ভোটার তালিকায় ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ’ ঠেকাতে বিশেষ ব্যবস্থা
2017.07.21
ঢাকা
আগামী ২৫ জুলাই থেকে সারা দেশে ভোটার তালিকার তথ্য হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। নতুন এই ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তথা বিদেশিদের অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।
এ লক্ষ্যে এবার ৩০টি বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব এলাকার ভোটার হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে নিজের পরিচয় নিশ্চিত করতে বাবা-মা, ফুফু, চাচার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। একটি বিশেষ কমিটি এই কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
নাগরিক সুবিধা পেতে রোহিঙ্গারা অর্থের বিনিময়ে বাংলাদেশের পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে থাকে এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে তাঁদের ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহারে অভিযোগও রয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। এমন অবস্থায় সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্লেষক ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “গত কয়েক দশক ধরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের অনেকেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব সনদ জোগাড় করে নিয়েছে। এতে বাংলাদেশে জনসংখ্যার চাপ আরও বেড়েছে। যা এখনো চলমান। তাই রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ঠেকাতে সরকারের এ উদ্যোগ যথাযথই বলতে হয়।”
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার সাবেক সাংসদ অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বেনারকে বলেন, “সরকারের এ উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। রোহিঙ্গারা টাকার বিনিময়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে বাংলাদেশি হয়ে যায়।”
বর্তমান উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এই সভাপতি বলেন, “স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বাররাও টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের জন্ম সনদ দিয়ে থাকে। ভোট পাওয়ার হিসেবও রয়েছে। তাই রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারে সেই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সততা ও দায়িত্ববান হিসেবে কাজ করার আহবান জানাচ্ছি।”
গত সোমবার (১৭ জুলাই) দুপুরে নির্বাচন কমিশনে ভোটার হালনাগাদকরণ ২০১৭ কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সব বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিনিধি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে ইসি সচিবালয়ের সচিব এম আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, আগামী ২৫ জুলাই থেকে সারা দেশে ভোটার তালিকার তথ্য হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। চলবে আগামী ৯ আগস্ট পর্যন্ত। এবার রোহিঙ্গা তথা বিদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে কমিশন বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছে।
“রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারেন, সে জন্য আগে ২০টি বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছিল। এবার তা বাড়িয়ে ৩০টি করা হয়েছে। কোনো বিদেশি নাগরিক যাতে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে না পারেন, এসব এলাকায় গঠিত বিশেষ কমিটির মাধ্যমে নজরদারি করা হবে,” বলেন তিনি।
এসব বিশেষ এলাকার ভোটার হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে তাঁর বাবা-মা, ফুফু, চাচার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হবে বলেও জানান ইসি সচিবালয়ের সচিব এম আবদুল্লাহ।
বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার চেষ্টার কথা স্বীকারও করেন অনেক রোহিঙ্গা। এর মূল কারণ এ দেশের নাগরিক সুবিধা পাওয়া।
অনিবন্ধিত মৌচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা রশিদ আহমেদ বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের ভোটার হয়েছে সে কথা পুরোপুরি মিথ্যা নয়। তবে ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায় না। কারণ, তারা কোনো না কোনো সুবিধা পায়। বেশির ভাগ গ্রামে থাকা রোহিঙ্গারা কোনো ধরনের সহায়তা না পেয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। যাতে এ দেশের নাগরিক সুবিধা পায়।”
তবে তাঁর আক্ষেপ “বাংলাদেশের জন্য বোঝা হওয়া সত্ত্বেও সরকার আমাদেরকে (রোহিঙ্গাদের) আশ্রয় দিয়ে দেখভাল করে যাচ্ছে। এরপরও কেন আমরা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে ভোটার হতে চেষ্টা করি আমি বুঝি না।”
কাজটি নেহাত অন্যায় বলেই মনে করেন তিনি।
এদিকে নির্বাচন কমিশন জানায়, ২০০০ সালের ১ জানুয়ারির আগে জন্মেও যারা এখনো ভোটার হতে পারেননি, তাঁরা এবার ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন। ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এবার ভোটার তালিকায় প্রায় ৫০ লাখ নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সচিব এম আবদুল্লাহ বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সাত পর্যায়ে সাত ধরনের কমিটি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটি, বিভাগীয় কমিটি, জেলা, উপজেলা, বিশেষ এলাকার জন্য আলাদা কমিটি, সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য কমিটি, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার জন্য কমিটি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কক্সবাজার থেকে আব্দুর রহমান।