প্রতিরোধ প্রচেষ্টার সমান্তরালে চলছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ
2016.12.16
ঢাকা থেকে

প্রায় প্রতিদিনই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সীমান্ত রক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে অসংখ্য নির্যাতিত, সহায় সম্বলহীন রোহিঙ্গারা। স্থানীয়দের মতে প্রতিদিন এ সংখ্যা গড়ে একশ। যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের উপর দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মাত্র এখনো থামেনি। একই দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘও।
এদিকে অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময় আটক করে রোহিঙ্গাদের দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়াও অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের তিন শতাধিক নৌকাকে আটক করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ সীমান্তের ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ বেনারকে বলেন, “সীমান্তে কড়া পাহারা রয়েছে। গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে সীমান্তে অনুপ্রবেশ করতে চাওয়া ১৯৫টি নৌকা ও ডিসেম্বরে এ পর্যন্ত ১শ ১১টি নৌকা ফেরত পাঠানো হয়েছে।”
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায় এসব নৌকার প্রতিটিতে ১০-১২ জন করে রোহিঙ্গা ছিলেন।
এদিকে শুক্রবারেও কক্সবাজারের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময় অন্তত ৭৯ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি।
এ বিষয়ে বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার সাংবাদিকদের জানান, “শুক্রবার ভোরে বালুখালী সীমান্ত পয়েন্টের শূন্যরেখা অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল ১৯ জন রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে ছিল তিন শিশু, দুই পুরুষ ও ১৪ নারী।”
এ ছাড়া শুক্রবার ভোরে আরো ছয়টি নৌকার অন্তত ৬০ জন রোহিঙ্গাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর তিনটি নিরাপত্তা চৌকিতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিহত হন। আহত হন আরো কয়েকজন। এরপরই ওই অঞ্চলে অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তবে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। সে কারণে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে মিয়ানমার থেকে আসা বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গারা সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার কারণ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বেনারকে বলেন, আমাদের ছোট্ট দেশ। অথচ জনসংখ্যা বেশি। সেখানে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তার উপর গত দু’এক মাসে আনুমানিক ৪০ হাজার রোহি্ঙ্গা নুতন করে এদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।”
তারা সামাজিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আসার পর তারা বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। তারা বন কেটে বসতঘর তৈরি থেকে শুরু করে নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে।”
আন্তর্জাতিক মহলের পদক্ষেপে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জঙ্গি উত্থানও হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবীর।
তিনি বেনারকে বলেন, “আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের উপর সরকারের নজরদারি বাড়ানো উচিত। যাতে তাদের খারাপ সময়ের সুযোগ কেউ নিতে না পারে।”
এদিকে জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নিতে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে রামরু'র নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার বেনারকে বলেন, “মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে হবে। পাশাপাশি অতিরিক্ত চাপ সামলানোর জন্যও ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসঙ্গে কূটনৈতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গা নির্যাতন কমাতে হবে।”
প্রতিদিনই মিলছে হত্যা, নির্যাতনের খবর
এদিকে মিয়ানমার থেকে প্রায় প্রতিদিনিই হত্যা, নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। রোহিঙ্গা মুসলিমদের সঙ্গে বর্তমান সরকারের আচরণেরও তীব্র নিন্দা করা হয়েছে।
আং সান সুচির নেতৃত্বাধীন সরকারের সমালোচনা করে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তরের প্রধান যাইদ রাদ আল হুসেইন বলেছেন, রাখাইন রাজ্যের সমস্যা মোকাবেলায় মিয়ানমার সরকার যে নীতি নিয়েছে তাতে উল্টো ফল হচ্ছে।
রোহিঙ্গা রাজ্যে পর্যবেক্ষকদের প্রবেশ করতে না দেওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন,“সেখানে যদি লুকোনোর কিছু না থাকে, তাহলে কেন আমাদেরকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না? সেখানে ঢোকার ব্যাপারে অনুমতি দিতে বার বার আপত্তি করায় আমরা রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সবচেয়ে খারাপটাই আশঙ্কা করছি।’