ছয় দশক পর রাজশাহী মুর্শিদাবাদ নৌপথ চালু

রিয়াদ হোসেন
2024.02.12
ঢাকা
ছয় দশক পর রাজশাহী মুর্শিদাবাদ নৌপথ চালু রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া ঘাটের উদ্দেশ্যে গার্মেন্টস পণ্যবাহী একটি নৌযান ছেড়ে যায়। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।
[বেনারনিউজ]

প্রায় ছয় দশক পর চালু হয়েছে বাংলাদেশের রাজশাহী ও ভারতের মুর্শিদাবাদের মধ্যে নৌপথে যোগাযোগ।  মায়া-সুলতানগঞ্জ নামে পরিচিত এই রুট চালু হওয়ার ফলে আমদানি-রপ্তানির সময় ও ব্যয় উভয়ই কমবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

সোমবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া নৌ বন্দর পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে নৌপথটির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

এসময় নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যে অন্যতম উচ্চতায় চলে গেছে, মায়া-সুলতানগঞ্জ নৌপথ চালু তারই বহি:প্রকাশ।”

তিনি বলেন, “কেবল মায়া-সুলতানগঞ্জই শুধু নয়, ইতিমধ্যে ভারতের সাথে পর্যটক পরিবহনে অভাবনীয় অগ্রগতি হয়েছে।”

অনুষ্ঠানে রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, “এই নৌপথ আরো বিস্তৃত হয়ে রাজশাহী হয়ে আরিচা পর্যন্ত চালু হবে।”

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা বলছেন, ২০ কিলোমিটার দূরত্বের এ নৌপথে পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশ থেকে ৫টি জাহাজ চলাচল করবে।

বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন বেনারকে বলেন, “পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে ১১ টন গার্মেন্টস ঝুট পাঠানো হয়েছে। ভারত থেকে একটি জাহাজে ১০০ টন পাথর বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে।”

ভারত থেকে পাঠানো পাথর সুলতানগঞ্জ নৌ বন্দরে গ্রহণ করতে দুই ঘন্টা সময় লেগেছে বলে কর্মকর্তারা জানান।

এই রুটের মাধ্যমে উভয় দেশের বাণিজ্য বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।

তিনি বলেন, “মায়া-সুলতানগঞ্জ নৌপথ পুনরায় চালু করায় ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি যাত্রী পরিবহনের সুযোগও তৈরি হবে।  এই পথে বছরে প্রায় ২৫ লাখ টন পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে।”

“এ ছাড়া এই পথটি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সংযোগ উন্নত করতে সাহায্য করবে,” যোগ করেন তিনি।

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল বেনারকে বলেন, “এতে কেবল পণ্য নয়, যাত্রীও পরিবহন করা যাবে।  ফলে উভয় দেশের জন্যই সুবিধা হবে।”

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এই নৌপথের মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্মান ও অবকাঠামোর অতি প্রযোজনীয় পাথর ছাড়াও বিভিন্ন খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য আমদানি হতে পারে।  আর রপ্তানি হতে পারে বাংলাদেশের মাছ, ওষুধ, গার্মেন্টস ঝুট ইত্যাদি।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৯ সালে ঢাকা থেকে কলকাতা পর্যন্ত পর্যটকবাহী জাহাজ (ক্রুজ) উদ্বোধন করা হয়। ইতিমধ্যে আমাদের ৯টি এবং ভারতের চারটি ক্রুজ চলেছে। এতে বাংলাদেশ-ভারতের পর্যটক ছাড়াও ইউরোপের পর্যটকরাও এই ভ্রমণ করেছেন।

এছাড়া বাংলাদেশের ভারতের সঙ্গে ২৩টি স্থলবন্দর রয়েছে।  নৌ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, এর মধ্যে বর্তমানে চালু রয়েছে ১৭টি।

চীনের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় ভারত থেকে, যা বাংলাদেশের মোট আমদানির  প্রায় ১৪ শতাংশ।

আমদানি খরচ কমবে ৩০ শতাংশ

বিআইডব্লিওটিএ’র এক প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, দেশের কয়েকটি স্থলবন্দর দিয়ে বর্তমানে পাথর আমদানিতে খরচ পড়ে প্রতি টনে ১৩ ডলার।  আর এই বন্দর ব্যবহার করে আমদানি করা হলে সর্বোচ্চ ১০ ডলার খরচ হবে। সেই হিসেবে প্রায় ৩০ শতাংশ খরচ সাশ্রয় হবে।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ভারত ছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে পাথর আনার খরচ হয় ২০ ডলারের মতো।  সেই বিবেচনায় এই বন্দরের মাধ্যমে পাথর আমদানি করা হলে অর্ধেক খরচ সাশ্রয় হবে।

দেশের অন্যতম পাথর আমদানিকারক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ বেনারকে বলেন, “পাথর বা রড নলহাটি থেকে থেকে আমদানি করতে হয়।  এই পথে আমদানি হলে প্রায় ১২০ কিলোমিটার পথ কমবে, তাতে আমাদের খরচ প্রতি বর্গফুটে ১০ থেকে ১২ টাকা কমে আসবে, যা প্রায় ১২ শতাংশ।”

“তবে এই পরিমাণ খরচ কমাও আমাদের জন্য অনেক বেশি,” যোগ করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, “পেঁয়াজসহ অন্যান্য ভোগ্য পণ্য কম খরচে ও কম সময়ে আমদানি করা সম্ভব হবে।  এছাড়া ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চালু হলে মুর্শিদাবাদ হয়ে কলকাতায় যাওয়ার ক্ষেত্রে তিন থেকে চার ঘন্টার রাস্তা কমে  আসবে।”

এটি নতুন করে চালু হওয়ায় দেশের  অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বড় অবদান রাখবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “৬০ বছর আগে এই নৌপথে পণ্য ও যাত্রী পারাপার ছিলো।”

রাজশাহীর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, রাজশাহীর গোদাগাড়ি থেকে ভারতে মাছ রপ্তানি করা সহজ হবে।

নাব্যতা বড় চ্যালেঞ্জ

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিআইডবিওটিএ’র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন করে চালু হওয়া এই নৌপথের বড় সমস্যা হলো কম নাব্যতা।  এই নৌপথের কিছু জায়গায় নাব্যতা কম থাকায় ভারী জাহাজ চলাচল করতে অসুবিধা হতে পারে।  তাই নিয়মিত ড্রেজিং করতে হবে।

ব্যবসায়ী নেতা আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, “বন্দরটি ফারাক্কার মুখে হওয়ায় পলি এসে এখানকার নাব্যতা কমে যায়।  প্রতি বছর খনন করে যে ব্যয় হবে, তাতে এখানকার বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মাধ্যমে লাভজনক হবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।”

বিআইডব্লিওটিএ’র পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, “নাব্যতা ছাড়াও লাইট, নেভিগেশন, পুরোপুরি সুবিধাসহ নৌ বন্দর তৈরির কাজ বাকি আছে।”

এছাড়া এখানে নিয়মিত পণ্য আনা নেওয়া হলে শুল্ক স্টেশন, গুদাম, কনভেয়ার বেল্ট (পরিবহন করার বেল্ট) প্রয়োজন হবে।  এগুলো একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে বলে জানান পরিচালক।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।