আর কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেবে না বাংলাদেশ

জেসমিন পাপড়ি
2019.03.08
ঢাকা
190308-BG-Rohingya-1000.jpg উখিয়ার বালুখালি শরণার্থী শিবিরের সামনে কয়েকজন রোহিঙ্গা শিশু। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
[এএফপি]

বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত না নেওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছে নতুন করে আর কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হবে না। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকেও এ বিষয়টি জানানো হয়েছে।

“আমরা আর কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেবো না। বিশ্বে আরো ১৯২টি দেশ আছে। তারাও কিছু রোহিঙ্গা আশ্রয় দিক, শুধু আমরাই কেন আশ্রয় দেবো?,” শুক্রবার বেনারকে বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।

মন্ত্রী বলেন, আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পেছনে প্রতি মাসে প্রায় তিনশ মিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে । শুধু ভাসানচর তাদের বসবাস উপযোগী করতে আড়াই হাজার কোটি টাকার মতো খরচ হচ্ছে।”

সরকারের পক্ষ থেকে মাসে তিনশ মিলিয়ন ডলার খরচের তথ্য মন্ত্রী জানালেও এতে দাতা দেশ বা সংস্থাগুলো কে কতটা দিচ্ছে তা জানা যায়নি।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বেনারকে বলেন, “খরচের পরিমাণ এবং হিসাব এ মুহূর্তে আমার কাছে নেই। বিষয়টা পরে জানানো সম্ভব হবে।"

বর্তমানে আর কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে না বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে নতুন করে রাখাইনে সহিংসতা শুরু হলে বাংলাদেশের অবস্থান কী হবে- সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, “এমন পরিস্থিতির কথা ভাবতেও চাই না। আমরা চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওরা চলে যাবে, ওদের নেওয়ার ব্যাবস্থা হবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”

এদিকে এখন আর কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না জানিয়ে টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল আছাদুদ-জামান চৌধুরী বেনারকে বলেন, “সীমান্তে বিজিবি সর্তক অবস্থানে রয়েছে। নতুন করে সীমান্ত দিয়ে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।"

“নিজের দেশে না গিয়ে তারা এখানে কষ্ট করবে কেন? আমরা তাদের ভালো রাখতে সব চেষ্টা করেছি। এখন তাদের দেখভাল করা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে,” মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বাংলাদেশের এই অবস্থানকে অবশ্য কূটনৈতিক কৌশল বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষক এবং মানবাধিকার কর্মীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বেনারকে বলেন, “মূলতঃ এর মাধ্যমে একটা বার্তা যাবে যে, বাংলাদেশের ওপর যে চাপটা দেওয়া হয়েছে তা ভয়াবহ। নতুন করে রোহিঙ্গাদের চাপ নেওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। নতুন কোনো পরিস্থিতি হলে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে অন্যদের এগিয়ে আসতে হবে।”

মানবাধিকার কর্মী নূর খান বেনারকে বলেন, “১১ লাখ রোহিঙ্গা আসার কারণে সামাজিকভাবে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে কক্সবাজার এলাকায় ডেমোগ্রাফিক্যাল চেঞ্জ হচ্ছে।”

“এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের তরফ থেকে এমন বক্তব্য আসাটা স্বাভাবিক। তবে এটা কৌশলগত বক্তব্য। নৈতিক ও মানবিক অবস্থান থেকে এই বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, ইতিমধ্যে আমরা ১০-১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় দিয়েছি।”

এ বিষয়ে কথা হয় কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি-২ ব্লকে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শাহজাহান মিয়ার সাথে। তিনি বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য দেওয়ার কথা সংবাদমাধ্যমে জানতে পেরেছি। এ বিষয়টা স্বাভাবিক। আমরা অনেকে বেশি মানুষ এখানে আশ্রয় নিয়েছি। এ দেশের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।”

“আমরাও নিজ দেশে ফিরতে চাই। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব দেওয়াসহ যেসব হত্যা, ধর্ষণ এবং লুটের ঘটনা ঘটেছে সেসবের বিচার করতে হবে। তাহলেই আমরা ফিরে যাব,” বলেন শাহজাহান।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা নতুন কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আর আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয় বলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে কাউন্সিলকে জানাচ্ছি যে, মিয়ানমারের নতুন কোনো রোহিঙ্গাকে আর আশ্রয় দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই বাংলাদেশ।"

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রাখেনি জানিয়ে শহীদুল হক বলেন, “যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিতে বাস্তবসম্মত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। এ ছাড়া মিয়ানমার পরিস্থিতিরও কোনো উন্নতি হয়নি।”

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে এ পর্যন্ত সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে থেকে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা এদেশে বসবাস করত।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।