রোহিঙ্গা প্রত্যাবসন: চীন-বাংলাদেশের সাথে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগে সম্মত মিয়ানমার

বেনারনিউজ স্টাফ
2019.09.24
ওয়াশিংটন ডিসি
190924_rohingya_china_1000.jpg মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে দেশ ছাড়ার দুই বছর পূর্তিতে উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে আয়োজিত সমাবেশে যোগদানের জন্য যাচ্ছেন রোহিঙ্গারা। ২৫ আগস্ট ২০১৯।
[এএফপি]

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য চীন ও মিয়ানমার বাংলাদেশের সাথে একটি ‘ত্রিপক্ষীয় কর্ম ব্যবস্থা’ গঠনে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।

নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে চীন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে বৈঠকের পর সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের এই কথা বলেন বলে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানায় বার্তাসংস্থা বাসস ও ইউএনবি।

ত্রিপক্ষীয় এই দলটি যৌথভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এর প্রথম বৈঠকটি অক্টোবরে হবার কথা রয়েছে।

তবে ওই বৈঠকের তারিখ কিংবা স্থান সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি তিনি।

এদিকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান না হলে পুরো অঞ্চল জুড়ে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে; এ বিষয়েও চীন ও মিয়ানমার একমত পোষণ করেছে বলে মন্তব্য করেন ড. আবদুল মোমেন।

তাঁর এই মন্তব্যটি নিউ ইয়র্ক থেকে নিউজটুয়েন্টিফোর চ্যানেল প্রচার করেছে।

“আমার ধারণা যে, চীন পুরোপুরি কমিটেড। তারা বলেছে, তারাও চায় এই সমস্যার দ্রুত সমাধান। তারা এবং মিয়ানমারও মনে করে, এই সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে অত্র এলাকায় রেডিক্যালিজম হবে,” বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হলে তা পুরো অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে মিয়ানমারের বরাত দিয়ে জানান আবদুল মোমেন।

তিনি বলেন, “মিয়ানমার বলেছে ‘ডেঞ্জার,’ বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং এই অঞ্চলের জন্য।”

পরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের ভেতর আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি স্বীকার করে বৈঠকে মিয়ানমার দাবি করেছে, নিজের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবার জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে দেশটি।

পাশাপাশি, দেশে ফেরার পর রোহিঙ্গারা নিরাপদ থাকবে ও স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারবে বলেও বৈঠকে জানায় মিয়ানমার।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জঙ্গি সংগঠন আরসা কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলা চালানোর প্রতিক্রিয়ায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক নিপীড়নমূলক অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী; যাকে  'জাতিগত নিধন' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ।

এর ফলে প্রাণ বাঁচাতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর সাড়ে সাত লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। এর আগে থেকে আরো কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে নতুন পুরোনো মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছেন।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ২০১৭ সালের শেষ দিকে মিয়ানমারের সাথে এক চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যাবাসন হতে হবে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানজনকভাবে।

এদিকে দুই দফায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়া হলেও এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমার ফিরে যেতে রাজি হননি। রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, ফিরে যাবার জন্য রাখাইনের পরিবেশ এখনো উপযুক্ত নয়।

এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য চীনের উদ্যোগে মিয়ানমারের সাথে এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের কথা চলতি মাসের ১৭ তারিখ জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশ নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং ৩০ আগস্ট তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে এই প্রস্তাব দেন বলে জানান তিনি।

এছাড়া সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের সময়, রাখাইন পরিস্থিতি দেখতে সেখানে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল পাঠানোরও প্রস্তাব করেন লি জিমিং।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারকে রাজি করাতে চীনের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের প্রধান মুনশী ফায়েজ আহমদ বেনারকে বলেন, “মিয়ানমারকে সকল আন্তর্জাতিক চাপ থেকে রক্ষা করছে চীন। তাই আমরা যদি চীনের মাধ্যমে মিয়ানমারকে বোঝাতে পারি যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন মিয়ানমারের জন্য মঙ্গল, তাহলে মিয়ানমার তার জনগণকে ফিরিয়ে নেবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।