মিয়ানমার সেনাবাহিনী গণহত্যা ঘটিয়েছে: হলোকাস্ট মিউজিয়াম

রোজান গ্যারিন
2018.12.06
বিশেষ প্রতিবেদন
181206-BD-BU-Rohingya-620.jpg কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে প্রার্থনা করছেন কয়েজন রোহিঙ্গা। ২৫ আগস্ট ২০১৮।
[এএফপি]

সামরিক অভিযানের সময় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো জাতিগত নিধন ও গণহত্যার জোরালো প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র্রের হলোকাস্ট মিউজিয়াম।

“রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বার্মা সেনাবহিনীর অভিযান, বিশেষত ২০১৭ এর আগস্টের আক্রমণ ছিল পরিকল্পিত, সমন্বিত ও ব্যাপক বিস্তৃত,” যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে এক বিবৃতিতে গত সোমবার বলেন হলোকাস্ট মিউজিয়ামের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য লি ফাইনস্টাইন।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারকে দেশটির পুরোনো নাম ‘বার্মা’ হিসেবে উল্লেখ করে থাকে।

রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ব্যাপক নিপীড়ন, ধর্ষণ ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেবার মতো নির্যাতনে গত বছরের আগস্টের পর সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের নির্যাতনকে ‘জাতিগত নিধন’ ও গণহত্যা হিসেবে অভিযুক্ত করলেও দেশটি বরাবরই সেইসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

“আমরা আশা করি, বার্মায় এখনো থেকে যাওয়া রোহিঙ্গা এবং যারা সেখানে ফিরে যাবার ব্যাপারে আতঙ্কিত, এই ঘোষণার পর তাঁদের জন্য কিছু করা হবে,” বলেন লি।

হলোকাস্ট মিউজিয়াম জানায়, তারা একদল নৃশসংতা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটসের সাথে তাদের ২০১৭ সালে যৌথভাবে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন এবং মিয়ানমারে গণহত্যা ও নির্যাতনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিভিন্ন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।

গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত জাতিসংঘের তদন্তকারীদের একটি প্রতিবেদন মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা সংগঠিত নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গণহত্যার দায়ে বিচারের দাবি জানায়।

বিবৃতিতে হলোকাস্ট মিউজিয়ামের সেন্টার ফর দি প্রিভেনশন অব জেনোসাইড বিভাগের উপ পরিচালক সাইমন স্কদ বলেন, “আমাদের বিশ্লেষণ থেকে এটি খুবই পরিষ্কার যে, জাতিগত ও ধর্মীয় পরিচয়ের কারণেই বার্মিজ কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধ্বংস করতে চেয়েছে।”

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষে একটি গবেষণা পরিচালনার পর ওয়াশিংটন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল এন্ড পলিসি গ্রুপ সোমবার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বিষয়ক তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এই প্রতিবেদনে তারা জানায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের ঘটনা ঘটিয়েছে।

২০১৭ সালের পর বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এক হাজার রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

গত নভেম্বর মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স মিয়ানমারের নেতা আং সান সুচির কাছে রোহিঙ্গা নির্যাতন ‘ক্ষমার অযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন।

যদিও উত্তরে সুচি “একেকজনের একেক রকম দৃষ্টিভঙ্গি” রয়েছে মন্তব্য করে বলেন, সবারই উচিত একে অন্যকে আরো ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করা।

প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে বেনারনিউজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রেডিও ফ্রি এশিয়া।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।