রোহিঙ্গাদের কাছে সিমকার্ড বিক্রি বন্ধ করল সরকার

কামরান রেজা চৌধুরী
2019.09.03
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
190903_Mobilephone_rohingya_1000.jpg টেকনাফের লেদা শরণার্থী শিবিরে মোবাইল ফোন দেখছে দুই রোহিঙ্গা কিশোর। ৩ আগস্ট ২০১৯।
[আবদুর রহমান/বেনার নিউজ]

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছে মোবাইল ফোন সিম কার্ড বিক্রি বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন—বিটিআরসি। বিষয়টি বেনারকে নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক।

তিনি জানান, রোহিঙ্গা শিবির ও আশেপাশের এলাকায় প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত ফোর-জি এবং থ্রি-জি মোবাইল সেবা বন্ধ থাকবে। বন্ধ করা হলে রোহিঙ্গারা ওই সময়ে ইন্টারনেট সেবা পাবে না।

তা ছাড়া বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ১৫০টি মোবাইল ফোন টাওয়ারের ক্ষমতা কমানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের মোবাইল কোম্পানির সাথে যুক্ত হতে পারবে না এবং রাখাইনে যোগাযোগ করতে পারবে না।

পুলিশ বলছে, রোহিঙ্গাদের মোবাইল ফোন বন্ধ হলে ওই অঞ্চলে ইয়াবা চোরাচালান এবং অপরাধ কমে আসবে।

গত ১ সেপ্টেম্বর মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে রোহিঙ্গাদের কাছে সিম কার্ড বিক্রি বন্ধের আদেশ জারি করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন।

২৫ আগস্ট তাঁদের ওপর মিয়ানমার বাহিনীর আক্রমণের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে রোহিঙ্গাদের বিশাল গণজমায়েতের পর মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল সরকার।

জহুরুল হক বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গারা সিম কার্ড ব্যবহার করতে পারে না। কিন্তু তারা উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়িতে অবৈধভাবে বিশাল সংখ্যক সিমকার্ড ব্যবহার করছে। আমরা রোহিঙ্গাদের ব্যবহৃত নয় লাখ অবৈধ সিমকার্ড চিহ্নিত করেছি।”

তিনি বলেন, “আমরা রোহিঙ্গাদের কাছে সিমকার্ড বিক্রি বন্ধ করতে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছি। তারা আমাদের জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যে রোহিঙ্গাদের কাছে সিমকার্ড বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে।”

বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, “আমরা ওই সিমগুলো বন্ধ করিনি। কিন্তু বিকেল পাঁচটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত শিবির ও এর আশেপাশে ফোর-জি এবং থ্রি-জি মোবাইল সেবা বন্ধ করতে বলেছি যাতে তারা সে সময়ে ইন্টারনেট সেবা না পায়।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ১৫০টি মোবাইল ফোন টাওয়ার রয়েছে। আমরা বলেছি, ওই সকল টাওয়ারের সিগন্যাল দুর্বল করতে যাতে মিয়ানমারের নেটওয়ার্ক আমাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে না পারে।”

বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, “মিয়ানমারের নেটওয়ার্ক ব্যবহার না করতে পারলে তারা রাখাইনে যোগাযোগ করতে পারবে না। সীমান্তে অপরাধ কমে আসবে।”

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ইয়াবা চোরাচালানের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ করা গেলে ইয়াবা চোরাচালান ও অপরাধ দমন সহজ হবে।”

উখিয়ার স্থানীয় অধিবাসী রফিকুল ইসলাম জানান, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশিদের কাছ থেকে সিমকার্ড কেনে।

তিনি বেনারকে বলেন, “মোবাইল সিমকার্ড কিনতে জাতীয় পরিচয়পত্র অবশ্য প্রয়োজন। রোহিঙ্গাদের তো জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। কাজেই তারা স্থানীয়দের কাছ থেকে কার্ড কিনে নেয়।”

রফিকুল ইসলাম বলেন, “সুতরাং যারা তাদের কাছে অবৈধভাবে সিম বিক্রি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।”

মর্মাহত রোহিঙ্গারা

লাম্বারশিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা ইলিয়াস হোসেন বেনারকে বলেন, “মোবাইল সিম কার্ড বিক্রি বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তে তিনি মর্মাহত।”

তিনি বলেন, “আমাদের অনেক আত্মীয়স্বজন এখনো আরাকানে বিভিন্ন আইডিপি ক্যাম্পে আটক আছেন। মোবাইল ফোন দিয়ে আমরা আরাকানের অবস্থা তাঁদের কাছ থেকে জানতে পারি।”

“মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিলে আমরা আরাকানের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারব না,” বলেন তিনি।

ইলিয়াস বলেন, “আমরা সঠিক তথ্য না পেলে কীভাবে আরাকানে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেব? কারণ আমরা মিয়ানমার সরকারকে বিশ্বাস করি না। তারা আমাদের প্রকৃত তথ্য দেয় না।”

এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।

মঙ্গলবার কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের তিনি জানান, যারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার।

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়ার জন্য ভাসানচরে বিশাল ব্যবস্থা করেছে সরকার। কিন্তু আমরা কাউকে ভাসানচর যেতে বাধ্য করব না।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সরকার কোনো রোহিঙ্গাকে জোর করে তাদের দেশে ফেরত পাঠাবে না। প্রত্যাবাসন হবে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সাথে।”

আব্দুল মোমেন বলেন, “বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাখাইনের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। আর এই দায়িত্ব মিয়ানমারের। বাংলাদেশের নয়।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।