রোহিঙ্গা শিবিরে নিজেদের মাঝে সংঘর্ষে দুই মাসে নিহত পাঁচজন

আবদুর রহমান ও জেসমিন পাপড়ি
2021.01.26
কক্সবাজার ও ঢাকা
রোহিঙ্গা শিবিরে নিজেদের মাঝে সংঘর্ষে দুই মাসে নিহত পাঁচজন উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের ভেতর একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় তল্লাশি চালাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। ২৪ জানুয়ারি ২০২১।
[আবদুর রহমান/বেনারনিউজ]

কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে বিভিন্ন সন্ত্রাসী দলের মধ্যকার দ্বন্দ্বে গত দুই মাসে অন্তত পাঁচ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিশ্লেষকদের মতে এসব কারণে শিবিরগুলোতে তৈরি হয়েছে এক ধরনের ভয়ের পরিবেশ। 

সর্বশেষ সোমবার দিবাগত রাতে উখিয়ায় দুপক্ষের গোলাগুলিতে মোহাম্মদ জাবেদ (২০) নামে এক স্বেচ্ছাসেবক নৈশ প্রহরী নিহত হন। তিনি উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের তানজিমারখোলা রোহিঙ্গা শিবিরের মোহাম্মদ ইসলামের ছেলে। 

দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছেন মানবাধিকার কর্মী নূর খান। তিনি বেনারকে বলেন, “গত নভেম্বর থেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিভিন্ন সন্ত্রাসী সশস্ত্র গ্রুপ এবং মাদক পাচারকারীরা একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে।”

এইসব সংঘর্ষে নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত “ডজনখানেক মানুষ নিহত হয়েছেন,” জানিয়ে তিনি বলেন, “মাঝে মাঝে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালালেও তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না।”

“এখানে নানারকম গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। ফলে ক্যাম্পে একটা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে,” বলেন নূর খান। 

অভ্যন্তরীণ এসব দ্বন্দ্বের সময় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটছে। পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করছে। তবে মঙ্গলবারের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। অপরাধীদের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

“আমাদের একটি দল ঘটনার তদন্ত করছে। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান চলছে,” বেনারকে জানান কক্সবাজার ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শিহাব কায়সার খান।

জাবেদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং এ ঘটনায় মামলা হবে বলেও জানান তিনি।

“রোহিঙ্গা শিবিরগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে,” জানিয়ে শিহাব কায়সার বলেন, “তবে মাঝে মধ্যে দুয়েকটি বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটে, যা খুবই দুঃখজনক।” 

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি জানান, সোমবার দিবাগত রাতে পালংখালীর তানজিমারঘোনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোহাম্মদ জাবেদসহ আরও কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পাহারা দিচ্ছিলেন। রাত আড়াইটায় ১০-১২ জন অজ্ঞাত লোকের একটি দল ক্যাম্পের ভেতর দিয়ে অন্য ক্যাম্পে যাচ্ছিল।

তিনি বলেন, “স্বেচ্ছাসেবকরা তাঁদের গতিরোধ করে গভীর রাতে সেখানে ঘোরাঘুরি করতে নিষেধ করেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।”

“এতে অজ্ঞাত লোকজনের ছোড়া গুলিতে মোহাম্মদ জাবেদসহ তিন জন আহত হন। পরে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে ক্যাম্প সংলগ্ন ক্লিনিকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোহাম্মদ জাবেদকে মৃত ঘোষণা করেন,” বলেন এপিবিএন অধিনায়ক শিহাব কায়সার। 

উখিয়া তানজিমারখোলা রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা আবুল কালাম বেনারকে বলেন, “জাবেদ নৈশ প্রহরী ছিল। সে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল না। শিবিরে রাতে দায়িত্ব পালনকালে অস্ত্রধারীদের বাধা দেয়ার কারণেই তাকে প্রাণ হারাতে হলো।” 

“রোহিঙ্গা শিবিরে এখন অনেকে অর্থনৈতিক কারণে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তা ছাড়া আধিপত্য বিস্তার ও মাদককে কেন্দ্র করে এ ধরনের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে,” বলেন তিনি। 

পুলিশের তথ্যমতে, গত ১০ জানুয়ারি টেকনাফের হোয়াইক্যং উনছিপ্রাংয়ে রোহিঙ্গা শিবিরে দুই দল রোহিঙ্গা ডাকাতের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় নুর হাকিম নামে একজন নিহত হন, আহত হন আরো ২৩ জন।

একই শিবিরে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলিতে গত ১৫ জানুয়ারি নিহত হন নুর আমিন নামে এক রোহিঙ্গা, আহত হন আরো পাঁচ জন।

এ ছাড়া গত বছর ডিসেম্বরের শেষে উখিয়া কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা শিবিরে নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্বে দুইজন রোহিঙ্গা ডাকাত নিহত হন। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।