জাতিসংঘ প্রতিবেদন: সম্ভাবনার খোঁজে ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছেন রোহিঙ্গারা

বেনারনিউজ স্টাফ
2019.10.01
ওয়াশিংটন ডিসি
191001-BD-BU-rohingya-620.JPG মিয়ানমার থেকে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর উপকূলের দিকে যাচ্ছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭।
[রয়টার্স]

দুই বছর বিরতির পর গত এক বছরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে শরণার্থীদের সমুদ্রপথে পাড়ি জমানোর ঘটনা বেড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা- ইউএনএইচসিআর।

মঙ্গলবার জেনেভা থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, ২০১৮’র জানুয়ারি থেকে ২০১৯’র জানুয়ারির মধ্যে দেড় হাজারের বেশি আশ্রয়প্রার্থী বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগর পাড়ি দিয়েছেন। যা ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে সমুদ্র পাড়ি দেওয়া মানুষ থেকে প্রায় ৫০ গুণ বেশি।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে সমুদ্রপথে যাত্রা করা ওইসব মানুষের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা এবং তাঁদের গন্তব্য মালয়েশিয়া বলেও জানায় ওই প্রতিবেদন।

প্রতিবেদন মতে, সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে ২০১৮ সালে প্রতি ৬৯ জনের একজন হয় মারা গেছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন, যা ২০১৩-২০১৫ সালে ছিল প্রতি ৮১ জনে একজন।

“আগের বছরগুলোতে মৃত্যুর জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাচারকারীদের নির্যাতন, হত্যা কিংবা খাদ্য ও পানির অভাবকে দায়ী করা হতো,” মন্তব্য করে ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদন জানায়, “তবে ২০১৮ সালের বেশিরভাগ মৃত্যুর জন্য দায়ী নৌকা দুর্ঘটনা।”

জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন মতে, ২০১৫ সালে সমুদ্রযাত্রীদের বেশিরভাগই ছিলেন পুরুষ, কিন্তু ২০১৮ সালের সমুদ্রযাত্রীদের শতকরা ৫৯ ভাগই নারী ও শিশু।

২০১৮ সালে সমুদ্র পাড়ি দেবার নৌকাগুলোও তুলনামূলকভাবে ছোট জানিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে কার্গো জাহাজ কিংবা বড়ো মাছ ধরার ট্রলারে একসাথে ৩০০ থেকে এক হাজার জন পর্যন্ত বহন করা হতো। অন্য দিকে ২০১৮ সালে স্থানীয় জেলেদের ছোট নৌকায় ২০ থেকে ১০০ জন যাত্রী নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দেবার প্রবণতা দেখা যায়।

গত বছর পাচারকারীরা সমুদ্র পার করার জন্য জন প্রতি ১৭০০ থেকে ছয় হাজার ডলার পর্যন্ত নিয়েছেন বলে জানায় ওই প্রতিবেদন।

ইউএনএইচসিআরকে এক রোহিঙ্গা কিশোর জানায়, “আমরা নৌকায় পুরোপুরি যাত্রী ভরার জন্য ১২ দিন (সমুদ্রে) অপেক্ষা করেছি, তারপর রওয়ানা দিয়েছি। আমরা যথেষ্ট পরিমাণ খাবার কিংবা পানি পাইনি। আমরা যখন পাচারকারীদের কাছে খাবার কিংবা পানি চাইতাম, তখন তারা আমাদের রড দিয়ে পেটাতো।”

২০১৬-১৭ সালে শরণার্থীদের সমুদ্র পাড়ি দেবার প্রবণতা কেন কম ছিল সে বিষয়ে প্রতিবেদনে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

এতে বলা হয়, “২০১৫ সালে আন্দামান সমুদ্র সংকটের চার বছর পর, ছোট ছোট দলে দক্ষিণ এশিয়ার শরণার্থীরা ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার জন্য আবার জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন।”

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে চার মাসের দুর্বিসহ সমুদ্রযাত্রায় আন্দামান সাগর পাড়ি দিয়ে কয়েক হাজার শরণার্থী ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় অবতরণ করেন।

ওই মানবপাচারের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে থাইল্যান্ডের একজন লে. জেনারেলসহ ৬২ জন কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৮ সালে সমুদ্রযাত্রীদের বেশিরভাগই মিয়ানমার বা বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে যাওয়া রোাহিঙ্গা। এর সাথে কিছু বাংলাদেশিও রয়েছেন।

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর নিপীড়নমূলক অভিযান শুরু হবার পর, প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।

এছাড়া আগে থেকেও বাংলাদেশে বাস করছিলেন কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে কক্সবাজারের ৩৪টি শিবিরে প্রায় বারো লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন।

রোহিঙ্গাদের শরণার্থী শিবির ছেড়ে পালানো ঠেকাতে সম্প্রতি শিবিরগুলোর চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

তবে শিবিরগুলোর চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হলে তা শরণার্থীদের ‘চলাচলের স্বাধীনতার অধিকার’ খর্ব করবে বলে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মন্তব্য করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।