১৩ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাল সৌদি সরকার

প্রাপ্তি রহমান ও জেসমিন পাপড়ি
2019.01.08
ঢাকা
190108_Rohingya_620.jpg হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরে ফেরত আসা রোহিঙ্গাদের দলটিকে আটক করে পুলিশ। ৮ জানুয়ারি ২০১৯।
[নিউজরুম ফটো]

সৌদি আরব থেকে ১৩ জন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গাকে ঢাকায় পাঠিয়েছে সৌদি সরকার। সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রোহিঙ্গাদের ওই দলটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়।

মঙ্গলবার ওই ১৩ ব্যক্তি বিমানবন্দরের অভিবাসন শাখা পুলিশের হেফাজতে ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ফেরত পাঠানো বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গারা হচ্ছেন; ওমর ফারুক, মো. সালিম, মো আরিফ, আবদুল মজিদ, খাজা মাঈনুদ্দীন, হাসিবুর রহমান, নাজিম বিল্লাহ, জামাল হোসেন, শামসুল আলম, আমানউল্লাহ, বকুল, মিজানুর রহমান ও মো. মিয়া।

সূত্রগুলো বলছে, ফেরত আসা রোহিঙ্গারা নিজেদের পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, বগুড়া, জয়পপুরহাট, পাবনা, ঝিনাইদহ ও মাদারীপুরের বাসিন্দা হিসেবে। সংগৃহীত ভ্রমণ সংক্রান্ত কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, তাঁদের প্রত্যেকেই উমরাহ বা হজে সৌদি আরব যাওয়ার জন্য তিন মাসের ভিসা করেছিলেন।

নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পরও তাঁরা দেশে না ফেরায় পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে। তাঁরা কয়েক বছর সৌদি আরবের কারাগারে আটক ছিলেন।

এর আগে গত ৬ জানুয়ারি মিডল ইস্ট আই অনলাইন সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গাদের ঢাকায় পাঠানোর খবর প্রকাশ করে। ওই অনলাইন সংবাদমাধ্যমটি প্রতিবেদনের সঙ্গে একটি ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করেছে।

ভিডিওটি একজন রোহিঙ্গা গোপনে ধারণ করেন ও পুরো পরিস্থিতির বর্ণনা দেন। জেদ্দার সুমাইসি কারাগার থেকে তাঁদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল সে সময়। কয়েকজন রোহিঙ্গার হাততে হাতকড়া ছিল।

ভিডিও ধারণকারী ব্যক্তিকে রোহিঙ্গাদের ভাষায় কথা বলতে শোনা যায়।

“আমি এখানে গত পাঁচ/ছয় বছর ছিলাম। এখন ওরা আমাকে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। আমার জন্য দোয়া করবেন,” ওই ব্যক্তি বলছিলেন।

অপর একটি রেকর্ডিং-এ একজনকে রোববার জোর করে ফেরত পাঠানোর আগের ঘটনাক্রম বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলতে শোনা গেছে, “ওরা রাত ১২ টার দিকে কারাগারের কুঠুরিতে ঢোকে। আমাদের বাক্স–প্যাঁটরা গুছিয়ে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে বলে।”

রেকর্ডটি যিনি পাঠিয়েছেন তাঁকে আরও বলতে শোনা যায়, “এখন আমার হাতে হাতকড়া এবং আমাকে এমন একটা দেশে ফিরতে হচ্ছে যেটি আমার নয়। আমি রোহিঙ্গা, আমি বাংলাদেশি নই।”

বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক সূত্র জানায়, ফেরত পাঠানো প্রত্যেকেই যুবক। তারা বাংলাদেশ থেকে কাজের কোনো চুক্তিপত্র নিয়ে যায়নি। তারা হয়তো সৌদি আরবে থাকার চেষ্টা করছিল। সাধারণত রোহিঙ্গারা চট্টগ্রাম–কক্সবাজারের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে থাকে। কিন্তু ফিরে আসা যুবকেরা পরিষ্কার বাংলায় কথা বলেন।

তাঁরা সৌদি আরবে নিজেদের পরিচয় লুকানোর সব রকম চেষ্টাই করেছিলেন বলে জানিয়েছেন। সে কারণেই বাংলাদেশিদের কাছ থেকে ভাষাটা শিখে নিয়েছিলেন।

এই রোহিঙ্গা শরণার্থীরা কীভাবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেলেন সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র।

পুলিশ সদরদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া ও জনসংযোগ) সোহেল রানা বেনারকে বলেন, “প্রাথমিকভাবে তারা স্বীকার করেছে যে, তারা রোহিঙ্গা।”

“অবৈধভাবে পাসপোর্ট গ্রহণ ও আইন না মানার কারণে ওই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে,” সোহেল রানা বলেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ আবুল কালাম বেনারকে বলেন, ১৩ জন রোহিঙ্গাকে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর খবরটি আমরা শুনেছি। কিন্তু তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো জানতে পারিনি। আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনাও আসেনি।”

তিনি বলেন, “এভাবে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গাদের বিদেশ যাওয়ার খবরটি বেশ হতাশার।”

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের উপপরিচালক জাহিদ আনোয়ার বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গাদের বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। এমন অনেক প্রমাণ আগেও পাওয়া গেছে। রোহিঙ্গাদের করা অপরাধের কারণে বাংলাদেশের অনেক বদনামও হয়েছে।”

“আসলে বিষয়টা পুলিশের। কারণ, পাসপোর্ট দেওয়ার আগে পুলিশই ভেরিফিকেশনের দায়িত্বে থাকে,” বলেন তিনি।

জাহিদ আনোয়ার বলেন, “এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠিও দেওয়া হয়েছে।”

ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ভয়ে সম্প্রতি সীমান্ত অতিক্রম করে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৪৮ রোহিঙ্গাকে আটক হয়। ভারত থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে জানার পরেই তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর বেনারকে বলেন, “গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মোড় থেকে ৩১ জন এবং জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাগড়া এলাকা থেকে ১৭ রোহিঙ্গাকে পুলিশ আটক করে। তবে পরে তাদের কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে।”

পুলিশ জানায়, তিন বছর আগে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে তাঁরা ভারতের জম্মু-কাশ্মীর এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। সম্প্রতি ভারত রোহিঙ্গাদের ধরে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাচ্ছে এমন খবরে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেন।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাঁদের বেশ কয়েকজন আত্মীয় বসবাস করছেন বলেও জানান তাঁরা।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেও মণিপুর সীমান্ত দিয়ে পাঁচ রোহিঙ্গা নাগরিককে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে ভারত।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।