এক বছরের জামিন পেলেন সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদ

জেসমিন পাপড়ি
2020.09.23
ঢাকা
এক বছরের জামিন পেলেন সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদ সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদকে পুলিশ হাতিরঝিল থানায় নিয়ে যায়। ডিসেম্বর ১৮, ২০১৯। ছবি: বেনার নিউজ
ছবি: বেনার নিউজ

জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র বলে পরিচিত দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদকে এক বছরের অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছে হাই কোর্ট। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে কারাগারে ছিলেন ৮০ বছর বয়স্ক এই সম্পাদক।

আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বেনারকে বলেন, “সংগ্রাম সম্পাদককে আদালত এক বছরের অন্তর্বর্তীকালিন জামিন দিয়েছেন। পাশাপাশি কেন তাঁকে স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না-এই মর্মে সরকারকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।”

শিশির মনির জানান, গত ১১ মে ভার্চুয়াল হাই কোর্ট চালু হলে সেদিনই আবুল আসাদের জামিন চাওয়া হয়েছিল। পরে ১৩ মে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ জামিন আবেদনটি উচ্চ আদালতের নিয়মিত বেঞ্চে উপস্থাপন করতে বলেন।

“সেই জামিন আবেদনটি উপস্থাপন করা হলে আদালত বুধবার আবু আসাদের জামিন মঞ্জুর করেছেন,” বলেন ওই আইনজীবী।

বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার রুলসহ এই আদেশ দেয়।

আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহবুব হোসেন ও মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল গিয়াস উদ্দিন আহমেদ।

মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ‘মিরপুরের কসাই’ খ্যাত কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। সেই দিনের স্মরণে দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার ৬ষ্ঠ শাহাদাত বার্ষিকী আজ’।

এ ধরনের খবর প্রকাশের প্রতিবাদে গত বছর ১৩ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ সমাবেশ করে সংগ্রাম পত্রিকার কয়েকটি কপি পোড়ান ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। ওই দিন বিকালে দৈনিক সংগ্রামের কার্যালয় ঘেরাও ও ভাংচুর করা হয়। পত্রিকাটির ‘ডিক্লারেশন’ বাতিলের দাবি জানায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন।

পত্রিকা কার্যালয়ে একদিকে হামলার ঘটনা ঘটনা, আরেকদিকে সম্পাদক আবুল আসাদকে রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঢাকার একটি ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আফজাল দণ্ডবিধির রাষ্ট্রদ্রোহের ধারা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন।

সম্পাদক ছাড়াও মামলায় পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী এবং বার্তা সম্পাদক সাদাত হোসেনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয় এজাহারে।

আন্তর্জাতিক আদালতের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যরিস্টার তুরিন আফরোজ বেনারকে বলেন, “নিশ্চয়ই উচ্চ আদালত সব কিছু বিবেচনা করেই সংগ্রাম সম্পাদককে জামিন দিয়েছেন। তবে আমি মনে করি, এমন মানুষ জামিন পাওয়ার ফলে যুদ্ধাপরাধের বিচারিক প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।”

তুরিন আফরোজের মতে, “এটা আদালত অবমাননারও বিষয়। কারণ, যাকে সংগ্রাম সম্পাদক ‘শহীদ’ বলেছেন সেই কাদের মোল্লাকে বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই ফাঁসি দেওয়া হয়।”

তিনি বলেন, “সাংবাদিক হিসেবে তাঁর কাছ থেকে ন্যায়নিষ্ঠ খবর বা তথ্য আশা করি। কিন্তু তিনি ও তাঁর পত্রিকা শুরু থেকেই যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে গেছেন।”

“তবে জামিন পাওয়ার অর্থ বিচার থেমে যাওয়া নয়। আশা করি তিনি যে মিথ্যাচার চালিয়েছেন, তার ন্যায় বিচার আদালতে পাওয়া যাবে,” বলেন সাবেক এই প্রসিকিউটর।

উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন ৩২টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর ২০১০ সালের ২৫ মার্চ যাত্রা শুরু হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের।

ট্রাইবুনাল গঠনের পর এ পর্যন্ত বিচারিক প্রক্রিয়ায় ছয়জন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, দুজন জেলখানায় মারা গেছেন, একজন আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।