বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আরো এক ধাপ

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.11.24
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নমুনা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নমুনা, যেটি আগামী বছর মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে। ফাইল ছবি।
নিউজরুম ফটো

বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট–১’ নির্মাণের কাজ প্রায় ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের ১৬ ডিসেম্বর এটি মহাকাশে উৎ​ক্ষেপণ করা হবে। তবে স্যাটেলাইটটির পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হবে ২০১৮ সালের এপ্রিল-মে মাস নাগাদ।

“এটা আমাদের স্বাভাবিক পরিকল্পনা। তবে আমাদের চেষ্টা স্যাটেলাইটটির নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ করা,” বেনারকে জানান বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ।

তাঁর মতে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে বড় ধরনের অগ্রগতি এনে দেবে এই স্যাটেলাইট। দৃষ্টান্ত হিসেবে তিনি বলেন, “দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমরা টেলিফোন সংযোগ নিতে পারি না। এই স্যাটলাইটের মাধ্যমে সারাদেশে টেলিফোন সংযোগ নেওয়া যাবে, যা তথ্যপ্রযুক্তির সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করার পথ সুগম করবে।”

সরকার বলছে, দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা দিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এ কৃত্রিম উপগ্রহ, যেটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণ করা হয়েছে। এটি চালু হলে বিদেশি স্যাটেলাইট ছাড়াই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কম মূল্যে সম্প্রচার ও যোগাযোগ সেবা দেওয়া যাবে।

দেশের টেলিভিশন চ্যানেল ও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন কাজে বিদেশি স্যাটেলাইট ব্যবহার করে থাকে। এ জন্য বছরে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার ব্যয় হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হলে এই বিপুল পরিমাণ অর্থের সাশ্রয় হবে বলে মনে করছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।

এর পাশাপাশি টেলিমেডিসিন, ই-গবেষণা, ই-লার্নিং, ভিডিও কনফারেন্সিংসহ তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটবে। স্যাটেলাইটটির বাড়তি ফ্রিকোয়েন্সি ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাও উপার্জন করা যাবে।

বিটিআরসি সূত্র জানায়, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ নির্মাণের জন্য ফ্রান্সের থ্যালেস এলেনিয়া স্পেসের সঙ্গে ২০১৫ সালের নভেম্বরে একটি চুক্তি সই করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। প্রতিষ্ঠানটিকে এ জন্য বাংলাদেশ সরকার বা দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বিটিআরসি ১ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা পরিশোধ করবে। ইতোমধ্যে ৬৯৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

এদিকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপনের জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনার আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছে। মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমায় ২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ২১৯ কোটি টাকায় কেনা হয়েছে এ স্লট। এখানেই উড়বে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১।

“কাজের অগ্রগতি খুবই সন্তোষজনক। স্যাটেলাইট সিস্টেম রিকোয়ারমেন্ট রিভিউ (এসআরআর) এবং প্রিলিমিনারি ডিজাইন রিভিউ (পিডিআর) সম্পন্ন হয়েছে। স্যাটেলাইটের প্রকৌশলগত কাজ ৮৩ শতাংশ, অ্যান্টেনা তৈরির কাজ ৫৬ শতাংশ এবং কমিউনিকেশন ও সার্ভিস মডিউল তৈরির কাজ ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে,” বেনারকে জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

আগামী বছরের নভেম্বরে এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্পেসএক্স ও ফ্যালকন ৯ উৎক্ষেপণযান ব্যবহার করে ফ্লোরিডার লঞ্চ প্যাড থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এ উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হবে। ২০১৮ সালের এপ্রিল নাগাদ এ স্যাটেলাইটটি বাণিজ্যিক অপারেশন শুরু করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের প্রকল্প পরিচালক গোলাম রাজ্জাক সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

তিনি জানান, উৎক্ষেপণের পর ‘ট্রান্সপন্ডার লিজের’ মাধ্যমে বছরে ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে এবং ছয় থেকে সাত বছরের মধ্যে বিনিয়োগের অর্থ তুলে নেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছে সরকার।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।