মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবী গ্রেপ্তার

প্রাপ্তি রহমান
2017.10.25
ঢাকা
বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অনুমতির জন্য টেকনাফে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের অপেক্ষা। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অনুমতির জন্য টেকনাফে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের অপেক্ষা। ২৫ অক্টোবর ২০১৭।
রয়টার্স

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্কে টানাপোড়েনের মধ্যে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে সরকার দলীয় এক সাবেক সংসদ সদস্যের ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

রাখাইন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের চেয়ারম্যান ও উসিত মংকে (৬৭) গত ১৮ অক্টোবর ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

“মিয়ানমারে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা আছে মর্মে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে,” বেনারকে জানান বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযম মিয়া।

বাংলাদেশি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন সম্প্রদায়ের স্বেচ্ছাসেবী উসিত মং এর বোন এ থিন রাখাইন নবম জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এর সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে সদস্য ছিলেন। এছাড়া উসিত মং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন বলেও জানিয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা।

উসিত এর স্ত্রী ম্র রাজা লিন মিয়ানমারের নাগরিক। তিনি মিয়ানমারের সাবেক বিচ্ছিন্নতাবদী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান লিবারেশন পার্টির গেরিলা নেত্রী ও বর্তমানে মিয়ানমারে একটি নারী সংগঠনের প্রধান বলে পারিবারিক সূত্রের বরাতে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

“তাঁকে আং সান সুচিও চেনেন,” লিন সম্পর্কে জানায় এএফপি।

আরাকান লিবারেশন পার্টি বর্তমানে রাখাইনে রোহিঙ্গা বিরোধী কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে বলে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বরাতে জানায় এএফপি।

ওসি নূরে আযম বেনারকে জানান “তাঁর বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।”

উসিত এর কাছ থেকে বেশ কিছু মিয়ানমারের মুদ্রা এবং মার্কিন ডলার উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁর ল্যাপটপে উসিত মং এবং তার স্ত্রীর অস্ত্র নিয়ে কিছু ছবিও রয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

পুলিশ সন্দেহ করছে, মিয়ানমারের আরাকানের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে তিনি অর্থ সহায়তা ও অস্ত্র সরবরাহ করে থাকেন।

তবে এ থিন রাখাইনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এ এফ পি জানায়, উসিত মং নির্দোষ এবং তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা।

“তিনি মুসলিম ও বৌদ্ধ উভয় সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করেন। তিনি সেখানে (রাখাইনে) শান্তির জন্য কাজ করেন,” এএফপিকে বলেন এ থিন রাখাইন।

ঢাকায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একাধিক নেতার কাছে উসিত মং সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একাধিক সূত্র জানায়, উসিত মংয়ের বাড়ি বরগুনা জেলার আগা ঠাকুরপাড়া গ্রামে। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

তাঁর স্ত্রী মিয়ানমারে থাকেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও মিয়ানমারে তাঁদের এনজিও কার্যক্রম রয়েছে। কিছুদিন পর পর উসিত মং মিয়ানমারে আসা–যাওয়া করেন।

মিয়ানমারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হজরত শাহজালাল বিমান বন্দরে গেলে র‍্যাব সদস্যরা উসিত মংকে আটক করেন। পরে তাঁকে বিমানবন্দর থানায় সোপর্দ করা হয়।

পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উসিত পার্বত্য এলাকায় এবং কক্সবাজারে স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার কথা জানিয়েছেন। তবে পুলিশের দাবি, তাঁর এমনসব কাজের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।