বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যে ১০ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই

কামরান রেজা চৌধুরী
2024.04.23
ঢাকা
বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যে ১০ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই বাংলাদেশের পক্ষে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং কাতারের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন হামাদ আল থানি দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ২৩ এপ্রিল ২০২৪
[ছবি: পিআইডি]

ঢাকা সফররত কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মেরিটাইম খাত সংশ্লিষ্ট একটি চুক্তি ও একটি সমঝোতা স্মারকসহ মোট ১০টি সহযোগিতা চুক্তি সই করেছেন দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা।

গত বছরের শেষের দিকে সৌদি আরবের কোম্পানি রেড সি গেটওয়েকে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বন্দরে নবনির্মিত পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার ভার দেওয়া হয়।

সেই সূত্র ধরেই মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বন্দর ও লজিস্টিক খাতে বিনিয়োগে কাতার আগ্রহী হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বাংলাদেশ সফরকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, “আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কাতারের আমির একজন বড় নেতা। তালেবানের সঙ্গে মার্কিন সরকারের চুক্তি এবং হামাস-ইসরায়েল শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতা করেছে কাতার।”

“উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ এখন মেরিটাইম খাত এবং বন্দর ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় যুক্ত হচ্ছে। কাতারের প্রচুর অর্থ রয়েছে এবং তারা ভালো বিনিয়োগের স্থান খুঁজছে। বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন ও পরিচালনা একটি ভালো খাত,” যোগ করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশের জন্য কাতার খুবই গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এলএনজি আমদানির ব্যাপারে তাদের সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তি রয়েছে। সেই সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে চায় কাতার।”

যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক

রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসস জানায়, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে পাঁচটি চুক্তি এবং পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে দ্বৈত কর পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ, আইনি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, সমুদ্র পথে পরিবহন, পারস্পারিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা এবং যৌথ ব্যবসায়িক পরিষদ প্রতিষ্ঠা।

চুক্তিগুলোর মধ্যে দুটি মেরিটাইম ও বন্দর খাত সংশ্লিষ্ট। চুক্তি দুটিতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

চুক্তি ছাড়াও যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে জনশক্তি কর্মসংস্থান (শ্রম), বন্দর (এমডব্লিউএএনআই কাতার এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ), বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যুব ও ক্রীড়া এবং বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা।

রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বলেন, কাতারের আমির এবার এশিয়ার তিনটি দেশ সফর করছেন—বাংলাদেশ, নেপাল ও ফিলিপাইন। এই তিনটি দেশই বিশ্বে জনশক্তি রপ্তানি করে।

“কাতারের অর্থনীতি অনেক বড়। তাদের অর্থনীতির প্রয়োজনে দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন। কাতার এসব দেশ থেকে দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক নিতে আগ্রহী। সে কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে,” যোগ করেন তিনি।

মেরিটাইম খাতে চুক্তিতে কী লাভ?

মেরিটাইম খাতে সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সম্পর্কে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এস. এম. মোস্তফা কামাল মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, “চুক্তি দুটির আওতায় দুই দেশের জাহাজগুলো অগ্রাধিকারভিত্তিতে উভয় দেশের বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।”

মোস্তফা কামাল বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরে অবকাঠামো উন্নয়ন ও লজিস্টিকস খাতে কাতার বিনিয়োগ করতে এবং বন্দর পরিচালনায় যুক্ত হতে চায়।”

কাতারের সঙ্গে মেরিটাইম চু্ক্তি ও সমঝোতা স্মারক সম্পর্কে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. সোহায়েল মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, “চট্টগ্রাম দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ব্যস্ত বন্দর। কাতারের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের বন্দরের ব্যাপারে আগ্রহী। আমরা আনন্দিত যে, কাতার সরকার বন্দর ও মেরিটাইম খাতে আগ্রহী হয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি এবং একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।”

তিনি বলেন, “চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, কাতারের জাহাজগুলো বাংলাদেশের বন্দরে প্রাধান্যের ভিত্তিতে ভিড়তে পারবে এবং একইভাবে আমাদের জাহাজগুলো কাতারের বন্দরে গেলে অগ্রাধিকার পাবে।”

রিয়ার অ্যাডমিরাল সোহায়েল বলেন, “এই ব্যবস্থার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে মেরিটাইম খাতে সহযোগিতা জোরদার করা সম্ভব হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।”

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের আমন্ত্রণে ২৪ ঘণ্টার ঝটিকা সফরে সোমবার বিকেলে বাংলাদেশে আসেন কাতারের আমির। তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছে কাতারের একটি ব্যবসায়ী দল।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন তিনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নেপালের উদ্দেশে কাতারের আমির ঢাকা ত্যাগ করেন।

বাণিজ্য করিডোর করতে চায় কাতার

বাংলাদেশ ও কাতার সরকারের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনার আগের দিন সোমবার রাতে সালমান এফ. রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসে সফররত কাতারের ব্যবসায়ীরা।

সভা শেষে সালমান এফ. রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির উপায়গুলো খুঁজে বের করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা বাংলাদেশে একটা বাণিজ্য করিডোর পাওয়ার চিন্তা করছে। এজন্য চট্টগ্রাম বন্দরে ট্রেডিং করিডোর সৃষ্টি করা যায় কি না সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখবে।”

তিনি বলেন, “তারা কাতারে একটি বিরাট বন্দর অলরেডি করেছে। সেখানে বন্দরকে ঘিরে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলও করেছে। সেই বন্দর এখনো আন্ডার ইউটিলাইজড। সিঙ্গাপুর বন্দরের এখন যে মোট টার্নওভার, সেটা জিসিসি (গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিল) রাষ্ট্রগুলোর চার থেকে পাঁচগুণ বেশি। তাহলে বাংলাদেশের বন্দরের সঙ্গে কাতারের বন্দরের একটি কানেক্টিভিটি করে কিছুটা ট্রেডিং এই দিকে নিয়ে আসা যায় কি না সেটার সম্ভাব্যতা দেখতে হবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।