ব্রিটেনে ফিরে আইনি লড়াই চালাতে পারবে শামীমা
2020.07.16
ঢাকা
সিরিয়ার শরণার্থীশিবিরে আটকা পড়া ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গি শামীমা বেগমের বিষয়ে ব্রিটেনের আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন তার বাবা আহমেদ আলী। বৃহস্পতিবার আদালতের ওই রায়ে বলা হয়, ব্রিটেনে ফিরে নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে শামীমা।
“আমার মেয়ের কৃতকর্মের জন্য বিচারে কোনও আপত্তি নেই। তবে নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করার অধিকার তার রয়েছে। তাই আমি ব্রিটেনের আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানাই,” বেনারকে বলেন আহমেদ আলী।
২০১৫ সালে লন্ডনের স্কুল থেকে পালিয়ে ১৫ বছর বয়সে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় পাড়ি জমায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত শামীমা। আইএসের পতনের পর থেকে আইএস যোদ্ধা স্বামী ও তিন সন্তান হারিয়ে সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে ওই নারী।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিটিশ সরকার তার নাগরিকত্ব বাতিল করে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের একটি আদালত জানিয়েছে, সিরিয়া থেকে যুক্তরাজ্যে গিয়ে নাগরিকত্ব বাতিলের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে শামীমা।
আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে তার বাংলাদেশে ফেরা নিয়ে যে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছিল আপাতত তা বন্ধ হলো।
শামীমার বাবা জানান, তিনি গত দুবছর ধরে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায় বসবাস করছেন।
আহমেদ আলী বলেন, “আমি গত দুবছর বাংলাদেশে থাকছি। এখন লন্ডন যেতে চাই। লন্ডনের টিকেট পাচ্ছি না। টিকেট পেলে কালই চলে যাব।”
আহমেদ আলী বলেন, “আমি ১৯৭৫ সালে লন্ডনে যাই। পারিবারিক কারণে আমি ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করলেও অধিকাংশ সময় বাংলাদেশে বসবাস করি। লন্ডনেও থাকি। আমার স্ত্রীও ব্রিটিশ নাগরিক।”
“আমার মেয়ে বড় ভুল করে ফেলেছে। এই ভুল শোধরানো কঠিন । আমি আশা করি আমার মেয়ে ন্যায়বিচার পাবে।”
বিবিসি বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে যুক্তরাজ্য সরকার।
কে এই শামীমা?
২০১৫ সালে যুক্তরাজ্য থেকে তুরস্ক সীমান্ত হয়ে আইএসের রাজধানী সিরিয়ার রাক্কায় হাজির হয় শামীমা। সেখানে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত এক ওলন্দাজ নাগরিককে বিয়ে করে। তার স্বামীও আইএস যোদ্ধা ছিল এবং সেও মারা যায়।
আইএসের পতনের পর যুক্তরাজ্যের নাগরিক শামীমা বেগমকে গর্ভবতী অবস্থায় সিরিয়ার একটি শিবিরে খুঁজে পায় একজন ব্রিটিশ সাংবাদিক। ওই সাংবাদিকের সাথে আলাপকালে ব্রিটেনে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন শামীমা। তবে তিনি তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত নয় বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।
সিরিয়ার ওই শিবিরে জন্ম হওয়া তৃতীয় সন্তানটি মারা যায়। এর আগে জন্ম হওয়া তার দুটি সন্তানও মারা যায়।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সাবেক ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের ঘোষণা দেন। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিল কমিশন যুক্তরাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তকে বৈধ বলে ঘোষণা দেয়। আপিল কমিশন জানায়, শামীমা বাংলাদেশি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতির মাধ্যমে শামীমার বাংলাদেশি নাগরিকত্বের বিষয়ে বিরোধিতা করে জানায়, নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী তার বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার বা বাংলাদেশ ফেরার সুযোগ নেই।
শামীমার নাগরিকত্বের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “সে কখনও বাংলাদেশের নাগরিক ছিল না। সে এবং তার মা ব্রিটিশ নাগরিক। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।”
মন্ত্রী বলেন, “তবে এ কথা বলতে পারি, শামীমাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনও শামীমাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন।
তবে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বেনারকে বলেন, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী আবেদন করলে শামীমা বাংলাদেশি নাগরিকত্ব পাবেন। কারণ শামীমার বাবা বাংলাদেশি নাগরিক। কোন বাংলাদেশি নাগরিক যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে তার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব বাদ হয়ে যায় না।
শফিক আহমেদ বলেন, “ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী কোনো নাগরিককে রাষ্ট্রহীন করা যাবে না। কৃতকর্মের জন্য শামীমার বিচার হতে পারে। কিন্তু তার নাগরিকত্ব বাতিল করে অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে বলা অগ্রহণযোগ্য।”
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ বেনারকে বলেন, “যুক্তরাজ্যের আদালত যে রায় দিয়েছে, সেটি গ্রহণযোগ্য। ব্রিটিশ সরকার শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল করে তাকে বাংলাদেশি নাগরিক বানাতে চেষ্টা করেছিল। আদালতের রায়ের কারণে সেটি আর হলো না।”
তিনি বলেন, “জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য বৈশ্বিক সহায়তা প্রয়োজন। সেই কাজ না করে এক দেশ যদি আরেক দেশের ওপর দোষ বা দায় চাপাতে চায় তাহলে প্রকৃত সমস্যার সমাধান হবে না।”