সাত আসামি শনাক্তের কথা শুনেও সন্তুষ্ট নয় অভিজিতের পরিবার

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.04.01
160401-BD-roy-follow-620.jpg অভিজিৎ রায় ও রাফিদা আহমেদ বন্যা।
অভিজিৎ রায় হত্যা

বিজ্ঞান লেখক ড. অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরও সাতজনকে শনাক্ত করার কথা জানানো হলেও তাতে সন্তুষ্ট নয় নিহতের পরিবার। অভিজিতের বাবা প্রবীণ অধ্যাপক অজয় রায় ও স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা এসব খবরে হতাশ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

হত্যাকাণ্ডের এক বছর পরেও ‘খুনি শনাক্ত’, ‘শিগগির গ্রেপ্তার’, ‘তদন্ত চলছে’—এমন সব দাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে মামলাটি। ফলে ন্যায় বিচার পাওয়ার বিষয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে তাঁর পরিবার।

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৌশলী ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় গত বছর ​বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশ নিতে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে দেশে এসেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্রের উল্টো পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল ফটকের কাছে তাদের ওপর হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত।

ধারালো অস্ত্রের কোপে অভিজিৎ রায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন। গুরুতর আহত হন বন্যা৷ পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান।

বিজ্ঞান মনস্ক লেখালেখির কারণে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হুমকির মুখে থাকা অভিজিৎ হত্যার দায় স্বীকার করে ‘আনসার বাংলা টিম ৭’ নামের একটি ‘জঙ্গি সংগঠন’।

এখন পর্যন্ত এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আটজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। এদের মধ্যে ইন্টারনেটে উগ্রবাদের প্রচারক ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবী এবং মান্নান ইয়াহিয়া ওরফে মান্নান রাহী, যিনি সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস খুনেরও আসামি উল্লেখযোগ্য।

আরও সাতজন শনাক্তের দাবি

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরও সাতজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এদের কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানান তিনি।

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি দুইজন অংশ নেয়—এমন তথ্য দিয়ে ওই কর্মকর্তা জানান, “তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (যা বর্তমানে আনসার আল ইসলাম নামে পরিচিত) সাবেক সদস্য বলে আমাদের তদন্তে উঠে এসেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।”

অভিজিৎ হত্যার তদন্ত মামলার অগ্রগতি তুলে ধরে মনিরুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে এ মামলায় গ্রেপ্তার আটজনের ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে পরীক্ষার জন্য সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হবে।

“উচ্চ আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে হত্যার বিভিন্ন আলামত পরীক্ষার জন্য এফবিআইয়ের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এই দুই পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর তা মিলিয়ে দেখা হবে, কোন দুইজন প্রত্যক্ষভাবে হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল,” জানান মনিরুল।

এ ছাড়া নতুন শনাক্ত সাতজনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের ডিএনএ পরীক্ষার করেও দেখা হবে বলেও জানান তিনি।

‘আশা রাখতে পারছি না’

এদিকে আসামি গ্রেপ্তার, শনাক্তসহ মামলার যেকোনো ধরনের তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে অভিজিতের পরিবারের সঙ্গে পুলিশ কোনো সমন্বয় করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

গণমাধ্যমে সাতজন শনাক্তের খবর পেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বন্যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, “এতদিন পর্যন্ত যাদের ধরা হয়েছে তাদের মধ্যে সিসিটিভিতে শনাক্তকৃত কেউ ছিল না। কিছুদিন আগেও ঘটা করে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করেছিল পুলিশ।”

“আক্রমণের পর যে চারদিন স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলাম তখন এফবিআইএর একজন কনসাল্টটেন্ট আমাকে বেশ কয়েকজনের ভিডিও দেখিয়েছিল। বলেছিল ক্যামেরায় স্পষ্ট দেখা গেছে যে এই দলটি নাকি আমাদের কয়েকদিন ধরেই অনুসরণ করছিল। তাদের কাউকেই মনে হয় এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি,” লিখেছেন বন্যা।

পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি জানিয়ে বন্যা লিখেছেন, “যেহেতু বাংলাদেশের প্রশাসনের কেউ কোনোদিন আমার সাথে যোগাযোগ করেনি তাই এখানেই জানতে চাচ্ছি, কেউ কি জানেন এই নতুন করে শনাক্তকৃত ৭ জনের মধ্যে সিসিটিভিতে শনাক্তকৃত কেউ আছে কিনা?”

অভিজিতের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অজয় রায়ও ভীষণ ক্ষুব্ধ।

“আমার সঙ্গে কোনো পুলিশে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি। গণমাধ্যমে মারফতই খবর পাই আমরা,” বেনারকে জানান অজয় রায়।

তিনি বলেন, এর আগে তারা তিনজনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছিল। পুলিশ বলেছিল, তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সময়মতো গ্রেপ্তার করা হবে। বৃহস্পতিবার আবারও জানতে পারলাম, আরও সাতজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের কাউকে আবার গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।

হতাশ গলায় প্রবীণ এই অধ্যাপক বলেন, “পুলিশের এমন বক্তব্য শুনে শুনে আমরা এখন ক্লান্ত। আসল অপরাধীদের গ্রেপ্তারের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছি। তবু আমিই পুলিশের কাছে যাব। মামলাটি তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইব।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।