রোহিঙ্গা শিবিরে ছড়িয়ে পড়ছে ডিপথেরিয়া, ২৪ জনের মৃত্যু
2017.12.26
ঢাকা ও কক্সবাজার
ছোঁয়াচে রোগ ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের মৃত্যুর সংখ্যা ২৪ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ সোমবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় উখিয়ার জামতলি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই রোগে আক্রান্ত এক শিশুর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা।
এ ছাড়া এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১০০ জন ডিপথেরিয়া রোগীকে শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রতিদিনই এ সংখ্যা বাড়ছে। ডিপথেরিয়ার মহামারি ঠেকাতে আক্রান্তদের চিকিৎসার্থে ৩টি আলাদা চিকিৎসালয় গড়ে তোলা হয়েছে। একই সাথে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় টিকাদান কর্মসূচিও চালাচ্ছে সরকার।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম বেনারনিউজকে বলেন, “রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ২৫ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত দুই হাজার ১০০ জন ডিপথেরিয়া রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বালুখালি, কুতুপালং ও জামতলীর ৩টি সেবা কেন্দ্রে রেখে আলাদাভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”
সংক্রামক ব্যাধি ডিপথেরিয়ায় আক্রান্তের হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে এ রোগ দ্রুত অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আক্রান্তের গলার পেছন দিকে সরু পর্দা তৈরি হয়। এতে শ্বাসকষ্ট, হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা, পক্ষাঘাত এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে গত ২৫ আগস্ট থেকে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইনে দমন নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গারা দশকের পর দশক মৌলিক স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এর ফলে তারা নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত।
টিকাদানের মাধ্যমে কয়েক দশক আগে ভয়ংকর এই রোগ বাংলাদেশ থেকে নির্মূল করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে তা দেশে আবারও হানা দিয়েছে। এই রোগ ঠেকাতে স্বাস্থ্য বিভাগ ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছে সরকার।
টিকাদান কর্মসূচি চলছে
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় ৯ ডিসেম্বর থেকে উখিয়ার ৪৮টি ও টেকনাফের ১২টি ভ্রাম্যমাণ ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের মাঝে ডিপথেরিয়ো রোগের প্রতিষেধক টিকা দেওয়া হচ্ছে। এতে ১২০ জন স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করছেন। ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে এই রোগের প্রতিষেধক টিকা দেওয়া হয়েছে। যাদের বয়স ১৫ বছরের নিচে।
আবদুস সালাম বলেন, “সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি এখনো মহামারি রূপ ধারণ করেনি। তবে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। এই কারণে তাদের আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আপাতত ক্যাম্পে কোনো নতুন রোহিঙ্গার প্রবেশ না করানোর জন্য জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।”
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তে হাজার তিনেক রোহিঙ্গা রয়েছে। এই ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগের কারণে তাদের ক্যাম্পে আনা হচ্ছে না।
বায়োমেট্রিক নিবন্ধন ৯ লাখ ছাড়িয়েছে
এদিকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন চলছে। এ পর্যন্ত নয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বেনারনিউজকে জানান, উখিয়া ও টেকনাফের ১২টি অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের কাজ এগিয়ে চলছে। ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাসপোর্ট অধিদপ্তর নয় লাখ পাঁচ হাজার ৪৬৮ জনের নাম নিবন্ধন করেছে।
আলী হোসেন আরও জানান, শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আর. আর. আর. সি) রিপোর্ট মোতাবেক ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের নাগরিকের সংখ্যা ৬ লাখ ৭২ হাজার ৭০ জন। অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকায় এ সংখ্যা বাড়ছে। এ বছরের ২৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৪ হাজার ৬০ জন।