ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে ভাসমান নৌকায় ৯৪ রোহিঙ্গা উদ্ধার

রিনা খাদিজাহ ও রনা নির্মলা
2020.06.24
জাকার্তা
200624_ID_Rohingya_1000.jpg সমুদ্র থেকে শিশুসহ প্রায় এক শ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে নিজেদের মাছধরা নৌকায় নিয়ে আসেন ইন্দোনেশিয়ার জেলেরা। ২৪ জুন ২০২০।
[ছবি: এএফপি, সৌজন্যে ইন্দোনেশিয় নৌবাহিনী]

ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় আচেহ প্রদেশের জেলেরা সমুদ্রে ভাসমান একটি ভাঙাচোরা নৌকা থেকে ৯৪ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছেন বলে বুধবার জানিয়েছে দেশটির পুলিশ।

রোহিঙ্গাবাহী ওই নৌকাটিকে স্থানীয় জেলেরা সমুদ্রে বিপদগ্রস্ত অবস্থায় দেখে সোমবার রাতে উদ্ধার করে নিজেদের নৌকায় নিয়ে আসেন বলে জানান উত্তর আচেহ’র পুলিশ প্রধান ত্রি হাইদিয়ান্তো। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের নৌকাটি আচেহ’র উত্তরঞ্চলীয় উপকূলে ভেড়ার চেষ্টাকালে ভেঙে যায়।

হাইদিয়ান্তো বেনারকে জানান, “আজ পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন নৌকাটি উদ্ধারের স্থানে পৌঁছেছে, যেটি উপকূল থেকে চার নটিক্যাল মাইল (প্রায় সাড়ে সাত কিলোটিমটার) দূরে।”

এদিকে চলতি মাসের শুরুর দিকে মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় কেদাহ রাজ্যের লঙকাওয়ি দ্বীপে পৌঁছানো ২৬৯ রোহিঙ্গার অনেক সহযাত্রী রাস্তায় মারা গেছেন এবং তাঁদের মৃতদেহগুলো সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কোস্ট গার্ডের প্রধান।

বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার জেলেদের নৌকায় থাকা রোহিঙ্গাদের স্থানীয় সিয়ামতালিরা বায়ু মাছ বাজারের কাছে নিয়ে যাবার জন্য প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বেনারকে জানান আচেহ’র কমুনিটি নেতা মোহাম্মদ হাসান।

ওই মাছ বাজারের কাছে রোহিঙ্গাদের থাকার মতো ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান তিনি।

বার্তাসংস্থা এপি জানায়, উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা সবাই খুবই দুর্বল এবং ক্ষুধার্থ।

জেলেদের নৌকায় থাকা রোহিঙ্গাদের উদ্ধারের একটি ভিডিও ফুটেজ প্রচার করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এতে দেখা যায় উদ্ধারকারীরা মাছধরা নৌকাটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, একজনকে নৌকার রোহিঙ্গাদের ‘বার্মিজ লোক’ বলতেও শোনা যায়।

“আমরা শিশু ও নারীদের দেখতে পাচ্ছি। আমরা তাঁদের এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাব,” বলেন ভিডিওটির বর্ণনাকারী।

রোহিঙ্গাদের ওই দলটিতে মোট ১৫ জন পুরুষ, ৪৯ জন নারী ও ৩০টি শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

তবে নৌকাটি কোত্থেকে এসেছে এবং এর গন্তব্যস্থল কোথায় ছিল সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি।

এদিকে শরণার্থীদের সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয়দের ধন্যবাদ জানিয়েছেন আচেহ প্রদেশের মানবাধিকার সংস্থা গিউতানিও ফাউন্ডেশন এর মুখপাত্র লিলিয়েন ফান।

এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, “ডুবতে বসা নৌকা থেকে রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করে আচেহ’র জেলেরা আবারো আমাদের সত্যিকার মানবতার নিদর্শন দেখিয়েছেন।”

একই সাথে উদ্ধার করা রোহিঙ্গাদের খাবার সরবরাহ করার জন্য স্থানীয় জনগণকেও ধন্যবাদ জানান লিলিয়েন।

ওই রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধারকারী জেলেদের সাথে তাঁরা যোগাযোগ রাখছেন বলেও জানান তিনি।

সমুদ্রে মারা গেছেন অনেক রোহিঙ্গা

গত ৮ জুন ভোরে একটি ভাঙাচোরা নৌকায় করে ২৬৯ জন রোহিঙ্গা মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় কেদাহ রাজ্যের লঙকাওয়ি দ্বীপে ওঠার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে তাঁদের গ্রেপ্তার করে তীরে নিয়ে যান দেশটির কর্মকর্তারা।

এটিই গত দুই মাসে মালয়েশিয়া পৌছানো একমাত্র রোহিঙ্গা নৌকা।

এর দুই দিন পর মালয়েশিয়ার কোস্ট গার্ড প্রধান মোহাম্মদ জুবিল ম্যাট সম বেনারকে জানান, বেশ কয়েকবার মালয়েশিয়ার তীরে ভিড়তে ব্যর্থ হয়ে প্রায় ৩০০ রোহিঙ্গা নিয়ে আরো একটি নৌকা দক্ষিণ থাইল্যান্ডের কাছে সমুদ্রে ভাসছে।

তিনি জানান, ওই নৌকাটি প্রায় চার মাস ধরে সমুদ্রে রয়েছে।

বুধবার পুত্রজায়ায় ম্যাট সম সাংবাদিকদের জানান, প্রথমে প্রায় ৮০০ জন রোহিঙ্গা একটি বড়ো নৌকাতে করে রওয়ানা দিয়েছিলেন। পরে সেটি থেকে প্রায় ৩০০ রোহিঙ্গা দ্বিতীয় নৌকায় ওঠেন। এই দ্বিতীয় নৌকাটি ২৬৯ জনকে নিয়ে মালয়েশিয়া পৌঁছায়।

বাকি ৫০০ রোহিঙ্গা এখন কোথায় তা শনাক্ত করা যায়নি জানিয়ে ম্যাট সম বলেন, তীরে ভেড়া দ্বিতীয় নৌকার অনেকেই সমুদ্রেই মারা যান।

রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সহযাত্রীরা তাঁদের মরদেহ সাগরে ফেলে দেন। তবে সমুদ্রে কতজন রোহিঙ্গা মারা গেছেন সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানাননি ম্যাট সম।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর নিপীড়নমূলক অভিযানে ২০১৭ সালের অগাস্টের পর প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। এর আগে থেকেই আরো কয়েক লাখ রোহিঙ্গা রয়েছেন বাংলাদেশে।

বর্তমানে কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে থাকা এগারো লাখের বেশি রোহিঙ্গার অনেকেই উন্নত জীবনের আশায় অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাড়ি জমাতে চান।

এই সমুদ্র যাত্রায় অনেকে মালয়েশিয়া পৌঁছাতে পারলেও অনেকেরই মৃত্যু হয় পথে, অনেকেই মারা যান নৌকা ডুবিতে।

এদিকে বিদেশিদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কায় সম্প্রতি মালয়েশিয়া দেশটিতে কোনো রোহিঙ্গাকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। অনেক নৌকাকে তীরে ভিড়তে না দিয়ে আবার ফিরিয়ে দিচ্ছে সাগরে।

এর আগে গত ৫ এপ্রিল মালয়েশিয়ার লঙকাওয়ি দ্বীপে ২০২ জন রোহিঙ্গা নিয়ে একটি নৌকা পৌঁছেছিল। এরপর ১৬ এপ্রিল একটি নৌকা প্রায় ২০০ রোহিঙ্গাকে নিয়ে দেশটিতে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাঁদের আবার আন্তর্জাতিক জলসীমায় তাড়িয়ে দেয় মালয়েশিয়ার নৌবাহিনী।

তবে ওই পদক্ষেপের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলার দায়ে মালয়েশিয়ার কঠোর সমালোচনা করে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।

তার মাত্র একদিন আগে উপকূলীয় জলসীমা থেকে প্রায় ৪০০ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে বাংলাদেশ, যারা মালয়েশিয়ার তীরে ভিড়তে ব্যর্থ হয়ে প্রায় দুই মাস সমুদ্রে ভেসে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

দুই মাসের এই সমুদ্রযাত্রায় বেশ কয়েকজন যাত্রী মারা যান বলে তখন বেনারকে জানিয়েছিলেন ফিরে আসা যাত্রাীরা।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কুয়ালালামপুর থেকে নোয়া লি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।