রোহিঙ্গাদের তহবিল আরও বাড়াতে আইওএমর প্রতি শেখ হাসিনার আহ্বান

আহম্মদ ফয়েজ
2024.05.07
ঢাকা
রোহিঙ্গাদের তহবিল আরও বাড়াতে আইওএমর  প্রতি শেখ হাসিনার আহ্বান কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ত্রাণের বালতি বিতরণ করা হচ্ছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩।
[সৌজন্য আইওএম]

বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল আরও বাড়াতে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকায় সফররত আইওএম মহাপরিচালক অ্যামি পোপের সঙ্গে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক সৌজন্য সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নজরুল ইসলামকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন উৎস থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আরও তহবিল সংগ্রহের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন আইওএমর এই প্রতিনিধিকে।

“যেহেতু (বাংলাদেশে) মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য তহবিল কমে গেছে, আইওএমের উচিত এই উদ্দেশ্যে আরও তহবিল সংগ্রহের জন্য নতুন অংশীদারদের খুঁজে বের করা,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে প্রধানমন্ত্রী আইওএমের সহায়তা চেয়েছেন। কারণ, সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা এবং কর্মসংস্থান ও সব সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত আবাসন ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে।  ভাসানচরে এ পর্যন্ত ৩০-৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এর আগে আইওএম মহাপরিচালক কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেন।  এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাঁদের নিরাপদ অবস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করেছে।

রোহিঙ্গারা বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত এবং তাঁরা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে লিপ্ত রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রোহিঙ্গারা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় স্থানীয় লোকজন এখন তাঁদের এলাকায় সংখ্যালঘু হয়ে গেছে।”

অ্যামি পোপ স্বাগতিক দেশের চাহিদা অনুযায়ী তাঁদের দক্ষতা বাড়াতে ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর অভিবাসীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপর জোর দেন বলে জানিয়েছেন নজরুল।

ভয়ংকর সমুদ্রযাত্রায় রোহিঙ্গারা

মঙ্গলবার ঢাকার একটি হোটেলে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ওয়ার্ল্ড মাইগ্রেশন রিপোর্ট ২০২৪ প্রকাশ করে।

ওই প্রতিবেদনে মিয়ানমারকে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শরণার্থীর উৎপত্তিস্থল হিসেবে চিহ্নিত করে বলা হয়, ২০১৭ সালের শেষ দিকে সেখানে থেকে পালিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল।  কিন্তু ওই নাগরিকরা সুরক্ষার সন্ধানে এবং ক্যাম্পের অবনতিশীল অবস্থা থেকে বাঁচতে ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রার পথে পা বাড়িয়েছে।

আনুমানিক সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা ২০২২ সালে বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগর পথে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা করেছিল, যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালে সংখ্যা ছিল এক হাজারেরও কম।

সমুদ্র পথের এই যাত্রার মধ্যে কয়েকটি মারাত্মক ছিল উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে একটি ঘটনায় প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা নিয়ে একটি নৌকা ডুবে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ওই বছর সমুদ্র পথের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় ৩৫০ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে বলা হয়, ২০১৪ সালের পর ওইটিই ছিল সবচেয়ে মারাত্মক বছর।  নৌকায় বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশু ছিল বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বৃহত্তম জনসংখ্যা কুতুপালংয়ে কর্মসংস্থানের অভাব এবং কর্মসংস্থানে যুক্ত হওয়ার সুযোগ না থাকায় অভাবগ্রস্ত হয়ে দেশত্যাগে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

জাতিগত নিপীড়নের মুখে ২০১৭ সালে রেকর্ড সংখ্যক—সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে কিছু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান।

“তবে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, অনেক রোহিঙ্গা বর্তমান পরিস্থিতিতে রাখাইন রাজ্যে ফিরে যেতে চান না; কারণ তাঁরা অনিরাপদ এবং অসম্মানজনক বলে মনে করে,” উল্লেখ করা হয় আইওএমর প্রতিবেদনে।

এতে আরও বলা হয়, জাতিসংঘ এবং কিছু বেসরকারি সংস্থাও ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জানিয়েছে যে, রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুপযুক্ত।

রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাজ্যের ১৫ মিলিয়ন ডলার

দুই দিনের সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক মন্ত্রী অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ান।

তাঁর সফরের সময় তিনি দুদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করতে যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবেন বলে জানানো হয়েছে ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে।

ট্রেভেলিয়ান বলেন, “আমাদের নতুন বাণিজ্যনীতি প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরে আমি আনন্দিত।  যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা, আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপই ইঙ্গিত করে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশের সমর্থনে অটল আছি এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্বাগতিক সম্প্রদায়ের জন্য বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্যসেবা, আশ্রয় ও সুরক্ষা পরিষেবার প্রাপ্যতা বাড়াতে নতুন করে ১২ মিলিয়ন পাউন্ড (১৫ মিলিয়ন ডলার) মানবিক সহায়তা দেবো।”

এদিকে নতুন আর্থিক সহযোগিতা ও প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান সম্পর্কে রোহিঙ্গা ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা খিন মং বেনারকে বলেন, “যুক্তরাজ্যের নতুন তহবিল ঘোষণা এবং আমাদের জন্য অনুদান চেয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা আমাদের আনন্দিত করেছে।

“তবে এতো কিছুর পরও বলতে হয় যে, আমরা এখানে ভালো নেই।  বিশ্ববাসী যেন আমাদের ভুলে না যায়,” যোগ করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।