ভাসানচর যাচ্ছেন আরো তিন হাজার রোহিঙ্গা

আবদুর রহমান ও জেসমিন পাপড়ি
2021.01.28
কক্সবাজার ও ঢাকা
ভাসানচর যাচ্ছেন আরো তিন হাজার রোহিঙ্গা চট্টগ্রাম হয়ে ভাসানচর পৌঁছাতে উখিয়া ডিগ্রি কলেজের ট্রানজিট পয়েন্টে বাসের জন্য অপেক্ষা করছে একটি রোহিঙ্গা পরিবার। ২৮ জানুয়ারি ২০২১।
[আবদুর রহমান/বেনারনিউজ]

কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে আরো প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গা যাচ্ছেন বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ ভাসানচর। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার ছেড়েছেন দেড় হাজারের বেশি শরণার্থী। 

চট্টগ্রাম থেকে শুক্রবার দুপুরের দিকে তাঁরা নোয়াখালীর ওই দ্বীপে পৌঁছাবেন বলে বেনারকে জানিয়েছেন ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিচালক কমডোর আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী।

“পরদিন শনিবারও একইভাবে আরো প্রায় দেড় হাজার রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তর করা হবে,” বলেন প্রকল্প পরিচালক।

“তৃতীয় দফার প্রথম অংশে প্রায় এক হাজার ৮শ রোহিঙ্গা ভাসানচরে যেতে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে পৌঁছেছেন। দুই দিনে প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে,” বেনারকে জানান অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ সামছু-দৌজা।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আপত্তির মুখে এর আগে দুই দফায় তিন হাজার ৪৪৬ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়া হয়। যার মধ্যে প্রথম দফায় ৪ ডিসেম্বর যান এক হাজার ৬৪২ জন ও ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় সেখানে পৌঁছান এক হাজার ৮০৪ জন রোহিঙ্গা। 

এ ছাড়া অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে গত মে মাসে ভাসানচরে নিয়ে যায় সরকার, তাঁরাও সেখানে রয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এহসানুল হক বেনারকে বলেন, “ভাসানচরে ইতিমধ্যে যারা গেছেন, তাঁরা ভালো আছেন জানতে পেরেই রোহিঙ্গারা ভাসানচর যেতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এটা ইতিবাচক। তাঁদের সংখ্যা সেখানে বাড়লে জাতিসংঘও ভাসানচর নিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে।” 

“তবে আমাদের মূল লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো। এ বিষয়ে আমাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার রাখতে হবে,” বলেন এহসানুল হক। 

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। 

আগে আশ্রয় নেওয়াসহ বর্তমানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছেন। শরণার্থীদের চাপ কমাতে দুই বছর আগে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার। 

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। 

আত্মীয়-স্বজন বলেছেন ‘ভাসানচর ভালো’

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, একাধিক বাস ও ট্রাকে করে বিভিন্ন শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের এনে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে জড়ো করা হচ্ছে। দুপুরের দিকে দুই দফায় কড়া নিরাপত্তার ভেতর রোহিঙ্গাদের নিয়ে ৩৫টি বাস ও তাঁদের মালামাল নিয়ে ১৫টি ট্রাক চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। 

বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে উখিয়া ডিগ্রী কলেজের সামনে বেনার প্রতিবেদকের কথা হয় ভাসানচর যেতে প্রস্তুত রোহিঙ্গা নুরুল ইসলামের সঙ্গে। 

তিনি বলেন, “উখিয়ার কুতুপালংয়ে প্রায় সময় সংঘর্ষ, মারামারি লেগে থাকে। তাই জীবনের নিরাপত্তা ও উন্নত জীবনের আশায় ভাসানচর যাচ্ছি।”

“প্রথম দফায় আমার ২৫ জন আত্মীয়–স্বজন সেখানে গেছে। তারা সবাই সেখানে খুব ভালো থাকার কথা জানিয়েছে,” জানিয়ে নুরুল বলেন, “এখন সেখানে পরিবার নিয়ে আমিও নতুন জীবন শুরু করতে পারব।”

“ভাসানচরে যাওয়া প্রথম দলে থাকা আমার স্বজনেরা ভিডিও কলের মাধ্যমে সেখানকার পরিবেশ দেখিয়েছেন। আমার ভালো লেগেছে,” বেনারকে জানান ভাসানচরযাত্রী রোহিঙ্গা নারী নাছিমা বেগম।

তিনি বলেন, “তা ছাড়া কুতুপালংয়ে প্রায় সময় মারামারি হয়, গোলাগুলি লেগে থাকে। এই নিয়ে ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়। ভাসানচরে অন্তত এ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।” 

টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের মাঝি নুর মুহাম্মদ বেনারকে জানান, তাঁর ক্যাম্প থেকে স্বেচ্ছায় ভাসানচর যাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাড়ছে। 

আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যাবাসনের প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ চায় আলোচনার মাধ্যমেই মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফেরত নেবে। 

বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তারা যাতে ফিরে যেতে পারে সে জন্য আলোচনা চলছে, আমরা কিন্তু কারও সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্বে লিপ্ত হইনি।

“আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি, যেন আলোচনার মাধ্যমে তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়,” বলেন তিনি।

বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয় দেওয়ায় সারা বিশ্ব বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।