কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আরসা কমান্ডার নিহত
2023.04.11
কক্সবাজার ও ঢাকা

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বন্দুকযুদ্ধে সন্দেহভাজন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) এক কমান্ডার গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।
সংস্থাটি জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে উখিয়ার ১৯ নম্বর ক্যাম্পে আরসার সশস্ত্র সদস্যদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ এই ঘটনা ঘটে। এ সময় আরসা কমান্ডার আব্দুল মজিদ ওরফে লালাইয়া (৩২) নামে এক রোহিঙ্গা নিহত হন।
এই ঘটনায় তিন আরসার সদস্যকে আটক করার কথা জানিয়েছে এপিবিএন।
৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া কর্মকর্তা) মো. ফারুক আহমেদ জানান, মঙ্গলবার ভোরে একদল সশস্ত্র আরসা সদস্য উখিয়ার ১৯ নম্বর ক্যাম্পে অবস্থান করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে ঘোনারপাড়া পুলিশের ২০-২৫ জনের একটি দল অভিযান পরিচালনা করে।
“সে সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আরসা সন্ত্রাসীরা গুলি করে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়,” জানান ফারুক।
মজিদ ১৩ নম্বর তানজিমারখোলা ক্যাম্পের নুরুল আমিনের ছেলে। মজিদের ঘরে তল্লাশি চালিয়ে আরসার তিন সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
ফারুক আরও বলেন, এ সময় একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
আটক আরসা সদস্যরা হলেন; মোহাম্মদ তাহের (৪৫), জামাল হোসেন (২০) ও লিয়াকত আলী (২৫)।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, এই ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। হামলাকারীদের ধরতে পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে।
‘সারাক্ষণ ভয়ে আছি’
১৯ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. ইলিয়াছ বেনারকে বলেন, “মাজেদ ক্যাম্পে আরসা কমান্ডার হিসেবে পরিচিত ছিল। তাই ক্যাম্পের লোকজন তাকে ভয় পেত।”
এ প্রসঙ্গে উখিয়া শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা নুর হোসেন বেনারকে বলেন, “আমরা নিজেদের জীবন বাঁচাতে দেশ ছেড়ে এখানে এসেছি। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, আমাদের ভাগ্যের খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। এখানেও আমরা সারাক্ষণ ভয়ে আছি।”
“ক্যাম্পে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান জোরদার থাকলে কিছুটা শান্ত থাকে। অভিযান বন্ধ হলে ফের ওইসব সশস্ত্র গ্রুপের তৎপরতা বাড়ে। কিন্তু ক্যাম্পে সাধারণ রোহিঙ্গারা অসহায়,” বলেন নুর হোসেন।
ক্যাম্পের মুদি দোকানি মো. হারুন বেনারকে বলেন, “সূর্য ডোবার আগেই আমি আমার দোকান বন্ধ করে ঘরে ফিরে যাই। সন্ধ্যা নেমে আসার পর অপরাধী দলগুলো টহলে বের হয় এবং ক্যাম্প একটি ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। অনেক সময় দোকানপাট খোলা থাকলে মারধর করে।”
কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২৯টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে (এপ্রিল) এ পর্যন্ত ২৪টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ৮ এপিবিএন-এর আওতাধীন এলাকায় ১১টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
টার্গেট কমিউনিটি নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে প্রতিনিয়ত হত্যাকাণ্ড বাড়তে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান সম্প্রতি বেনারকে বলেন, “শরণার্থী শিবিরগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ রাখা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।”
তিনি বলেন, “সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো বেছে বেছে ক্যাম্পের নেতা বা মাঝি ও স্বেচ্ছাসেবকদের খুন করছে। কারণ তারা এইসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাজে বাধা।”
এই বিষয়ে ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) ফারুক বলেন, “বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প উৎখাত হওয়ার পর থেকে সেখানে থাকা সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ খুঁজেছে। এর ফলে নিজেদের মধ্যে সংঘাত বাড়ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আরসা ছাড়াও ক্যাম্পে আরও কয়েকটি অপরাধী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।”
“আমরা এসব অপরাধীদের ধরতে ক্যাম্পে ব্লক ভিত্তিক অভিযান পরিচালনা করছি। ইতোমধ্যে কিছু অস্ত্রধারী ধরাও পড়েছে,” বলেন ফারুক।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীর শুভেচ্ছা বিনিময়
এদিকে মঙ্গলবার কক্সবাজার ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান।
এ সময় তিনি ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সকালে বিজিবি মহাপরিচালক বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কিয়াও নাইং এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মহাপরিচালক।