রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত, বাধা না দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে আদালতে আবেদন

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশে বাধা না দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে। পাশাপাশি সাময়িক সময়ের জন্য সীমান্তখোলা রাখার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।

সোমবাররিটআবেদনটিকরেনসুপ্রিমকোর্টেরআইনজীবীআবুইয়াহিয়াদুলাল।মঙ্গলবারহাইকোর্টেরসংশ্লিষ্টবেঞ্চেআবেদনটিরশুনানিহওয়ারকথারয়েছে।

এদিকেমিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরতপাঠাচ্ছেবাংলাদেশেরসীমান্তরক্ষীবাহিনীবিজিবি।তবেমানবিক বিবেচনায় কিছু কিছু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে বাংলাদেশের সরকার।

বিপদেপড়েআশ্রয়নিতেআসারোহিঙ্গাদেরআশ্রয়দিতেসরকারেরপ্রতিআহ্বানজানিয়েছেনবিএনপিচেয়ারপারসনখালেদাজিয়াও।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এরই মাঝে নতুন করে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ করতে দিতে রাজি নয় বাংলাদেশ।

সম্প্রতি দেশটির রাখাইন রাজ্যে অভিযানের নামে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর হত্যা, নির্যাতন, বাড়িঘর লুটপাট ও ধর্ষণের মতো অপরাধ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবেশি দেশে চলমান এ নির্যাতন ও সহিংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ।

কক্সবাজার থেকে স্থানীয় সাংবাদিক তুষার তুহিন বেনারকে বলেন, "বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তের দুর্গম সীমান্ত পেরিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তরক্ষীদের নজরে পড়লে তাদেরকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।"

তবে কক্সবাজারেরকুতুপালংঅনিবন্ধিতরোহিঙ্গাশিবিরেরনেতাহাফেজআহমেদ বেনারকেজানান"গত ৯ অক্টোবরথেকেশুরুহওয়াসহিংসতারপরথেকেএপর্যন্ত প্রায়২০হাজাররোহিঙ্গাশরণার্থী বাংলাদেশেঅনুপ্রবেশকরেছে।"

এদেরমধ্যেকুতুপালংক্যাম্পেপ্রায়১০হাজার, লেদাওশাপলাপুরক্যাম্পেএকহাজারকরেরোহিঙ্গাআশ্রয়নিয়েছে।বাকিরাকক্সবাজারশহর, নাইক্ষ্যংছড়িসহবিভিন্নএলাকায়ছড়িয়েগেছেবলে জানানতিনি।

আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদেরঅনুপ্রবেশে বাধা দেওয়া কেন অমানবিক ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে নাসে বিষয়ে রুল চেয়েছেন হাই কোর্টে রিট আবেদনকারী আবু ইয়াহিয়া দুলাল।

আগামীকাল এ আবেদনের শুনানি হবে বলে জানিয়ে তিনি বেনারকে বলেন, "প্রতিবেশি হিসেবে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণেই আশ্রয় দেওয়া প্রয়োজন।"

১৯৭১ সালেমুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিবেশি দেশ ভারতে কয়েক লাখ বাংলাদেশির আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে রোহিঙ্গাদের প্রতি একইরকম মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে আদালত সঠিক নির্দেশনা দেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এই আইনজীবী।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও বাংলাদেশকে আহবান জানিয়ে যাচ্ছে। এরই মাঝে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে সরকারের পাশাপাশি অন্য প্রতিবেশী ও বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন।

রোহিঙ্গাদেরচাপেসামাজিকসমস্যাবাড়ারআশঙ্কাস্বীকারকরলেওতিনিমানবিককারণেরোহিঙ্গাশরণার্থীদেরযতটুকুপারাযায়সাহায্যকরারআহবানজানান।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা

এদিকে আশ্রয় নেওয়ার পর গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের নিয়ে নানা সামাজিক সমস্যার কথা তুলে ধরে এ সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ।

রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার আহবানও জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি মানবিক কারণে কিছু রোহিঙ্গাকে ইতোমধ্যে আশ্রয় দেওয়ার কথাও জানানো হয়।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের কাছে রোহিঙ্গা বিষয়ক সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পরে এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, “কূটনীতিকদের জানিয়েছি, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান সম্ভব।”

তিনি বলেন, “সেখানকার মানুষের জীবনমান বৃদ্ধি এবং সমন্বয়সাধনে বাংলাদেশ মিয়ানমারকে সব ধরনের সহায়তা করতে আগ্রহী। এ বিষয়ে অন্যান্য দেশগুলোকেও এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছি।”

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা যাতে দ্রুত নিজে দেশে ফিরে গিয়ে নিরাপদ জীবন যাপন করতে পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রী।

তবে এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কড়া প্রহরা এড়িয়ে দুর্গম এলাকা দিয়ে কিছু কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছেন। আবার এমন কিছু কেস এসেছে, মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে যাদেরকে ঢুকতে না দিয়ে পারা যায়নি। তাদের চিকিৎসা ও খাবারের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।”

বাংলাদেশের এ উদ্যোগের প্রসংশা করে রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশই।

মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছেন, “রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশসহ সমমনা অন্যান্য দেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র।”

রাখাইন রাজ্যে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে সবাই অন্ধকারে রয়েছে জানিয়ে তিনি সেখানকার নির‌্যাতনের ঘটনার স্বচ্ছ ও আনুষ্ঠানিক তদন্তের পক্ষে মত দেন।