ধর্ষকদের প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড দাবি

জেসমিন পাপড়ি
2019.07.09
ঢাকা
190709_rape_protest_1000.jpg ধর্ষকদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মানবন্ধন। ৯ জুলাই ২০১৯।
[জেসমিন পাপড়ি/বেনারনিউজ]

ধর্ষণের শাস্তি কঠোর করার দাবিতে দেশে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ চলছে। নারী ও শিশু ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে রাজধানী ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় প্রতিদিনই এ বিষয়ে কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

ধর্ষকের শাস্তি প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড করার পাশাপাশি নতুন আইন করার দাবিও উঠেছে।

“আমরা ধর্ষকদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড চাই। খুন করার চেয়ে ধর্ষণ কোনো অংশে ছোট অপরাধ নয়। শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলে স্বাভাবিকভাবে ধর্ষকেরা ভয় পাবে,” বেনারকে বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএম লিপি আক্তার। তিনি ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক।

মঙ্গলবার ধর্ষকদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন মানববন্ধনে অনেকের মতো অংশ নেন লিপি আক্তারও।

একই দাবিতে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি দেবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

“কালক্ষেপেণর আর সময় নেই। যত কালক্ষেপণ করছি এই ধর্ষণের কারণে মৃত্যুর মিছিল অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে,” বেনারকে বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী জিয়াসমিন শান্তা।

“বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সর্বোচ্চ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার শেষ করে ধর্ষককে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে,” বলেন তিনি।

গত শুক্রবার রাজধানীর ওয়ারীতে নির্মাণাধীন একটি ফ্ল্যাট থেকে শিশু সামিয়া আফরিন সায়মার লাশ উদ্ধার করা হয়। সাত বছরের শিশু সায়মাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

পরদিনই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও ওই ঘটনার পর সারা দেশে ক্ষোভ–বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

এর আগে গত ৬ এপ্রিল যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগানো হয়। এর চার দিন পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত। পরে মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গত ২৭ জুন ১২ জন শিশুছাত্রীকে ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বাইতুল হুদা ক্যাডেট মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল-আমিন। সারা দেশেই একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।

নারী ও শিশু অধিকার কর্মীরা বলছেন, বিচারহীনতা, বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মানবাধিকারকর্মী আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালমা আলী বেনারকে বলেন, “বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এবং প্রভাবশালীদের প্রভাব নারী নিপীড়ন বেড়ে যাওয়ার ঘটনার অন্যতম কারণ। ধর্ষণের মতো ভয়ানক অপরাধ করেও অপরাধীরা গ্রেপ্তার হয় না। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও প্রভাব খাটিয়ে বিচার ও শাস্তি থেকে পার পেয়ে যায় তারা।”

“সমাজে যখন এ ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয় তখন অন্য অপরাধীরাও আশকারা পায়।”

এদিকে সোমবার জাতীয় সংসদে ধর্ষণের বিচারে নতুন আইন প্রণয়নের দাবি জানান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল জাসদের সংসদ সদস্য শিরিন আক্তার।

সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত শিশু ধর্ষণের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ধর্ষণের বিচারে আইন নতুন করে প্রণয়ন করা প্রয়োজন। যাতে অত্যন্ত দৃষ্টান্তমূলকভাবে এই নরপিশাচদের বিচার করা যায়।”

ছয় মাসে ধর্ষণের শিকার ৬৩০ নারী

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশে ৬৩০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। গত ১ জুলাই প্রকাশিত সংস্থাটি ছয় মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। এ সময় ধর্ষণের পর ৩৭ নারীকে হত্যা করা হয়েছে।

সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ধর্ষণের শিকার হন ৭৩২ জন নারী।

আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ছয় মাসে ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন সাতজন। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে ১০৫ নারীর ওপর। এই ছয় মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১২৭ জন নারী। এর মধ্যে আটজন আত্মহত্যা করেছেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন ৩ জন নারী ও ২ জন পুরুষ। এ ছাড়া হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিক্ষার হয়েছেন ১২৪ জন নারী-পুরুষ।

ছয় মাসে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ৪৯৬টি

এ বছরের প্রথম ছয় মাসে সারা দেশে ৪৯৬টি শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে রোববার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম (বিএসএএফ)। এর মধ্যে গণধর্ষণ হয়েছে ৫৩টি। ধর্ষিত হয়েছে ২৭ প্রতিবন্ধী শিশুও। আর ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৩ জন শিশুকে।

এই ছয় মাসে ১২০ জন যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

যদিও আসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ছয় মাসে শিশু ধর্ষণের মোট ঘটনা ২৫৮টি। আর ২০১৮ সালে এ ধরনের ২৭১টি ঘটনা ঘটেছিল।

কঠোর পদক্ষেপ নেবে সরকার

ধর্ষণ প্রতিরোধে প্রয়োজনে সরকার কঠোর পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ধর্ষকদের শাস্তি দিতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। ধর্ষণ প্রতিরোধে যা যা করার প্রয়োজন বা আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার হলে সরকার সেটাই করবে।”

তবে ধর্ষণ রোধে পুরুষ সমাজকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “ধর্ষণটা তো পুরুষ সমাজ করে যাচ্ছে, এই সমাজেরও একটা আওয়াজ তোলা উচিত। তাদেরও কিছু করা উচিত।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।