নিহত হওয়ার কথা বলেছিলেন।  আজ সেটা বেড়ে ১৫০ জন হয়েছে বলে মন্ত্রিসভায় তিনি জানিয়েছেন।”

তিনি জানান, কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে মঙ্গলবার একদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

যদিও চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোববার দিবাগত রাতে আরেকজনের মৃত্যুর পর বিভিন্ন হাসপাতাল ও পুলিশের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই ছাত্র আন্দোলন ঘিরে মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ২১৩ জনে।

এদিকে, দেশজুড়ে ব্লক রেইড করে ছাত্র আন্দোলনের সময় সহিংসতায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

স্থানীয় গণমাধ্যম ও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাপ্ত খবর বলছে, সোমবার সকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।