কক্ষপথে পৌঁছে গেলো বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১’

বেনারনিউজ স্টাফ
2018.05.11
ওয়াশিংটন ডিসি
উৎক্ষেপণের আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১। উৎক্ষেপণের আগ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১। ১১ মে ২০১৮।
বেনারনিউজ

বহু প্রতীক্ষার পর অবশেষে মহাশূন্যে নিজের কক্ষপথে পৌঁছে গেলো বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু ১। এর মাধ্যমে নিজস্ব স্যাটেলাইটের অধিকারী বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ ঘটল বাংলাদেশের।

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্থানীয় সময় বিকেল চারটা ৪.১৪ মিনিটে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। উৎক্ষেপণের দায়িত্বে ছিল মার্কিন প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স।

উৎক্ষেপণের ৩৮ মিনিট পর বিকেল ৪.৫২ মিনিটে উপগ্রহটি নিজের কক্ষপথে পৌঁছায় বলে জানায় স্পেসএক্স।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর এক তাৎক্ষণিক ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে আজ আমরা মহাকাশে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করছি।”

“আজ থেকে আমরাও স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য হলাম,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।

উৎক্ষেপণস্থলে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকসহ বাংলাদেশ সরকারের এক প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু ১ উৎক্ষেপণের প্রথম সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর। এরপর কয়েকবার তারিখ পরিবর্তিত হয়।

সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় উপগ্রহটি উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নেবার পর উৎক্ষেপণ ক্ষেত্রের কারিগরি জটিলতার কারণে শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয়।

উৎক্ষেপিত স্যাটেলাইটি কক্ষপথে গিয়ে কার্যকর হয়েছে কিনা বুঝতে কয়েক সপ্তাহ লাগবে বলে বেনারকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম।

প্রসঙ্গত, এর আগে বাংলাদেশের প্রথম নিজস্ব ক্ষুদ্রাকৃতির কৃত্রিম উপগ্রহ বা ন্যানো স্যাটেলাইট তৈরি করেছে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ নামে এক কেজি ওজনের এই উপগ্রহটি গত বছরের ৪ জুন কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়।

উৎক্ষেপণের আগ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু-১। ১১ মে ২০১৮।
উৎক্ষেপণের আগ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু-১। ১১ মে ২০১৮।
বেনারনিউজ
অন্য দেশের ওপর নির্ভরতা কমবে

বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট কার্যক্রম শুরু করলে টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অন্য দেশের ওপর নির্ভরতা কমবে বলে বেনারকে জানান বিসিএসবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “এই স্যাটেলাইট স্থাপনের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। এর ফলে স্যাটেলাইট প্রযুক্তিগত সেবায় অন্য দেশের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা কমবে।”

স্যাটেলাইটটি কার্যকর হওয়ার পর টেলিভিশনের সম্প্রচার এবং ইন্টারনেট সুবিধাসহ ৪০টি সেবা দিতে পারবে বলে দাবি করেন সাইফুল। এছাড়া স্যাটেলাইটটির ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২০টি দেশে ব্যবহারের জন্য এবং ২০টি ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানান তিনি।

“সমগ্র বাংলাদেশের স্থল ও জলসীমায় নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচারের নিশ্চয়তা থাকবে। বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। এরপর এই টাকা আর ব্যয় হবে না,” বলেছেন সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগে টেরেস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা বহাল রাখবে, দেশের দুর্গম দ্বীপ, নদী ও হাওর এবং পাহাড়ি অঞ্চলে স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা চালুও সম্ভব হবে।”

মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের অবস্থান হবে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। এই কক্ষপথ থেকে বাংলাদেশ ছাড়াও সার্কভুক্ত সব দেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমিনিস্তান ও কাজাখস্তানের কিছু অংশ এ স্যাটেলাইটের আওতায় আসবে বলে জানান সাইফুল।

দেশের প্রথম এ স্যাটেলাইটটি তৈরিতে খরচ ধরা হয় ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার ও বাকি ১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়েছে।

ফ্রান্সের থেলেস এলেনিয়া স্পেস নামক একটি স্যাটেলাইট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি নির্মাণ করেছে। এটি মহাকাশে পৌঁছে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেসএক্সের ‘ফ্যালকন নাইন’ রকেটের একটি নতুন সংস্করণ।

২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুযায়ী, স্যাটেলাইটের কাঠামো, উৎক্ষেপণ-ব্যবস্থা, ভূমি ও মহাকাশের নিয়ন্ত্রণ-ব্যবস্থা, ভূ-স্তরে দুটি স্টেশন পরিচালনা সহায়তা ও ঋণের ব্যবস্থা করবে ফ্রান্সের নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।

ভূমি থেকে উপগ্রহটি নিয়ন্ত্রণের জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) নিজস্ব জমিতে দুটি ‘গ্রাউন্ড স্টেশন’ নির্মাণ করা হয়েছে।

বাহক রকেট থেকে নিজ কক্ষপথে অবমুক্ত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু-১। ১১ মে ২০১৮।
বাহক রকেট থেকে নিজ কক্ষপথে অবমুক্ত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু-১। ১১ মে ২০১৮।
বেনারনিউজ

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।