তুমব্রু সীমান্তে আবারও মিয়ানমারের ফাঁকা গুলি

কামরান রেজা চৌধুরী ও সুনীল বড়ুয়া
2019.02.12
ঢাকা ও কক্সবাজার
190212_Firing_Border-1000.jpg বান্দরবান নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা শিবির। কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে টিলার ওপর দেখা যাচ্ছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পোস্ট। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
[সুনীল বড়ুয়া/বেনারনিউজ]

বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে পুনরায় গুলিবর্ষণ করেছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। সীমান্ত ঘেঁষা নিজস্ব ভূখণ্ডে তারা মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে শতাধিক রাউন্ড ফাঁকা গুলি চালায়।

প্রায় চার মাস পর আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কক্সবাজার-৩৪ ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. ইকবাল হোসেন বেনারকে বলেন, “এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা বিজিপির কাছে প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছি।”

“ফাঁকা গুলিবর্ষণের ঘটনা এই সীমান্তে নতুন নয়। সাধারণত তারা এক-দুই রাউন্ড গুলি চালায়। তবে এবারের ঘটনাটি ব্যতিক্রম। সব মিলে ১০৩ রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে,” যোগ করেন তিনি।

ওই সীমান্তের শূন্যরেখায় মিয়ানমারের অংশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বেনারকে জানান, তাদের আতঙ্ক বাড়িয়েছে এই ঘটনা। তাঁর দাবি, কমপক্ষে দুই-তিনশো রাউন্ড গুলি করেছে বিজিপি।

“যে কারণে রোহিঙ্গা শিবিরের নারী, পুরুষ ও শিশুসহ সবার মাঝে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে,” মন্তব্য করে তিনি জানান, এর আগে নভেম্বরের শেষের দিকে বিজিপি এভাবে নিজেদের সীমানার ভেতরে ফাঁকা গুলি চালিয়ে আতঙ্ক তৈরি করেছিল।

দিল মোহাম্মদের অভিমত, “মিয়ানমার মনে করছে, তারা এভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করলে আমরা রোহিঙ্গারা ‘নো ম্যানস-ল্যান্ড’ ছেড়ে বাংলাদেশে ঢুকে যাব। আমাদের এখান থেকে তাড়ানোর জন্যই তারা পরিকল্পিতভাবে এসব করছে।”

কোনারপাড়া শিবির হিসেবে পরিচিত এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আরেক নেতা মোহাম্মদ নুরুল আমিন বেনারকে বলেন, “আজকের মতো এতগুলো গুলি ছোড়ার ঘটনা এই প্রথম। ভোররাতে ক্যাম্পজুড়ে এক অন্যরকম ভীতিকর পরিস্থিতির তৈরি হয়।”

“মিয়ানমারে আমরা অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু মিয়ানমার চাইছে আমরা এখান থেকেও চলে যাই। কিন্তু আমরা যাব কোথায়?”- প্রশ্ন তাঁর।

রোহিঙ্গা নেতারা জানান, ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের এই কোনারপাড়া নো ম্যানস-ল্যান্ডের আশপাশেই মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিজিপির ১১টি অস্থায়ী পোস্ট আছে। এছাড়াও রোহিঙ্গা শিবিরের পাশেই রয়েছে বিজিপির স্থায়ী ক্যাম্প।

মঙ্গলবার ভোরে এই ক্যাম্প এবং সবকটি পোস্ট থেকেই কখনো একসাথে, কখনো থেমে থেমে গুলি চালানো হয়।

“২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এখানে (শূন্যরেখায়) আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই আমাদের তাড়ানোর জন্য রাতের অন্ধকারে ঢিল ছোড়া, ফাঁকা গুলিবর্ষণ, গালি-গালাজসহ নানা কিছু করে আসছে বিজিপি,” বলেন রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ।

ফিরে গেছে আট বৌদ্ধ পরিবার

সহিংসতা থেকে রক্ষা পেতে মিয়ানমারে চীন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী শতাধিক পরিবারের মধ্যে আট পরিবারের ২৮ জন দেশে ফিরে গেছেন। তবে আরও ৩০ পরিবারের ১০৮ জন এখনো বান্দরবানের রুমা উপজেলার প্রত্যন্ত সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান করছে।

উপজেলার রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিরা বম বেনারকে বলেন, “ওই পরিবারগুলো প্রথমে এসে ইউনিয়নের চেইক্ষ্যংপাড়ায় আশ্রয় নিয়েছিল। এখন সেখান থেকে তাদের সরিয়ে নো মেনস-ল্যান্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

“শুনেছি থাকা-খাওয়া নিয়ে তারা খুব কষ্টে আছে,” বলেন তিনি।

বিজিবির বান্দরবান সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল জহিরুল হক খান বেনারকে বলেন, “অবস্থার একটু উন্নতি হচ্ছে। আমার জানা মতে ৩৮টি পরিবারের ১৩৬ জন নো ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছিল। সেখান থেকে গত পরশুদিন রোববার সাড়ে তিনটার দিকে আট পরিবারের ২৮ জন চলে গেছেন।”

“আশা করছি বাকিরাও এক-দুই দিনের মধ্যে চলে যাওয়া শুরু করবেন,” যোগ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “সহিংসতা থেকে রক্ষা পেতে যেসব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পরিবার বাংলাদেশে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিল, তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।