মিয়ানমার বাহিনীর হত্যা: কূটনৈতিক নোটের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিবাদ

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2017.02.08
নাফ নদীর তীরে বাংলাদেশের সীমান্ত পাহারা চৌকি। নাফ নদীর তীরে বাংলাদেশের সীমান্ত পাহারা চৌকি। টেকনাফ, কক্সবাজার। জানুয়ারি ১৭, ২০১৭।
জেসমিন পাপড়ি/বেনারনিউজ

নাফ নদীতে মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশ গুলি চালিয়ে একজন বাংলাদেশি জেলেকে হত্যা ও আরেকজনকে আহত করার ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বুধবার ঢাকায় মিয়ানমার দূতাবাসে পাঠানো একটি কূটনৈতিক নোটে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহবান জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তবে আত্মরক্ষার্থে বাংলাদেশি জেলেদের ওপর গুলি চালানোর কথা বলেছে মিয়ানমার। মিয়ানমারের গণমাধ্যমে এ বিষয়ে খবর প্রকাশ হয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে ওই খবরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়।

তবে সাধারণ জেলেরা মিয়ানমারের জন্য কতটুকু হুমকি হতে পারে, তা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলে মিয়ানমারের এই বক্তব্য অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, এটা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপির) বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়।

জাতিসংঘের হিসাবে, গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৬৬ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সীমান্তের তিনটি চেকপোস্টে অস্ত্রধারীদের হামলায় দেশটির নয়জন সীমান্তরক্ষী নিহত হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের দমনে সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হয়। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছে মিয়ানমার। এরই মধ্যে সীমান্ত হত্যার এই ঘটনা ঘটলো।

আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ

গত সোমবার কক্সবাজারের টেকনাফে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে পৃথক করা নাফ নদীতে মাছ ধরার সময় মিয়ানমার বিজিপির গুলিতে বাংলাদেশি জেলে নুরুল আমিন (২৬) নিহত হন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন আরেক জেলে মো. মুর্তজা হোসেন (২৪)। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় বিজিপির কাছে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।

এ ঘটনার একদিন পর কূটনৈতিক নোটের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। ওই হামলা ও হত্যাকে ‘আগ্রাসী কর্মকাণ্ড’ উল্লেখ করে ঢাকায় মিয়ানমার দূতাবাসে কূটনৈতিক নোট পাঠায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অদূরে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশিদের নৌকায় আক্রমণ করে মিয়ানমারের নৌবাহিনী। এতে কয়েকজন জেলে আহত হন। ওই ঘটনায় মিয়ানমার রাষ্ট্রদূত মিও মিন্ট থানকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ।

গভীর উদ্বেগের সঙ্গে সে ঘটনার উল্লেখ করে কূটনৈতিক নোটে বলা হয়, “এ ধরনের আগ্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিবেশি দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়া ও পারস্পারিক আস্থা তৈরিতে ভূমিকা রাখবে না।”

এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা।

আত্মরক্ষার্থে গুলি: মিয়ানমার বাহিনী

এদিকে হামলার আশঙ্কায় ও আত্মরক্ষার্থে নাফ নদীতে মাছ ধরা অবস্থায় বাংলাদেশি জেলেদের ওপর গুলি করা হয় বলে দাবি করেছে মিয়ানমার। বুধবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের বরাতে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

মিয়ানমারের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, “বাংলাদেশের অবৈধ আটটি মাছ ধরার নৌকা টহলে থাকা মেরিন পেট্রোল নৌকাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। এতে করে মনে হয়, তারা হামলা করতে যাচ্ছে। এ কারণেই নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষার্থে টহল দল দুটি গুলি ছোঁড়ে। ফলে নৌকাগুলো ওই এলাকা ছেড়ে চলে যায়।”

প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশি জেলেদের কাছে অস্ত্র ছিল কিনা সে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি বলে জানায় রয়টার্স।

পত্রিকার তথ্যগুলো নৌবাহিনীর কাছ থেকে এসেছে জানিয়ে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থিন কিয়াও কার্যালয়ের মুখপাত্র এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

নিরস্ত্র জেলেরা হামলা করতে পারে না

মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা কীভাবে অস্ত্রধারী সীমান্ত রক্ষীদের ওপর হামলা চালাতে পারে, সে প্রশ্ন তুলে মিয়ানমার বাহিনীর যুক্তির সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং মিয়ানমার আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছে। এ অবস্থায় নিরাপত্তা বাহিনীর এই ভূমিকা নিন্দনীয় বলে মত দেন বিশ্লেষকেরা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও অভিবাসন-বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার বেনারকে বলেন, “জেলেদের কাছে কী এমন (অস্ত্র) থাকবে যে, তারা (বিজিপি) আত্মরক্ষার্থে গুলি করবে। এটা অবাস্তব দাবি।”

তাঁর মতে, চলমান রোহিঙ্গা সমস্যার মধ্যে এমন নতুন নতুন মাত্রা ঢুকতে থাকলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার এ ধরনের অসংলগ্ন আচরণ করছে, এমনটি উল্লেখ করে সি আর আবরার বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েছে। সে কারণে তাঁরা মরিয়া হয়ে উঠেছে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।