রাখাইনে প্রায় একশো হিন্দুকে হত্যা করেছে আরসা: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

বিশেষ প্রতিবেদন
2018.05.24
রাখাইনের ইয়েবাও খিয়া গ্রামের গণকবরে স্থানীয় হিন্দুদের মৃতদেহ উদ্ধারের পর স্বজনদের আহাজারি। রাখাইনের ইয়েবাও খিয়া গ্রামের গণকবরে স্থানীয় হিন্দুদের মৃতদেহ উদ্ধারের পর স্বজনদের আহাজারি। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭।
RFA

গত বছর আগস্টে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার দিন প্রায় একশো জন স্থানীয় হিন্দুকে হত্যা করেছে বলে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

নিরাপত্তা চৌকিতে রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হামলার প্রতিক্রিয়ায় দেশটির সেনাবাহিনীর ব্যাপক অভিযানের মুখে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের এসে আশ্রয় নেয়।

রাখাইনের দুটি গ্রামে আরসা নারী ও শিশুসহ হিন্দুদের হত্যা করে বলে উত্তর রাখাইন ও বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দু রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার এবং ছবির প্রমাণের ভিত্তিতে জানায় ওই প্রতিবেদন।

এ প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্রাইসিস রেসপন্স ডিরেক্টর তিরানা হাসান বলেন, “আমরা যে সকল ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলেছি, তাতে নিশ্চিত যে আরসার নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।”

তিনি বলেন, “মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এই সহিংসতার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।”

প্রতিবেদনটির মতে, গত বছর আগস্টের ২৫ তারিখ আরসা রাখাইনের খা মং সেইক গ্রামে ৫৩ জন হিন্দুকে হত্যা করে। ওই দিন আরসা মিয়ানমার পুলিশের ৩০টি চৌকিতে আক্রমণ চালায়।

একই দিন পার্শ্ববর্তী ইয়েবাও খিয়া গ্রামের ৪৬ জন হিন্দুকে অপহরণ করা হয়, যাদের সকলকেই পরবর্তীতে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা।

গত বছর সেপ্টেম্বরে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয় হিন্দুরা চারটি গণকবরে ৪৫ জন হিন্দুর দেহাবশেষ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে মৃতদেহগুলো খা মং সেইক গ্রামের বাসিন্দা অথবা আক্রমণের সময় ওই গ্রামে থাকা হিন্দুদের মহরদেহ বলে চিহ্নিত করা হয়।

ওই গ্রামে হত্যার শিকার হওয়া বাকি আটজনের মৃতদেহের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে জানায় প্রতিবেদনটি।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এই প্রতিবেদনটি মংডুর মিও থু গিই গ্রামে ছয়জন হিন্দুকে হত্যা ও স্থানীয় আদিবাসীদের ওপর আক্রমণে আরসার সম্পৃক্ততার কথাও জানায়।

তবে আরসা এসব হত্যার দায় অস্বীকার করে এই হত্যাকাণ্ডগুলো স্থানীয় রাখাইনদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে।

সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে

রাখাইনের স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা ও সমাজকর্মী নির্মল, যিনি হিন্দুদের গণকবর উদঘাটনের কথা প্রথম জনসমক্ষে আনেন, তিনি ওই দুই গ্রামে আরসার হত্যাকাণ্ডের শিকার হিন্দুদের মোট সংখ্যা ১২২ বলে দাবি করেন।

নির্মল বেনারনিউজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রেডিও ফ্রি এশিয়ার মিয়ানমার সার্ভিসকে বলেন, “আমি সরকারি লোকজনকে মৃতদেহগুলো খুঁজে বের করতে সাহায্য করেছি। এছাড়া কতজনকে হত্যা করা হয়েছে বা কতজন নিখোঁজ এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদনও দিয়েছি। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো সাড়া পাইনি।”

“এখন আমরা জানি না যে আরসা এইসব লোকজনের সাথে যা করেছে তা জানার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী করবে,” যোগ করেন নির্মল।

দেরিতে হলেও ইতিবাচক

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দেশটি অব্যাহতভাবে অস্বীকার করে আসলেও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নতুন এই প্রতিবেদনটিকে স্বাগত জানিয়েছে তারা।

“অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এই প্রতিবেদনটি এমন কিছু খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ তুলে ধরেছে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে ভাবা উচিত।” রেডিও ফ্রি এশিয়াকে বলেন মিয়ানমারের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইয়ান মিও থেইন।

এদিকে প্রতিবেদনটি দেরিতে প্রকাশিত হলেও তা গুরুত্বপূর্ণ বলে রেডিও ফ্রি এশিয়ার কাছে মন্তব্য করেন মিয়ানমারের সাবেক তথ্যমন্ত্রী ইয়ে থু।

তিনি বলেন, “যদিও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনটি বহু দেরিতে প্রকাশিত হয়েছে, তবুও ভালো যে এটি রাখাইন সংকটের অবহেলিত একটি অংশ তুলে ধরেছে।”

“আমরা এটিকে একটি ভালো সূচনা বলতে পারি,” যোগ করেন তিনি।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সদস্যরা রাখাইন সফরের সময় কর্তৃপক্ষ আরসার হামলার ঘটনা তাঁদেরকে জানিয়েছেন বলে জানান ইয়ে থু।

“এবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ওই অভিযোগের সাথে একমত পোষণ করল। এখন এই বিষয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে আরো ভালো করে যোগাযোগ করতে পারবে,” যোগ করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।