অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা সংখ্যা নিয়ে সরকারের লুকোচুরি: সাড়ে তিনশোকে ফেরত পাঠানোর দাবি
2016.12.01

জাতিসংঘের আহ্বান সত্ত্বেও শরণার্থী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেয়া অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। বিজিবির সূত্রমতে বৃহস্পতিবার ভোরে নাফ নদীর তীর থেকে নারী ও শিশুসহ প্রায় সাড়ে তিনশো রোহিঙ্গা বোঝাই ১১টি নৌকা মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এ প্রসঙ্গটি নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে জানান, “আজ নাফ নদীর বাংলাদেশ সীমানা থেকে রোহিঙ্গা বোঝাই ১১টি নৌকাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এদের সাথে গত বুধবার উখিয়ায় আটক ১৯ জনকেও ফেরত দেয়া হয়েছে।”
সীমান্ত পাহারা এড়িয়ে কিছু অনুপ্রবেশরে কথা স্বীকার করলেও তিনি জোর দিয়ে বলেন “আমরা আমাদের অবস্থান পরিবর্তন করিনি। আমরা রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক হলেও আমাদের সীমান্ত তাদের জন্য রুদ্ধ। যারা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন মিয়ানমারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকেও ফেরত পাঠানো হবে।”
ফেরত পাঠানো ১১টি নৌকার প্রতিটিতে ৩০ জন করে শরণার্থী ছিল বলে সীমান্তে দায়িত্বরত একজন বিজিবি সদস্য বেনারকে নিশ্চিত করেন। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার টেকনাফের বিজিবি কমান্ডার লেফনেন্ট কর্নেল আবু জার আল জাহিদ কক্সবাজারে সাংবাদিকদের জানান যে ১১টি নৌকার প্রতিটিতে দশজন করে রোহিঙ্গা ছিলেন।
স্থানীয় জনসাধারণ মনে করেন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নিয়ে প্রথম থেকেই বিজিবি লুকোচুরির আশ্রয় নিচ্ছে। উখিয়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ রহমত বেনারকে বলেন “প্রথম দিকে তো তারা বাংলাদেশে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা স্বীকারই করেনি। পরে যখন সংবাদপত্রে মাঠ পর্যায়ের তথ্য প্রকাশিত হতে থাকল, তখন তারা স্বীকার করল যে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।”
তিনি আরো যোগ করেন “আমরা প্রতিদিনই উখিয়ার আনাচে কানাচে রোহিঙ্গাদের আসতে দেখছি। কিন্তু বিজিবি বলছে সম্পূর্ণ উল্টো কথা।”
৯ অক্টোবরে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় সহিংসতা শুরুর পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশে অন্তত ১০ হাজার শরণার্থী অনুপ্রবেশ করেছে বলে গত বুধবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা দাবি করে।
এর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম খুব স্পষ্ট করেই বুধবার বেনারকে জানিয়েছেন যে “জাতিসংঘের সংখ্যাটা ভুল বলা যাবে না। বেশ কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে, সংখ্যাটি সুনির্দিষ্ট করা না গেলেও তা অনেক।”
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিতে জাতিসংঘের আহ্বান উপেক্ষা করে বাংলাদেশ বরং সীমান্তে আরো কড়া পাহারা বসিয়েছে। যদিও গত বুধবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে “পালিয়ে আসাদের মধ্যে অত্যন্ত মানবতের অবস্থার নারী, শিশু ও আহতরা রয়েছেন, যাদের মানবিক কারণে আমরা ফেরত পাঠাইনি।”
কিন্তু বৃহস্পতিবার ১১টি নৌকা ফেরত পাঠানো সংক্রান্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর আগের বক্তব্য থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্রই তুলে ধরে।