রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য প্রকল্প অনুমোদন

জেসমিন পাপড়ি
2017.11.28
ঢাকা
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার কাছে এই ভাসান চরে স্থানান্তর করা হবে রোহিঙ্গাদের। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার কাছে এই ভাসান চরে স্থানান্তর করা হবে রোহিঙ্গাদের। চরটি স্থানীয়ভাবে ঠেঙ্গারচর নামে পরিচিত। জানুয়ারি ২০১৫।
AFP

মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোচনার মধ্যেই নোয়াখালীর ভাসান চরে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য নতুন আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২ হাজার ৩ শ ১২ কেটি টাকার এ প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে আশ্রয়ণ-৩ নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। সম্পূর্ণ সরকারি খরচে ২০১৯ সালের নভেম্বরের মধ্যে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত নতুন চুক্তি অনুযায়ী দু’মাসের মধ্যে যেখানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার কথা সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারের নতুন আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে আইন ও সালিস কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান বেনারকে বলেন, “এ প্রকল্প অনুমোদনের মধ্য দিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন সম্ভব নয়।”

তিনি বলেন, “তা ছাড়া এখন পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে, ভাসানচর বসবাসযোগ্য অবস্থায় নেই।”

নূর খানের মতে, “এটাকে বাসযোগ্য করতে হলে অনেক সময় এবং অনেক অর্থ ব্যয় করতে হবে।”

নোয়াখালী জেলার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সন্নিকটে মেঘনা নদীর মোহনায় ভাসান চরের অবস্থান। যার আয়তন জোয়ারের সময় প্রায় ১০ হাজার এবং ভাটার সময় প্রায় ১৫ হাজার একর। এখনো সেখানে নিয়মিত জোয়ারের পানি ওঠানামা করে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জেলেরা। ট্রলারই এই বিরান দ্বীপে যাতায়াতের একমাত্র উপায়।

এদিকে মঙ্গলবার একনেকের বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, “রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে ইতিমধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি চুক্তি হলেও বিরাট সংখ্যক এসব অভিবাসীকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সময় প্রয়োজন।”

“এদিকে অনেক রোহিঙ্গা বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে অত্যন্ত অমানবিক পরিবেশে বসবাস করছে। তাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য ভাসান চরের এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে,” বলেন তিনি।

রোহিঙ্গারা ফেরত যাওয়ার পরে এই স্থানে দরিদ্র লোকদের স্থানান্তর করা হবে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।

এক প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, “রোহিঙ্গাদের এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিষয়ে দাতা গোষ্ঠীদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। তারা এগিয়ে এলে সরকার তাদের স্বাগত জানাবে।”

রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার উদ্দেশ্যে সরকার সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে এ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বলে জানান তিনি।

যা আছে প্রকল্পে

প্রকল্পের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, ভাসানচর নোয়াখালী জেলা থেকে ২১ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ৩৯ কিলোমিটার) দূরে ঈশ্বর ইউনিয়নে অবস্থিত।

এতে বলা হয়, কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়ায় স্থানীয় অধিবাসীদের সংখ্যা মাত্র ৫ লাখ ৭ হাজার। অথচ ওই এলাকায় নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে দশ থেকে ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। ফলে সেখানে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে পর্যটন জেলা কক্সবাজারের পরিবেশ।

জানা যায়, ভাসান চরের ভূমি উন্নয়ন ও সমুদ্রতীরের নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পের মাধ্যমে। সেখানে ১২০টি গুচ্ছ গ্রাম নির্মাণ করা হবে। থাকবে ১ হাজার ৪ শ ৪০টি ব্যারাক হাউস ও ১২০টি আশ্রয় কেন্দ্র।

এ ছাড়া নলকূপ ও পানি সরবরাহ অবকাঠামো, উপাসনালয়, অভ্যন্তরীণ সড়ক, পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো, নিরাপত্তার জন্য নৌবাহিনীর অফিস ও বাসভবন এবং ওয়াচ টাওয়ার নির্মিত হবে।

নৌকা না পেয়ে বাঁশের ভেলা দিয়ে নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছেন রোহিঙ্গারা। ১৭ নভেম্বর ২০১৭।
নৌকা না পেয়ে বাঁশের ভেলা দিয়ে নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছেন রোহিঙ্গারা। ১৭ নভেম্বর ২০১৭।
আবদুর রহমান/বেনারনিউজ
গত কয়েক দশক ধরে কক্সবাজারের আশ্রয় নেওয়া চার লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে নিয়ে সৃষ্ট নানা সামাজিক সমস্যার প্রেক্ষিতে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিকটবর্তী দ্বীপ ভাসান চরে তাদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে সরকার। এই চরটি স্থানীয়ভাবে ঠেঙ্গারচর নামে পরিচিত।

এরই মধ্যে গত অক্টোবর ও এ বছরের আগস্টের পর আরও প্রায় সাত লাখ নতুন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। যাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে দু’দেশ।

প্রত্যাবাসন চুক্তির পরও আসছে রোহিঙ্গারা

জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএমের হিসেবে, গত ছয় মাসে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূলে মোট ৬ লাখ ২৪ হাজার ২৫১ জন রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে। মিয়ানমারের রাখাইন থেকে সর্বশেষ গত এক সপ্তাহে পালিয়ে এসেছে ১ হাজার ৮০০ জন। এর ফলে বাংলাদেশে অবস্থানকারী মোট রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৩৬ হাজার।

মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানায় আইওএম।

“রোহিঙ্গাদের আসা কিছুটা কমেছে। তবে এখনো প্রতিদিন কয়েক শ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তারা তাদের দেশ মিয়ানমারে হত্যা, ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার,” সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন কক্সবাজারে দায়িত্ব পালনকারী আইওএম এর জরুরি সমন্বয়কারী অ্যান্ড্রু লিড।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা অব্যাহত রয়েছে। গত সোমবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত ৫৪টি পরিবারের ২৩৩ জন রোহিঙ্গা টেকনাফে পৌঁছায়। পরে তাদের শরণার্থী শিবিরে পাঠানো হয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।