ভূমিধসে রোহিঙ্গাদের প্রাণহানি হলে দায় নেবে না বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

জেসমিন পাপড়ি
2019.04.25
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
199425_FM_UN_1000.JPG আসন্ন বর্ষায় ভূমিধস ঠেকাতে কক্সবাজারের একটি শরণার্থী শিবিরে টিলার ঢালে বাঁধ তৈরি করছেন রোহিঙ্গারা। ৮ এপ্রিল ২০১৯।
[রয়টার্স]

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বৃহস্পতিবার বলেছেন, ভূমিধসে রোহিঙ্গারা যদি প্রাণ হারায় তবে বাংলাদেশ দায়ী থাকবে না। তাঁর মতে, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে বিরোধীতাকারীরাই এ জন্য দায়ী থাকবে।

বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ভূমিধসের আশঙ্কা থাকার প্রেক্ষাপটে এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ায় অবস্থিত ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করেছিল সরকার। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ করে ওই চরে আবাস তৈরি হলেও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সমালোচনার মুখে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর আপাতত স্থগিত রয়েছে।

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সংস্থার প্রধানেরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তাঁদের সঙ্গে বৈঠকের পরেই সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ড. মোমেন।

তিনি জানান, জাতিসংঘের তিন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাথে বৈঠকে এসব কথা জানানো হয়। এই তিন কর্মকর্তা হলেন জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার হাই কমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক অ্যান্টনিও ভিটোরিনো এবং জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক।

রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের জন্য বিকেলে কক্সবাজারে যান তারা। শুক্রবার কক্সবাজারে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার কথা রয়েছে তাঁদের।

বাংলাদেশের অবস্থান যৌক্তিক

ভাসানচর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানকে যৌক্তিক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে না। এটা করা তাদের উচিত হয়নি, হবে না।”

তিনি বলেন, “আমরা কেন নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকব? বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে।”

“আমরা জানি রোহিঙ্গারা অপরাধ প্রবণ। তাই তাদেরকে ভাসানচরে নেওয়া নিরাপদ। এ বিষয়ে কারো কোনো বাধা মেনে নেওয়া ঠিক হবে না,” বলেন অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান।

তিনি বলেন, “সবচেয়ে বড় কথা এরা মিয়ানমারের নাগরিক। তাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে। আর এ বিষয়ে মিয়ানমারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। জাতিসংঘের কার্যক্রমগুলোও সেই কেন্দ্রিক হওয়াটাই ভালো।”

বৈঠকের পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা বলেছি, আমরা কিছু লোককে ভাসানচরে নিয়ে যেতে চাই। কারণ আগামী বর্ষা মৌসুমে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হবে। এ সময় ভূমিধসে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।”

“আর প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে আমরা দায়ী থাকব না। যারা বাধা দিচ্ছে তারা এর জন্য দায়ী থাকবে,” বলেন ড. মোমেন।

“আমরা জোর করে কাউকে ভাসানচরে নেব না। তবে যারা যাবে তাদের জন্য একটি ভালো অবস্থান হবে,” বলেন তিনি।

বাংলাদেশের শরণার্থী প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম আজাদ বেনারকে বলেন, “ভাসানচর রোহিঙ্গাদের নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে কবে রোহিঙ্গাদের নেওয়া হবে সে বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।”

কিছুদিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর শুরু করবে না সরকার।

লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা আবদুর রশিদ বেনারকে বলেন, “কিছুদিন পরেই বর্ষা মৌসুম শুরু হবে। পাহাড় কেটে বসতি গড়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই এবার ভুমিধসের হুমকি বেশি। সেই ভয় রোহিঙ্গাদের মাঝে আছে। তবু তারা ভাসানচরে যেতে চায় না।”

“কারণ, ভাসানচর আরো বিপদজনক বলেই আমরা শুনেছি,” বলেন তিনি।

মিয়ানমারে কাজ বাড়ানোর তাগিদ

জাতিসংঘের তিন সংস্থার প্রধানকে বাংলাদেশে নয় বরং মিয়ানমারে কাজ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি বেশ শক্তভাবে বলেছি আপনাদের এখানে কাজ নেই, মিয়ানমারে যান।”

“আমি জিজ্ঞাসা করেছি আপনারা কতবার সেখানে (মিয়ানমারে) গিয়েছেন, সেখানে আপনাদের কত লোক কাজ করে। এখানে এক হাজারের বেশি লোক কাজ করে। ওখানে বেশি কাজ করেন, এখান থেকে বিদায় হোন,” বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে এবং একটি সহায়ক পরিবশে তৈরি করতে মিয়ানমার যাতে রাজি হয় সে ব্যবস্থা করতে ওই তিন সংস্থার প্রধানকে তাগিদ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

উগ্রবাদ সৃষ্টির শঙ্কা

রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে রোহিঙ্গা যুবকরা উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে বলেও জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমি বলেছি, এখানে উগ্রবাদ হলে গোটা অঞ্চলের জন্য খারাপ হবে। আর সেটা হলে মিয়ানমারের দুঃখ আছে। চীনের যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের আশা করছে তাও সফল হবে না।”

বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চায় এবং কোনো ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে চায় না বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ড. মোমেন বলেন, “সমস্যা মিয়ানমার তৈরি করেছে, সমাধানও তাদের করতে হবে। আমরা যুদ্ধ করব না, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চাই।”

মিয়ানমারের সাথে যুক্ত থাকার আশ্বাস

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের আগে ইউএনএইচসিআর প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন তাঁরা।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে বলে মনে করেন জাতিসংঘের আরেক কর্মকর্তা মার্ক লোকক।

সংকটের উৎস যেহেতু মিয়ানমারে, সেখানেই সমস্যার সমাধানের জন্য জাতিসংঘের প্রয়াস চলতে থাকবে বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।