মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়োগের অভিযোগ
2024.05.09
মিয়ানমারের মুসলিম বিদ্রোহীরা বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির থেকে প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গাকে তাদের মাতৃভূমিতে গিয়ে চলমান যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য বল প্রয়োগ করেছে।
শরণার্থীরা বেনার নিউজের সহযোগী সংবাদ সংস্থা রেডিও ফ্রি এশিয়াকে (আরএফএ) বলেছেন, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) সদস্যরা শিবির থেকে ছেলেদের সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য নিয়ে গেছে।
তবে আরএফএ বিদ্রোহী সংগঠনগুলো বা বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেনি।
রাখাইন রাজ্যেও তীব্র সংঘাতের সূত্রপাত হতে পারে। সেখানে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী নির্যাতিত রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদেরকে আরাকান আর্মির (এএ) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করার জন্য জোর করছে।
এএ মিয়ানমারের সবচেয়ে শক্তিশালী বিদ্রোহী বাহিনীর একটি, যেটি মূলত রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগত রাখাইন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিয়ে গঠিত।
নিরাপত্তার ভয়ে পরিচয় প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী আরএফএকে বলেছেন, “সবাই ক্যাম্প থেকে পালাচ্ছে।”
“১৮ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের ধরে বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর কাছে বিক্রি করা হচ্ছে…বলা হয় যুদ্ধে শক্তিবৃদ্ধি করার জন্য তাদেরকে বার্মার দিকে পাঠানো হচ্ছে কিন্তু আমি জানি না তাঁরা কার বিরুদ্ধে লড়াই করছে,” বলেন তিনি।
গত ২৯ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত ক্যাম্পে যেসব শরণার্থীকে আটক করা হয়েছিল, তাঁদের অধিকাংশ ১৪ থেকে ৩০ বছর বয়সী।
প্রতিটি পরিবার থেকে গড়ে প্রায় একজন যুবককে ধরে নিয়ে গেছে, বলে জানিয়েছেন একজন শরণার্থী। তাঁর অভিযোগ, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ অপহরণ বন্ধ করতে কিছুই করছে না।
আরসা ২০১৭ সালে মিয়ানমারের কয়েকটি সীমান্ত চৌকিতে আক্রমণ করেছিল। তার ফলশ্রুতিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সে সময় নিরীহ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক দমন অভিযান শুরু করে। প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন।
সেই সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে রাখাইনে স্বশাসনের দাবিদার বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির শক্তি বেড়েছে। এখন এটি মিয়ানমারের অন্যতম প্রধান সংগঠন যারা সামরিক শাসনের অবসান ঘটাতে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
দল ভারী করার জন্য যুবকদের ধরে নিয়ে যেতে যে দুটি সংগঠনের লোকরা এসেছিল তাদের সম্পর্কে আরেকজন শরণার্থী বলেছেন, "এগুলো সন্ত্রাসী সংগঠন। এমনকি ১২ বছর বয়সী শিশুদেরও তারা ধরে নিয়ে গেছে।”
জান্তা সেনাবাহিনী এবং আরাকান বিদ্রোহীদের যুদ্ধের কারণে মিয়ানমারে বসবাসকারী রোহিঙ্গা গ্রামবাসীরা এখনো ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
নভেম্বরে আরাকান আর্মি সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ জোরদার করার পর থেকে সরকার এবং বিদ্রোহী উভয়পক্ষই রাখাইন রাজ্যে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জোর করে তাদের বাহিনীতে নিয়োগ এবং হত্যার অভিযোগ এনেছে।
এর আগে বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানোর অভিযোগ রয়েছে আরসার বিরুদ্ধে। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি রাখাইনের হিন্দু অধিবাসীদের ওপর ধর্মভিত্তিক সহিংসতা চালিয়ে গণহত্যা করেছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জাতিসংঘের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ১০ লাখ শরণার্থী বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার শিবিরে বসবাস করছে।
* অনুবাদক আরএফএ বার্মিজ। সম্পাদনা করেছেন, কিয়ানা ডানকান এবং মাইক ফির্ন।