রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সন্ত্রাসী হামলায় আরসা কমান্ডার নিহত

সুনীল বড়ুয়া ও আহম্মদ ফয়েজ
2023.03.07
কক্সবাজার ও ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সন্ত্রাসী হামলায় আরসা কমান্ডার নিহত কক্সবাজার উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) কমান্ডার হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্যরা। ৭ মার্চ ২০২৩।
[আবদুর রহমান/বেনারনিউজ]

কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরে সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) এক কমান্ডার গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। বান্দরবান জেলায় মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ডিজিএফআই কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন এই রোহিঙ্গা।

ওই মামলার ২৪ নম্বর আসামি নুর হাবিব ওরফে ডা. ওয়াক্কাস (৪২) বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন জানিয়ে ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক মো. আমির জাফর বেনারকে জানিয়েছেন, “নুর হাবিব ওরফে ডা. ওয়াক্কাসকে উখিয়ায় বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে একটি সশস্ত্র রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গ্রুপ।”

সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বালুখালী ৯ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে সামনে হত্যাকাণ্ডটি ঘটে বলে জানিয়েছেন এই এপিবিএন কর্মকর্তা।

“নিহত নুর হাবিব আরসার কমান্ডার এবং রোহিঙ্গা শিবিরে নানা অপরাধের সাথে জড়িত। সম্প্রতি ঘুমধুম সীমান্তে র‍্যাবের ওপর হামলায় ডিজিএফআই কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি,” বলেন আমির জাফর।

গত বছরের ১৪ নভেম্বর প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কর্মকর্তা স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদী নিহত হওয়ার ঘটনায় ২৩ নভেম্বর নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় ওই মামলাটি দায়ের করে ডিজিএফআই।

ওই মামলায় ওয়াক্কাস ছাড়াও আরসার প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার ওরফে জুনুনি ও শূন্য রেখার আশ্রয়শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান মাস্টার দিল মোহাম্মদসহ ৩১জনকে আসামি করা হয়।

জাফর জানান, নিহত নুর হাবিব আরসার বালুখালী ক্যাম্প কমান্ডার এবং ডাক্তার (পল্লি চিকিৎসক) ওয়াক্কাস নামেও পরিচিত ছিলেন।

তিনি বলেন, পুলিশের ধারণা, আধিপত্য বিস্তার ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে নুর হাবিবকে হত্যা করা হতে পারে।

নুর হাবিব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুষ্কৃতিকারীদেরকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয় এপিবিএন’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

এতে বলা হয়, শরণার্থী শিবিরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে এবং নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

“রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার ও দুষ্কৃতকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে বিরাজমান দীর্ঘ দিনের বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে,” বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বেনারকে বলেন, নুর হাবিবকে গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার বুকের বাঁ পাশে ও পিঠে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ছাড়া মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের দাগ রয়েছে।

রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে একের পর এক সহিংসতার ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো প্রতিনিয়ত নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছে। তারা শিবিরের স্বেচ্ছাসেবক এবং মাঝিদের নানা সময়ে টার্গেট করেছে।”

শরণার্থী শিবিরের পরিস্থিতিকে অশান্ত করে তুলতে নানা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনেরও ইন্ধন থাকতে পারে দাবি করে তিনি বলেন, “কারা এর পেছনে রয়েছে, আরসা, আরএসও এদেরকে কারা ইন্ধন দিচ্ছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।”

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শরণার্থী শিবিরগুলোতে আরসা ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনসহ (আরএসও) ১১টিসক্রিয় সশস্ত্র দুর্বৃত্ত দল সক্রিয় রয়েছে।

ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সশস্ত্র দলগুলোর মধ্যে আরসার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বেশিরভাগ ক্যাম্পে।

প্রতিবেদন মতে শিবির এলাকায় “আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র সশস্ত্র দলগুলো “প্রায়ই মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।”

২০২১ সালে ও ২০২২ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ৬৪টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১সালে ২২টি এবং ২০২২ সালে ৪২টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে।

আরসার উপস্থিতি ও তাদের সন্দেহভাজন কার্যক্রম নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করেছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনটিতে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।