বান্দরবান সীমান্তে ডিজিএফআই কর্মকর্তা হত্যা: আরসা প্রধানের সাথে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা নেতাও অভিযুক্ত
2022.11.28
কক্সবাজার ও ঢাকা
বান্দরবান সীমান্তে এক সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা হত্যা ও র্যাবের এক সদস্যকে আহত করার ঘটনায় আসামি হিসেবে অভিযুক্ত হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শূন্যরেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ।
তাঁকে ওই ঘটনায় “মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে,” দাবি করে তিনি বেনারকে বলেন, “যেখানে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সেখানে আমি উপস্থিতও ছিলাম না...আমি নিশ্চিত এটা ভুল।”
পুলিশের সূত্রমতে, গত ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা শিবিরের কাছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) বিশেষ একটি দল মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ডিজিএফআই কর্মকর্তা বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদী এবং গুলিবিদ্ধ হন র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সদস্য সোহেল বড়ুয়া।
ওই ঘটনায়, গুলিতে সাজেদা বেগমও নামে শূন্যরেখার এক রোহিঙ্গা তরুণীও নিহত হন।
ওই হতাহতের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) কমান্ডার-ইন-চিফ আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীসহ ৬৬ রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন ডিজিএফআইয়ের কক্সবাজার এলাকায় মাঠ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন
মামলায় বাংলাদেশে-মিয়ানমার শূন্যরেখার শিবিরে বসবাসরত ১৭ রোহিঙ্গাকে আসামি করা হয়েছে। মামলার চার নম্বর আসামি হিসেবে রয়েছে শূন্যরেখা আশ্রয় শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদের নাম।
তিনি শুরু থেকেই বাংলাদেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন জানিয়ে দিল মোহাম্মদ বেনারকে বলেন, “আমি আইনিভাবেই মামলাটি মোকাবিলা করতে চাই।”
পুলিশের দাবি, গত ১৪ নভেম্বরের ওই ঘটনায় অভিযুক্তরা সবাই মিয়ানমারের নাগরিক।
আরসার সাথে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন দিল মোহাম্মদ। তবে শূন্য রেখায় আরসার আসা-যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।
তিনি বলেন, “মূলত প্রাণের ভয়েই আরসার বিরুদ্ধাচরণ করে না এখানকার সাধারণ রোহিঙ্গারা।”
এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি
মামলার আসামিদের ধরতে শরণার্থী শিবিরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান অব্যাহত থাকলেও এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি বলে বেনারকে জানান নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) টান্টু সাহা।
ওই দিনের ঘটনায় আরসা জড়িত ছিল এরকম কোনো সত্যতা পুলিশ পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা দায়েরকৃত অভিযোগের ভিত্তিতে কাজ করছি।”
অভিযোগে ডিজিএফআই দাবি করেছ, হামলার সময় সন্ত্রাসীরা হামলার শিকারদের পরিচয়পত্র ও একটি সরকারি ওয়াকিটকি ছিনিয়ে নিয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা মিয়ানমারের “আরসা ও আল ইয়াকিন গ্রুপের বিচ্ছিন্নতাবাদী, সক্রিয় অস্ত্রধারী, খুনি, লুটতরাজ, ধর্ষক, ডাকাত ও মাদক পাচারকারী।”
হামলাকারীরা মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়া এবং বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে বলে জানানো হয় মামলার অভিযোগে।
এজাহারে নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে জুনুনীসহ ৩১জন এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিদের ১৭ জনের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে শূন্যরেখার বাসিন্দা হিসেবে, বাকিরা কক্সবাজারের উখিয়া ও কুতুপালং ক্যাম্পসহ বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দা। অভিযোগে জুনুনীর ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, তুমব্রু কোনাপাড়া জিরো লাইন।
শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গারা যেহেতু বাংলাদেশের সীমান্তের ভিতর থাকেন না সেহেতু তাঁদেরকে কীভাবে গ্রেপ্তার করা হবে জানতে চাইলে (ওসি) টান্টু সাহা বলেন, “এ বিষয়ে পুলিশের নিজস্ব কৌশল আছে। বিষয়টি প্রকাশ করতে চাই না।”
বাংলাদেশের কক্সবাজারে এবং শূন্যরেখার ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায়শই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রোহিঙ্গা নেতারা অধিকাংশ ঘটনার পেছনেই আরসার হাত রয়েছে বলে দাবি করলেও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কখনোই আরসার অবস্থানের বিষয়টি সরাসরি স্বীকার করা হয় না।