কোটা বাতিলের পর এবার কোটা বহালের জন্য বিক্ষোভ শুরু

প্রাপ্তি রহমান
2018.10.04
ঢাকা
181004_Quota-movement_1000.jpg বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য সরকারি চাকরিতে ৩০ ভাগ কোটা সংরক্ষণের দাবিতে ঢাকার শাহবাগে ভিক্ষোভের দ্বিতীয় দিন। ৪ অক্টোবর ২০১৮।
বেনারনিউজ

বাংলাদেশের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রিপরিষদের সভায় বুধবার সিদ্ধান্তের একদিনের মাথায় বৃহস্পতিবার এই পরিপত্র জারি করা হয়।

“এর প্রতিবাদে আগামী শনিবার বেলা তিনটায় শাহবাগে মহাসমাবেশ করবে কোটা বাতিলের বিপক্ষে থাকা ৪২টি সংগঠন,” বেনারকে বলেন আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সভাপতি মো. সাজ্জাদ হোসেন।

মন্ত্রিপরিষদের সভায় কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বুধবার থেকেই রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। দাবি আদায়ে সংগঠনটির কিছু নেতা-কর্মী সারা রাত মোড়ে অবস্থান করে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ আতিকুর রহমান বেনারকে বলেন, “মহাসমাবেশের আগে পর্যন্ত তাঁরা রাজপথ ছাড়বে না। দাবি আদায়ে হাইকোর্টে রিট করার কথাও ভাবা হচ্ছে। এ বিষয়ে কমিটি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শাহবাগের মোড়ে অবস্থান নেন বিভিন্ন সংগঠনের ৫০ থেকে ৬০ জন নেতা-কর্মী। তারা ‘বাতিল বাতিল বাতিল চাই, পরিপত্র বাতিল চাই,’ ‘দাবি মোদের একটাই ৩০ শতাংশ কোটা চাই, ‘মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত, মানি না মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। ঢাকার বাইরেও দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ–সমাবেশ হয়েছে।

 

বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে শাহবাগের আন্দোলনকারীরা শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শাহবাগে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলার পর এই সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।

এদিকে পরিপত্র জারির পর সরকারি চাকরি পরীক্ষার সবচেয়ে বড় আসর আসন্ন ৪০তম বিসিএসের নিয়োগের ক্ষেত্রেও মেধায় নিয়োগ হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।

বৃহস্পিতবার জারি হওয়া পরিপত্রে বলা হয়েছে, সব সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং ১০ থেকে ১৩ তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে এবং বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হলো।

বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো কোটা চালু হয়। এত দিন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৪৫ শতাংশ নিয়োগ হতো মেধা কোটায় এবং ৫৫ শতাংশ অগ্রাধিকার কোটায়। এর মধ্যে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত ছিল ৩০ শতাংশ আসন।

তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও আছে বিভিন্ন ধরনের কোটা। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে কোটা আগে মতোই থাকছে।

বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জোরদার আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন চলাকালে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতারা শিক্ষার্থীদের মারধর করে।

একপর্যায়ে গত ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। কিন্তু প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলনে নামেন।

আন্দোলনের মুখে গত ২ জুলাই সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি পর্যালোচনা, সংস্কার বা বাতিলের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সচিবদের নিয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সরকার।

১৭ সেপ্টেম্বর কমিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্তের পর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা বহালের দাবিতে সরকারকে তিন দিনের সময় বেঁধে দেয় আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদ নামের একটি সংগঠন।

পরিপত্র জারির পর সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক নিপুন ত্রিপুরা বেনারকে বলেন, "শুক্রবার বিকেলে সব আদিবাসী ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে তাঁরা সভায় বসবেন। এরপর তাঁদের কর্মসূচি জানাবেন।"

শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শেখ জাহাঙ্গির হোসেন বেনারকে বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা প্রবর্তন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু স্বয়ং। বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় দীর্ঘদিন এটা বাস্তবায়িত হয়নি। এখনো অনেক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আছেন যারা চাকরি পাননি। তাই এই কোটা বাতিল করলে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”

৪০ তম বিসিএসে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বেনারকে বলেন, "৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল কোটার বিষয়ে সরকারের সবশেষ গ্রহণ করা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিয়োগ হবে। যেহেতু পরিপত্র জারি হয়ে গেছে তাই বিসিএসে কোটা নয়, মেধা থেকে নিয়োগ হবে।"

কোটা সংস্কারের বিষয়ে আন্দোলনকারী বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ পরিপত্র জারির পর আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য জানায়নি। তবে সংগঠনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বেনারকে জানান, সবার সঙ্গে কথা বলে তাঁরা শিগগির আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানাবেন।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন শরীফ খিয়াম।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।