মিয়ানমার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগের শুনানি করছে আর্জেন্টিনার আদালত

কার্লোস জি হ্যামান
2023.06.07
ওয়াশিংটন ডিসি
মিয়ানমার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগের শুনানি করছে আর্জেন্টিনার আদালত বুয়েনস আয়ার্সের ফেডারেল আদালতের বাইরে লন্ডন ভিত্তিক রোহিঙ্গা সংগঠন বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশনের সভাপতি টুন খিন (বামে) ও আর্জেন্টাইন মানবাধিকার আইনজীবী টমাস ওয়েজা কুইতানা। ১৬ ডিসেম্বর ২০২১।
[এএফপি]

আপডেট: ৭ জুন ২০২৩। ইস্টার্ন সময় রাত ১১:০৪

মিয়ানমারের সিনিয়র কর্মকর্তাদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগের শুনানি করছে আর্জেন্টিনার একটি আদালত।

আর্জেন্টাইন সংবিধানের ‘সার্বজনীন ন্যায়বিচার’ নীতির আওতায় যেকোনো দেশে সংগঠিত গুরুতর অপরাধের বিচার করার সুযোগ রয়েছে। এই নীতির আওতাতেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত নিপীড়নের শুনানি হচ্ছে।

লন্ডন ভিত্তিক রোহিঙ্গা সংগঠন বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশনের সভাপতি টুন খিন এই ঘটনাটিকে “ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য একটি ঐতিহাসিক লড়াই” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর সংগঠনই বুয়েনস আয়ার্সের আদালতে এই অভিযোগটি দায়ের করে ২০১৯ সালে । 

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ২০১২ ও ২০১৮ সালে সংগঠিত অপরাধের বিবরণ নিয়ে ৪৬ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র তৈরি করা হয়েছে। ওইসব নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছাড়তে বাধ্য হন, যাদের বেশিরভাগই বর্তমানে বাংলাদেশের ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন।

অভিযোগপত্রে তাতমাদো নামে পরিচিত মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং তাদের বেসামরিক সহযোগীদের দ্বারা সংগঠিত রোহিঙ্গাদের ধর্ষণ, শিরচ্ছেদ এবং হত্যার বিবরণ রয়েছে।

রোহিঙ্গা নারী এবং শিশুদের ওপর সংগঠিত গণধর্ষণ এবং সম্পূর্ণভাবে রোহিঙ্গা বসতি ধ্বংস করার তথ্যও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এই অভিযোগপত্রে।

BUR_Rohingya-Argentina_02.jpg
মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে আশ্রয়ের আশায় কক্সবাজারে প্রবেশ করছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। ১৯ অক্টোবর ২০১৭। [এপি]

উদ্দেশ্য: আটক ও বিচার 

অভিযোগপত্রে, অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করার আহবান জানানো হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনবোধে অপরাধীদের গ্রেপ্তার কিংবা তাদের আটক করে তৃতীয় কোনো দেশে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

“এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হচ্ছে ((অভিযুক্ত) কাউকে না কাউকে আটক করে বিচারের মুখোমুখি করা। এর মাধ্যমে জবাবদিহিতা ও সত্য উদঘাটনের একটি বড়ো ক্ষেত্র তৈরি হবে,” বলেন নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা গ্লোবাল জাস্টিস সেন্টারের প্রধান আকিলা রাধাকিষণ।

তবে এই জাতীয় মামলার নিষ্পত্তি হতে কয়েক দশক পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

উদাহরণ হিসেব তিনি জানান, ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডা গণহত্যার দায়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিযুক্ত এক পলাতককে মাত্র চলতি বছরের মে মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে জাতিসংঘের ক্রিমিনাল ট্রাইবুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল।

সংশ্লিষ্টদের মতে, মিয়ানমারের অভিযুক্তদের নামে জারি হওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং তাঁদের প্রতি গণঘৃণা তাঁদের যাতায়াতকে যেমন নিয়ন্ত্রিত করবে তেমনি বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও অন্যদের এরকম মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে বিরত রাখবে।

প্রসিকিউটর গুইলারমো মারিজুয়ান এখনো অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ সংগ্রহের পর্যায়ে রয়েছেন।

আদালতে সাক্ষ্য ছাড়াও অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে ২০১৭-১৯ সালে জাতিসংঘের সহায়তায় মিয়ানমারের স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন দ্বারা মিয়ানমার ও বাংলাদেশে নেয়া কয়েক হাজার রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত বিবরণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী ও সামরিক সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইয়াং। দুবছর আগে জেনারেল মিন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। 

অভিযুক্ত অন্যদের মধ্যে রয়েছেন মিয়ানমারের পুলিশ ও সীমান্তরক্ষা বাহিনীর কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা এবং অশিন উইরাথুসহ কয়েকজন উগ্র বৌদ্ধ মংক।

দুবছর আগে ক্ষমতাচ্যুত মিয়ানমারের বেসামরিক সরকারের সাবেক প্রধান অং সান সুচিকেও ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত সংগঠিত গণহত্যায় সমর্থন দোর জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। সুচি বর্তমানে মিয়ানমারে দীর্ঘ মেয়াদে কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

BUR_Rohingya-Argentina_03.jpg
কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ নেবার জন্য রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভিড়। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭। [এপি]

সাক্ষীদের পরিচয় গোপন

মিয়ানমারে সামরিক সরকারের এজেন্টদের কাছ থেকে প্রতিশোধমূলক আক্রমণের আশঙ্কায় আর্জেন্টিনার আদালতে এই শুনানিতে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। গোপনীয়তা রক্ষার্থে রুদ্ধদ্বার অবস্থাতে আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। 

নিজেদের ভূখণ্ডের বাইরে ঘটা অপরাধের জন্য এর আগেও আর্জেন্টিনার আদালতে মামলার ঘটনা ঘটেছে।

এর মধ্যে রয়েছে ২০১০ সালে দায়ের এক মামলায় ১৯৩৯ থেকে ১৯৭৫ সালের ভেতর ফ্যাসিস্ট শাসক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর আমলে স্পেনে ঘটে যাওয়া অপরাধ, ২০১৪ সালের এক মামলায় গাজা উপত্যকায় ইজরায়েলি কর্তৃপক্ষ দ্বারা সংগঠিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং ২০১৮ সালে দায়ের সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে একটি মামলায় ইয়েমেনে মানবতার বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের অভিযোগ।

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদটি আপডেট করা হয়েছে।

 

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।