শরণার্থী ক্যাম্পে যুবলীগ নেতা হত্যা: আরো এক রোহিঙ্গা নিহত

আবদুর রহমান ও শরীফ খিয়াম
2019.08.26
কক্সবাজার ও ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
190826_Rohingya_murder_1000.jpg কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ ওমর ফারুক (৩০) হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে স্থানীয়দের বিক্ষোভ। ২৬ আগস্ট ২০১৯।
[আবদুর রহমান/বেনারনিউজ]

কক্সবাজারের টেকনাফের জাদিমুরা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ ওমর ফারুক (৩০) হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরো এক রোহিঙ্গা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সোমবার ভোরে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের নয়াপাড়া শিবিরের পাশে নিহত হয়েছেন মোহাম্মদ হাসান (১৮)।

এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাতে জাদিমুরা শিবির সংলগ্ন পাহাড়ে নিহত হন মোহাম্মদ শাহ (৩৮) এবং আবদুস শুক্কুর (২৫)। এই দুই রোহিঙ্গাও বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন বলে দাবি পুলিশের।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বেনারকে বলেন, “শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালাতে গেলে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা গুলি চালাচ্ছে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশকেও পাল্টা গুলি চালাতে হচ্ছে। এই গোলাগুলির কারণেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।”

পুলিশ ইচ্ছে করে কাউকে গুলি করছে না বলে দাবি করেন তিনি।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুব সংগঠনের নেতা ওমরকে টেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে গিয়ে মাথায় গুলি করে হত্যা করে অস্ত্রধারী রোহিঙ্গারা। এ ঘটনার পরই পুলিশ রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় অভিযান শুরু করেছে বলে জানান জেলা পুলিশের মুখপাত্র ইকবাল হোসেন।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান বেনারকে বলেন, “এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব নয় বরং এতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।”

নিহত ওমরের বাবা আবদুল মোনাফ কোম্পানি বেনারকে বলেন, “পুলিশ কী করছে তা জানি না। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করে ফাঁসি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

এদিকে ওমর ফারুক হত্যার প্রতিবাদে সোমবার দুপুরেও জাদিমুরা বাজার এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয়রা।

পুলিশের ভাষ্যে দুইবন্দুকযুদ্ধ

পুলিশের টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস বেনারকে জানান, ওমর ফারুক হত্যা মামলার আসামি হাসানের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সোমবার ভোর রাতে তাঁকে নিয়ে পুলিশের একটি দল অস্ত্র উদ্ধারে যায়।

“পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি করে। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা গুলি করতে করতে পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়। পরে হাসানকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়,” বলেন ওসি।

হাসানকে প্রথমে টেকনাফের হাসপাতাল ও পরে কক্সবাজার সদরে পাঠানো হলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান প্রদীপ কুমার।

শনিবার সন্ধ্যায় নয়াপাড়া শিবিরের ‘ডি ব্লক’ থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেই হাসানকে আটক করেছিল পুলিশ। তিনি এই শিবিরের ই-ব্লকের আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে।

শুক্রবারের বন্দুকযুদ্ধের ব্যাপারেও ওসি প্রদীপ বলেন, “ওমর ফারুক হত্যা মামলার আসামীরা অবস্থান নেওয়ার খবর পেয়ে জাদিমুরা শিবিরে অভিযান চালাতে গেলে সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়।”

“আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি চালানোর পর অস্ত্রধারীরা পিছু হটে। পরে মোহাম্মদ শাহ এবং আবদুস শুক্কুরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাঁদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হলেও বাঁচানো যায়নি,” বলেন ওসি।

দুটি ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনাস্থল থেকেই দেশীয় অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের কথাও জানান তিনি।

তবে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলছিলেন “একই বক্তব্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারা বাংলাদেশে একইভাবে দিচ্ছে; এটা কোনো বিচ্ছিন্ন বক্তব্য নয়।”

এই মানবাধিকার কর্মী বলেন, “সবসময়ই আমরা লক্ষ করি এ ধরনের ঘটনার পর বন্দুকযুদ্ধ, ক্রসফায়ারের প্রায় একইরকম গল্প শোনানো হয়। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের আরো সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।”

বন্দুকযুদ্ধে নিহত ৩৫ শরণার্থী

অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দেওয়া দেওয়া তথ্যানুয়ায়ী, গত দুই বছরে জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ৩৩টি ক্যাম্পের ৩৫ জন রোহিঙ্গা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে উখিয়ায় ২৪ জন, টেকনাফে ১১ জন।

এদিকে জেলা পুলিশ জানায়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার, ত্রাণ সামগ্রী বণ্টন নিয়ে বিরোধ, পূর্ব-শত্রুতা বা মাদক ব্যবসাজনিত অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে নিহত হয়েছেন ৪৩ জন রোহিঙ্গা।

একই সময়ে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ডাকাতি, অপহরণ, ধর্ষণ, চুরি, মাদক ও মানবপাচারের অভিযোগে মোট ৪৭১টি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ২০৮টি মাদক মামলা বলেও বেনারকে জানিয়েছে পুলিশ।

চার মিয়ানমারের নাগরিক আটক

রোববার দিবাগত রাতে কক্সবাজারের টেকনাফের নাজিরপাড়া সংলগ্ন নাফনদীর তীরে মিয়ানমারের চার নাগরিককে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

বিষয়টি নিশ্চিত করে টেকনাফ ২ বিজিবির ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর শরীফুল জোমাদ্দার বেনারকে বলেন, “তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং এই বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা করা হয়েছে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।