রোহিঙ্গারা রাখাইন ফিরলে টাকা দেওয়ার কথা মিয়ানমারের: চীনা দূতাবাস

কামরান রেজা চৌধুরী
2019.03.07
ঢাকা
190306_china_rohingya_1000.JPG টেকনাফের শালবাগান শরণার্থী শিবিরে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন রোহিঙ্গারা। ৫ মার্চ রয়টার্স। ৫ মার্চ ২০১৯।
[রয়টার্স]

রোহিঙ্গাদের রাখাইন ফিরে যাবার জন্য চীন কখনো টাকা দেবার প্রস্তাব করেনি, বরং এই টাকা মিয়ানমারের দেওয়ার কথা বলে বেনারকে জানিয়েছে ঢাকার চীনা দূতাবাস।

রোহিঙ্গরা রাখাইন ফিরে গেলে পরিবার প্রতি চীনের পক্ষ থেকে ছয় হাজার মার্কিন ডলার অর্থ সাহায্য দেবার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে; এই মর্মে রোহিঙ্গা নেতা ও বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের বরাতে মঙ্গলবার বেনারনিউজ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকার চীনা দূতাবাসের পলিটিক্যাল ডেস্কের প্রধান ভেরা হু’র সাথে ওইদিন যোগাযোগ করা হলে পরদিন বুধবার এক ইমেইল বার্তায় তিনি চীনের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের টাকা দেবার প্রস্তাব অস্বীকার করে বলেন, এই টাকা দেবার কথা মিয়ানমারের।

“চীন কখনো রোহিঙ্গাদের ফিরে যাবার জন্য টাকা দেবার প্রস্তাব করেনি। যেসব রোহিঙ্গা রাখাইনে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের বানানো বাড়িঘর গ্রহণ করতে রাজি না, তাঁদেরকে নিজেরা বাড়িঘর বানানোর তহবিল হিসেবে এই টাকা মিয়ানমার সরকারের প্রস্তাব করার কথা,” ইমেইলে বেনারকে জানান ভেরা হু।

তবে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের পক্ষ থেকে টাকা দেওয়া হবে কি না এই তথ্যের সত্যতা তাৎক্ষণিকভাবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

বেনারনিউজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রেডিও ফ্রি এশিয়ার ইয়াঙ্গুন কার্যালয় থেকে বৃহস্পতিবার মিয়ানমার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড. উইন মিয়াত আয়ে এবং রাখাইন তদন্ত কমিশনের সদস্য ড. অং তুন থেটকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি।

চীন সরকারের এশিয়া বিষয়ক দূত সুন গোজিয়াং এর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল গত ৩ মার্চ কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে ২৯ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সাথে বৈঠক করে রোহিঙ্গাদের রাখাইন ফিরে যাবার আহ্বান জানায়।

ফিরে যাওয়া প্রতিটি পরিবারকে তাঁরা চীনের পক্ষ থেকে ছয় হাজার মার্কিন ডলার অর্থ সাহায্য দেবার প্রস্তাব করেন বলে বেনারকে জানান বৈঠকে উপস্থিত রোহিঙ্গা নেতারা।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের ব্যানারে রোহিঙ্গারা এ বৈঠকে অংশ নেন।

সংগঠনটির চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহ বেনারকে বলেন, “প্রতিনিধিদলের প্রধান আমাদের বলেছেন- তাঁরা আমাদের ভিটে দেবেন, রাখাইনে বসবাসের জন্য বাড়ি-ঘর তৈরি করে দেবেন এবং ফিরে যেতে রাজি হলে প্রতি পরিবারকে পাঁচ থেকে ছয় হাজার ডলার অর্থ সহায়তাও দিবেন।”

একই সংগঠনের সেক্রেটারি ছৈয়দ উল্লাহ বেনারকে বলেন, “তাঁরা প্রথমেই এসে আমাদের কাছে জানতে চান, প্রতি পরিবারকে পাঁচ-ছয় হাজার ডলার দিলে মিয়ানমারে ফিরে যাব কিনা।”

তবে রোহিঙ্গারা চীনের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তাঁদেরকে জানান, রোহিঙ্গা পরিচয়ে নাগরিকত্ব না দিলে এবং প্রত্যাবাসনের আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা হলে তাঁরা রাখাইনে ফিরে যেতে রাজি নন।

“তাঁদের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে আমরা বলেছি, আমাদের স্বীকৃতি এবং নাগরিকত্ব দেওয়াসহ সকল দাবি পূরণ না হলে আমরা কোনোভাবেই ফিরে যাব না,” বলেন ছৈয়দ উল্লাহ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বেনারকে জানান, বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে দুই লাখ ঘরবাড়ি তৈরি করতে হবে। তবে খুব দ্রুত এত ঘরবাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব নয়।

“মূলত এ কারণে চীনা প্রতিনিধি অর্থ দেওয়ার কথা বলেছেন যাতে রোহিঙ্গারা নিজেরা তাদের ঘরবাড়ি তৈরি করে নেয়,” বলেন তিনি।

সুন গোজিয়াং এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলে মিয়ানমারে চীনা দূতাবাসের দুই কর্মকর্তা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা এবং ঢাকা দূতাবাসের এক কর্মকর্তা ছিলেন বলে বেনারকে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অনুবিভাগের পরিচালক আলাউদ্দীন ভূঁইয়া।

তিনি জানান, “প্রতিনিধিদলটি শনিবার রাতে ঢাকায় আসে। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ও অন্যান্যদের সাথে সভা করে মঙ্গলবার ঢাকা ত্যাগ করে।”

এই আলোচনায় অংশগ্রহণকারী রোহিঙ্গারা বৈঠকের একটি ভিডিও নিজেদের ফেসবুকে বিতরণ করেন। ভিডিওতে চীনা প্রতিনিধিদলটিকে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলতে দেখা যায়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে “আমি ভিডিওটি দেখিনি সুতরাং বলতে পারব না ওখানে কোনো চীনা কর্মকর্তা ছিলেন কি না,” বলে মন্তব্য করেন ভেরা হু।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।