জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা প্রধান: ইউক্রেন যুদ্ধ রোহিঙ্গা সহায়তা তহবিলে টান ফেলতে পারে

আহম্মদ ফয়েজ
2022.05.25
ঢাকা
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা প্রধান: ইউক্রেন যুদ্ধ রোহিঙ্গা সহায়তা তহবিলে টান ফেলতে পারে কক্সবাজারের কুতুপালং শিবির পরিদর্শনে বাংলাদেশ সফররত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি। ২২ মে ২০২২।
[সৌজন্যে: ইউএনএইচসিআর]

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সহায়তা তহবিলে সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে আশংকা করছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি। রোহিঙ্গাদের কথা ভুলে না যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশে পাঁচদিন সফরের শেষ দিন বুধবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়ে গ্র্যান্ডি বলেন, “আমি একটু চিন্তিত... এখন ইউক্রেন, আফগানিস্তান এবং অন্যান্য অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক সংকটকে আমাদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

সফরকালে গ্র্যান্ডি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী, কক্সবাজার ও ভাসানচর দ্বীপের রোহিঙ্গা শরণার্থী, ইউএনএইচসিআরের দাতা ও স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভাসানচর দ্বীপের জন্য নতুন অর্থায়ন প্রয়োজন। এই দ্বীপটিতে ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে প্রায় ২৬ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে স্থানান্তরিত হয়েছে।

আমি এখানে এসেছি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মনে করিয়ে দিতে যে, সংকট শুধু ইউক্রেন বা নতুন ক্ষেত্রগুলোতে নয়। পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশ (রোহিঙ্গাদের) দায়িত্ব বহন করে আসছে এবং এই ক্ষেত্রটাতে সহায়তা কমতে পারে না। আমি এটা মেনে নিতে পারি না। আমি দাতাদের ওপর সর্বোচ্চ দাবি রাখতে চাই,” বলেন গ্র্যান্ডি।

তিনি বলেন, দুনিয়া অবগত আছে যে ইউক্রেন পরিস্থিতির ফলে একটি ভিন্ন রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সবাইকে যেতে হচ্ছে এবং এর প্রভাব প্রান্তিক পর্যায় ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

এই যুদ্ধ জাতিসংঘের এই সংস্থাটির ওপর অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা তৈরি করছে বলে জানান তিনি।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, “আমরা কুতুপালং ক্যাম্পের জন্য তরল গ্যাস কিনি। সেই দাম অনেক বেড়েছে এবং এটি (রাশিয়-ইউক্রেন যুদ্ধ) সংকটের প্রত্যক্ষ প্রভাব।

ইউক্রেন যুদ্ধের পরে বিশ্বজুড়ে উদ্বাস্তু এবং বাস্তুচ্যুতদের সংখ্যা ১০ কোটিতে পৌঁছেছে জানিয়ে তিনি বলেন, দাতাদের এই বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনায় নেয়া উচিত।

সংকটরে সমাধান মিয়ানমারে

বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সংকটরে সমাধান মিয়ানমারের কাছেই রয়েছে বলে মন্তব্য করেন গ্র্যান্ডি।

তিনি বলেন, “আমি যেসব রোহিঙ্গা শরণার্থীর সাথে দেখা করেছি তাঁরা নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

তাঁর মতে, রোহিঙ্গাদের বসতবাড়ি থেকে বিতাড়নের মূল কারণ নিয়ে বিশ্বকে ভাবতে হবে এবং নিজ ভূমিতে ফেরায় তাঁদের স্বপ্নকে বাস্তব করে তুলতে হবে।

বর্তমানে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতি ও দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে অস্থিতিশীল অবস্থায় রোহিঙ্গাদের অর্থায়ন আগের মতো দাতাদের অগ্রাধিকার পাবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে গ্র্যান্ডি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য অর্থায়ন আগের চেয়ে আরও কঠিন হবে।

তিনি বলেন, “আমি মনে করি সরকার এটা জানে, আমরা সেটা জানি এবং দাতারাও সেটা জানে।"

আমার আহ্বান থাকবে, ভারতসহ অন্যান্য দেশে যেসব রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন, সেসব দেশ যেন তাঁদের প্রতি সদয় হয়। রোহিঙ্গারা মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশেও আশ্রয় নিয়েছেন। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো দেশেরই তুলনা করা যায় না,” বলেন গ্র্যান্ডি।

এদিকে, বুধবার গ্র্যান্ডির সাথে এক বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে মিয়ানমারে তৎপরতা বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দেন।

কক্সবাজারের শিবিরে রোহিঙ্গা ইয়ুথ এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা কিন মং বেনারকে বলেন, “ক্যাম্প পরিদর্শনকালে জাতিসংঘের হাইকমিশনারকে রোহিঙ্গারা তাঁদের নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা ও বাড়িঘর ফিরে পাওয়ার নিশ্চয়তা পেলে মিয়ানমারের ফিরে যাওয়ার আগ্রহ জানিয়েছে।

কিন বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ইউএনএইচসিআর আরো বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবে বলে মনে করেন সাধারণ রোহিঙ্গারা।

এটি আসল রোহিঙ্গাদের দেশ নয়, মিয়ানমার আমাদের জন্মভূমি। সে দেশে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা ভালো নেই,” যোগ করেন তিনি।

আশান্বিত ভাসানচরের রোহিঙ্গারাও

গ্র্যান্ডির সফর আশান্বিত করেছে ভাসানচরের রোহিঙ্গাদেরও। ভাসানচরের বসবাসকারী রোহিঙ্গা নেতা মো. সোহেল বেনারকে বলেন, “এই সফরের ফলে আমরা মনে করি ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জীবন মান আরো উন্নত হবে।

মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হলে ভাসানচর দ্বীপ থেকে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতাও কমে আসবে বলে মন্তব্য করেন সোহেল।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক নিপীড়ন ও সহিংসতার শিকার হয়ে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন, যাকে জাতিসংঘ জাতিগত নির্মূল এবং সম্ভাব্য গণহত্যা বলে অভিহিত করে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের উপর এই নির্যাতনকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারও গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কক্সবাজার থেকে করেছেন আবদুর রহমান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।